নিজস্ব সংবাদদাতা: কোচবিহারের শীতলকুচির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে যুদ্ধ। একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শীতলকুচির ১২৬ নম্বর বুথে সিাইএসএফ-এর গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল ৪ জনের। তৃণমূলের দাবি, সেই চার জন তাদের দলের সমর্থক। যদিও নিহতদের মৃতদের পরিবার জানাচ্ছে তাঁরা কোনও দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই হস্তক্ষেপ করেছে নির্বাচন কমিশন।

অন্যদিকে শীতলকুচিরই পাঠানটুলিতে দুষ্কৃতীদের গুলিতে মৃত্যু হয় এক ভোটারের। তিনি এই বছর প্রথম ভোটার ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। এটি শীতলকুচিরই ২৮৫ নম্বর বুথের ঘটনা। এই ঘটনায় ডিআইজি জলপাইগুড়ি আন্নাপ্পা জানাচ্ছেন, সকাল সাড়ে নটা পৌনে দশটা নাগাদ সেক্টর মোবাইল অফিসার রামা বর্মন জানতে পারেন, খাজি বাজার সংলগ্ন এলাকায় ২০০-৩০০ মানুষ জড়ো হয়েছেন এবং তাঁরা কিছু ভোটারকে কোনও কারণে বাধা দিচ্ছেন। তাঁরা দেখেন মহম্মদ মিনাল হক নামে ১৪-১৫ বছরের একটি ছেলে অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে।

এমতাবস্থায় সেখানকার সেক্টর অফিসার ওই অসুস্থ ছেলেটির কাছে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। তার মধ্যেই সিআইএসএফ-এর নেতৃত্বাধীন কিউআরটি ভ্যান ওই ছেলেটিকে মাথাভাঙা হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং সূত্রের খবর, বর্তমানে সে ভালই আছে। অন্যদিকে গুজব ছড়ায় যে, সিআইএসএফ-এর গুলিতে মৃত্যু হয়েছে ওই ছেলেটির। এরপরেই ৪০০-৫০০ গ্রামবাসী লাঠিসোটা ও অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে এলাকা ঘিরে ফেলেন এবং পুলিশ ও ভোট কর্মীদের হেনস্থা করতে শুরু করেন। সিআইএসএফ ভিড় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে, কিন্তু ব্যর্থ হয়। এরপরেই তারা গুলি চালায় এবং তাতে ৪ জনের মৃত্যু হয়।

এই বিষয়ে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা আলিজার রহমান জানাচ্ছেন, এলাকায় ৮০ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট। তাঁদের অনেকেই বিজেপির ভোটার নন। শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট চলছিল। সেই সময় বিজেপির কয়েকজন ৫০-৬০ জন ভোটারকে নিয়ে বুথের দিকে যাচ্ছিলেন এবং সিআইএসএফ তাঁদের এসকর্ট করে নিয়ে যাচ্ছিল। রাস্তায় ১৪ বছরের একটি ছেলেকে মারধর করে সিআইএসএফ। ছেলেটির ভাই ঘটনাটি ফোনে রেকর্ড করা শুরু করে। যার জেরে তাঁকেও মারধর করা হয়। এরপরেই গুলি চালায় সিআইএসএফ। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ৪ জনের এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। দুজন সিআইএসএফ জওয়ান গুলি চালায়। তাঁদের বাইরে থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত জওয়ানরা গুলি চালাননি। ৪ জনকে গুলি করার পর তাঁরা গাড়িতে উঠে চলে যান।

তবে এখানেই শেষ নয়। কোচবিহারের শীতলকুচির পাঠানটুলিতে ২৮৫ নম্বর বুথের বাইরে দুর্বৃত্তদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছে আনন্দ বর্মন নামে আরও একজনের। তিনিও এবার প্রথম ভোটার ছিলেন বলেই জানা গিয়েছে। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদিকে, কোচবিহার উত্তরের পাতলাখাওয়া থেকে উদ্ধার হয়েছে আরও একটি দেহ। অমল দেব নামে ওই ব্যক্তি বিজেপির কর্মী ছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। ঘটনায় তৃণমূলের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে বিজেপি।