“ একই শরীরে শিব পার্বতীর বাস সেই অর্ধনারীস্বর”

মহাদেব শিবের আর এক রূপ অর্ধনারীস্বরের রূপ । অর্ধনারীস্বর। যাকে অনেকে অর্ধনারীশ,  অর্ধনারীনটেশ্বর, অর্ধনরনারী আরও বিভিন্ন নামে ডেকে থাকে। যে রূপে সে নারী ও পুরুষ  উভয় লিঙ্গেই বর্তমান। আমারা তো তার সেই রূপকে ভগবান জ্ঞানে পুজা করি। কিন্তু এখানেই যদি একজন মানুষ তার দেহ পুরুষরূপে  আর স্বত্বা  নারীরূপী পায় তাহলে তাকে  আমরা হিজরার তকমা সেটে দিতেই পারি। কি সমাজ তো তাই করে তাই না? আর এখানেই কিন্তু বড় প্রশ্ন তৈরি হয়  তাহলে কি মহাদেবের এই রূপকে কি বলব? তাহলে কি সেও হিজড়া? আমাদের  এই শিক্ষিত সমাজ  তাঁদের আর ৫ টা মানুষের মতো মানুষরূপে গন্য করতে আজও পারল না।  হ্যাঁ অবশ্যই সমাজে ব্যতিক্রমী মানুষ আছে যারা এই সকল মানুষকে তাঁদের অধিকারের লড়াই লড়তে প্রতিপদে সমর্থন করছে কিন্তু সেটাও তো হাতে গোনা কয়েকজন।

হিজড়ে
Pinterest

সম্প্রতি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে অক্ষয় কুমার অভিনীত ‘লক্ষ্মী’ সিনেমাটি তাঁদের উৎসর্গ করেই নির্মিত হয়েছে। একটি গানে অর্ধনারীস্বরের মূর্তিকে সামনে রেখে তাঁদের অস্তিত্বকে জাহির করেছে। সেখানে যে ভাবে প্রদর্শন করানো হয়েছে তা মানুষজন  গ্রহন করেছে কারন সেটা তো সিনেমা বাস্তব নয়। কিন্তু তারা বুঝেও বুঝতে চাইছে না বিগ স্ক্রিন একটি মাধ্যম মাত্র  সকলের কাছে একটা বার্তা পৌঁছে দেওয়ার  যে তাঁদের পায়ে ঠেলো না তাঁদের আপন কর।

bum bholle 1604499955
Tech for FTCP

অপরদিকে বাংলার বিখ্যাত চ্যানেল জি বাংলায় তাঁদের রোজকার লাঞ্ছনা, কষ্ট, বেচে থাকার লড়াইয়ের অদ্যম চেষ্টার কাহিনী ফিরকি সিরিয়ালের দ্বারা সকলের সম্মুখে আনা হয়েছে। যখন সমাজে  বদল আনার জন্য এই শিক্ষার বিস্তার হচ্ছে তাহলে আপত্তি কোথায় ? বদলাও সমাজ আজ সময় এসেছে বদলাও। আপন করে নাও ওদের দেখবে তিনগুন ভালোবাসা উজার করে দেবে তোমাদের। ঢাল হয়ে রক্ষা করবে, তারা কিন্তু স্বার্থ ছাড়াই সকলকে রক্ষা করে আর ভালোবাসা পেলে তো আর কথাই নেই। 

image
www.anandabazar.com

হিজড়েদের বেঁচে থাকার লড়াই

কিন্তু বর্তমান যুগ বড়ই কঠিন। দিন গড়ায় রাত ফুরায়,  পার হয় যুগের পর  যুগ  কিন্তু মনের ভিতর জমা সেই আদিম ভাবনার উপর দিয়ে পর্দাপ্রথা আর ওঠে না।  আমাদের সমাজ আমাদের চারপাশে এক অদৃশ্য রেখা টেনে দিয়েছে। যে রেখা পেড়লে হয়তো রাবন আসবে না কিন্তু সমজের ভ্রুকুটির রোষে পড়তে হবে।  এই  কিন্নর ,বৃহ্ননলা অর্থাৎ আপনাদের ভাষায় যাকে বলেন হিজড়া (দক্ষিণ এশিয়ায় ব্যবহৃত একটি পরিভাষা ) কোনদিন তাঁদের মনটা কেউ পড়তে চায় না। তারাও রক্ত মাংসের মানুষ , তