
শীত পড়েছে বেশ। ঘন কুয়াশার চাদরে মোড়া সুয্যি মামা বেলা এগারোটার পর টুকি টুকি খেলছেন। সারাদিনে কাজগুলো সারতে সারতেই ঠাণ্ডার কামড় হাতে ও পায়ে। পায়ে পাতাগুলো যেন বরফ। আর লেপ কম্বলের তলায় নিজেকে সেঁধিয়ে দিয়ে একটু উষ্ণতার খোঁজ সকলেরই।
দুটো হাতের তালু ঘষতে ঘষতে কম্বলের তলায় বসেও শান্তি নেই। মন যেন কিছু চাইছে গরম কফি ও কিছু গরম গরম স্ন্যাকস…
তবে আর দেরি কেন, চলুন এই শীতের কনকনে অনুভূতিকে আর একটু রোমাঞ্চ দিতে, আপনার উষ্ণতাকে আর একটু উষ্ণ করে তুলতে, একঘেয়ে টিফিনের একঘেয়েমি দূর করতে আমরা হাত বাড়িয়ে দিলাম আপনাদের দিকে… কেবল কষ্ট করে কম্বলের তলা থেকে বের হয়ে একটু বানিয়ে ফেলতে হবে আমাদের এই রেসিপিগুলিকে। আর তারপরে ব্ল্যাঙ্কেটের তলায় বসে একটা মুভি দেখতে দেখতে করুন না তার রসাস্বাদন…
১. মোজারেলা স্টিক:-
একটি ইতালীর হালকা ও জনপ্রিয় খাবার।খুব সহজে আপনি বাড়িতে সামান্য কয়েকটি উপকরণ দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন চট জলদি।
উপকরণ:
মোজারেলা চিজ: ৩০০ গ্রাম,
ময়দা: ১/২ কাপ,
ব্যাসন: ১/২ কাপ,
গোলমরিচের গুঁড়ো: সামান্য,
তেল: এক কাপ
লবন: স্বাদ অনুযায়ী
চিনি: স্বাদ অনুযায়ী
হলুদ: সামান্য
বিস্কুটের গুঁড়ো: ১/২ কাপ।
প্রস্তুত প্রণালি:
মোজারেলা চিজ লম্বা ও সরু করে কেটে নিন। এরপর একটি বাটিতে বাটিতে ময়দা, ব্যাসন, গোলমরিচের গুঁড়ো, লবন, হলুদ ও চিনি একসঙ্গে মিশিয়ে নিন।
এর মধ্যে জল দিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন।
এখন চিজগুলো ময়দার মিশ্রণে ডুবিয়ে বিস্কুটের গুঁড়া লাগিয়ে দুই থেকে তিন ঘণ্টা ফ্রিজে রেখে দিন।
তেল গরম করুন আর ডুবো তেলে চিজ স্টিকগুলো ভাজতে থাকুন। বাদামি হয়ে গেলে তেল থেকে তুলে সসের সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন।

২. গন্ধরাজ চিকেন ফ্রাই:-
একঘেয়ে চিকেনে আমার বড্ড আপত্তি। তাই চিকেন দিয়ে নিত্য নতুন রেসিপি তো রোজকার রুটিন। শীতের কনকনে সন্ধ্যেই গন্ধরাজের গন্ধে ভরপুর চিকেন… উমমম… লা জবাব…
উপকরণ:-
বোনলেস চিকেন: ৫০০ গ্রাম
আদা রসুন বাটা: ২ টেবিল চামচ
কাঁচা লংকা বাটা: ১ টেবিল চামচ
গন্ধরাজ লেবুর রস: ২ টেবিল চামচ
গন্ধরাজ লেবুর খোসা: ১ চা চামচ
গোলমরিচ গুঁড়ো: ১ টেবিল চামচ
লবন: স্বাদ অনুযায়ী
ময়দা: ১/২ কাপ
কর্ণফ্লাওয়ার: ১/৪ কাপ
ডিম: ২টি
তেল: ভাজার জন্যে
প্রস্তুত প্রণালি:-
প্রথমে চিকেন সাইজ পিস করে নিন। তারপর পরিষ্কার করে জল ঝরিয়ে আদা-রসুন বাটা, কাঁচালঙ্কা বাটা, লবন, লেবুর রস, গোলমরিচ গুঁড়ো দিয়ে ম্যারিনেট করে ফ্রিজে ২ ঘণ্টা রেখে দিন।
এবার দুটো ডিম, লবন, আদা-রসুন বাটা, কাঁচালঙ্কা বাটা, গন্ধরাজ লেবুর রস, গন্ধরাজ লেবুর খোসা, কর্ণফ্লাওয়ার, ময়দা ভালো করে ফেটিয়ে একটা ব্যাটার তৈরি করে নিন।
এবার কড়াই এ তেল গরম করে মিডিয়াম আঁচে, চিকেন গুলো ব্যাটারে ডুবিয়ে মুচমুচে করে ভেজে নিলেই তুলুন। সস দিয়ে পরিবেশন করুন। শীতের সন্ধ্যেটা জাস্ট জমে যাবে।

৩. ভেটকি মাছের কাটলেট:-
৩. ভেটকি মাছের কাটলেট:-
শীতে জমে যেতে যেতেও খেতে কার না ভালো লাগে। এবারে একটু মাছের গন্ধে মন হারাই…
উপকরণ:-
ভেটকি ফিলে: ৬পিস
বড় আলু: ১ টা
পিঁয়াজ : ২ টা
কাঁচা লঙ্কা: ৩ টে
গরম মশলার গুঁড়ো: ১ চা চামচ
গোলমরিচ গুঁড়ো: ১ চা চামচ
লবন: স্বাদ মত
হলুদ: পরিমাণ মত
কর্নফ্লাওয়ার: ২টেবিল চামচ
আদা রসুন বাটা: ১ চা চামচ করে
সাদা তেল: ৫০ গ্রাম
ডিম: ২ টি
বিস্কুটের গুঁড়ো: ২ চা চামচ
প্রস্তুত প্রণালি:-
প্রথমে কড়াইতে জল দিয়ে মাছ সেদ্ধ করে কাঁটা ছড়িয়ে নিন।
এরপর আলু সেদ্ধ করে নিন। পিঁয়াজ ও লঙ্কা কুচি করে নিয়ে, কড়াইতে তেল দিন। গরম হয়ে এলে পিঁয়াজ কুচি, কাঁচা লঙ্কা কুচি দিয়ে কিছুক্ষণ ভেজে আদা রসুন বাটা, লবন, হলুদ, গোলমরিচ গুঁড়ো, গরম মশলার গুঁড়ো দিয়ে নেড়েচেড়ে ভাজা হলে নামিয়ে নিন।
এবার একটা পাত্রে সেদ্ধ করা আলু, মাছ, কর্নফ্লাওয়ার ও ভেজে রাখা মশলা দিয়ে একসাথে ভালো করে মেখে নিয়ে কাটলেটের আঁকারে গড়ে নিতে নিন।
ডিম লবন ও এক টেবিল চামচ কর্নফ্লাওয়ার দিয়ে ফেটিয়ে নিন।
এবার ফ্রাইং প্যানে তেল দিয়ে গরম হলে গড়ে রাখা কাটলেটগুলোকে ফেটানো ডিমের মধ্যে ডুবিয়ে, বিস্কুটের গুঁড়ার মধ্যে মিশিয়ে গরম তেলে ছেড়ে দিন।
বাদামী রঙ হলেই নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

৪. প্রন বল স্পেশাল:-
চিংড়িতে মন মজে না কার? এমন শীতে যদি এমন একটু চিংড়ির আইটেম থাকে সাথে, তবে তো আর কিছু বলারই নেই…
উপকরণ:-
খোসা ছাড়ানো চিংড়ি: ১ কাপ।
পেঁয়াজ: ৫/৬টি (কুচনো)
কাঁচালঙ্কা: ৩/৪টি।
রসুন: ২ কোয়া।
গোলমরিচগুঁড়া: সামান্য।
লবণ: স্বাদ মতো।
ধনেপাতার কুচি: ১ টেবিল-চামচ।
কর্ন ফ্লাওয়ার: ২ টেবিল-চামচ।
বিস্কুটের গুঁড়া: ২ টেবিল-চামচ।
কোটিংয়ের জন্য ব্রেড: ৭,৮ টুকরা।
ডিম: ২ টি।
পদ্ধতি:-
খোসা ছাড়ানো চিংড়ি, পেঁয়াজ, কাঁচালঙ্কা, রসুন একসঙ্গে ব্লেন্ড করে নিন। ৩০ মিনিট ফ্রিজে রেখে দিন।
পাউরুটি ছোট ছোট কিউব করে কেটে রাখুন। এবার চিংড়ির মিশ্রণে লবণ, ধনেপাতার কুচি, গোলমরিচ দিয়ে মাখিয়ে নিয়ে আস্তে আস্তে কর্ণফ্লাওয়ার মিশিয়ে মিশ্রণ অল্প অল্প করে হাতে নিয়ে ছোট ছোট বল তৈরি করে, সেই বলগুলো ময়দায় মাখিয়ে নিন। একটা পাত্রে ডিম ফেটিয়ে ময়দায় মাখানো বলগুলো প্রথমে ডিমে চুবিয়ে তারপরে ব্রেড কিউব এ ঘুরিয়ে নিন।
এবার ২০ মিনিটের জন্য ফ্রিজে রাখুন। তেল গরম করে ডুবোতেলে ভেজে তুলুন মাঝারি আঁচে। সোনালি রং হলে নামিয়ে সস দিয়ে পরিবেশন করুন।
উম্ম, দারুণ।

৫. ফুচকা:-
ফুচকা, এমনই একটা শব্দ… নামটা শুনলেই জিভে জল আসে অচিরেই। হাতে গুনে কিছু মানুষ পাওয়া যাবে, যাদের ফুচকা পছন্দ নয়। ফুচকা খায়নি জীবনে, এমন একজনের নাম আমি বলতে পারি না ভেবেই, আমার বাবা। এছাড়া মনে হয় সকলেরই একটা আধটা হলেও টেস্ট করে দেখা হয়ে গিয়েছে।
উপকরণ :
★ফুচকা তৈরির জন্য :
লাল আটা: ২ কাপ
সুজি: ১/২ কাপ
কালো জিরে গুঁড়ো: সামান্য
লবণ: স্বাদমতো
ফুচকা তৈরি :
ফুচকা তৈরির সব উপকরন একসাথে মেখে রুটি তৈরির ডোয়ের মতো বানিয়ে রুটি বানিয়ে নিন। এরপর ছোট ছোট গোল করে কেটে ডুবো তেলে ভেজে ফুচকা তৈরি করে নিন। লক্ষ্য রাখতে ফুচকা যেন ফুলে উঠে ও মচমচে হয়। লুচির মত নেতিয়ে না যায়।
★গুঁড়ো মসলা তৈরির জন্য :
ধনে গুঁড়ো: ২ টেবিল চামচ
জিরে ভেজে গুঁড়ো: ২ টেবিল-চামচ
গোলমরিচ গুঁড়ো: ১ টেবিল-চামচ
সমস্ত উপকরণ একসাথে ভেজে গুঁড়ো করে নিতে হবে।
★পুর তৈরির জন্য :
সেদ্ধ আলু: ৪টি
কাঁচা ছোলা: ১/২ কাপ
কাঁচা লঙ্কা: পরিমাণ মত
লবন: পরিমাণ মত
আলু সেদ্ধ ভালো করে মেখে তার মধ্যে ভাজা মশলা, ধনেপাতা কুচি, লঙ্কা কুচি ও লবণ দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে নিন। পুর রেডি।
★টক জল তৈরির জন্য :
তেঁতুলের গোলা: ১ কাপ
চিনি: ১/২ কাপ
ধনেপাতা: কিছুটা কুচনো
কাঁচা লঙ্কা: ৩/৪ টি
শুকনো লঙ্কা ভাজা: ৩ টি
বিট লবন: ১/২ চা-চামচ
জলে তেঁতুল ভালো ভাবে নিন। স্বাদ অনুযায়ী লবন, ভাজা মশলা মিশিয়ে লঙ্কা, ধনেপাতা দিলেই জল রেডি।
এবারে একটা ফুচকা নিয়ে তাতে আলুর পুর ভরে মচমচে ফুচকা পরিবেশন করুন।

শীত আর খাওয়া একে অন্যের পরিপূরক… তাই খাওয়ার সাথে কোনো সমঝোতা চলবে না।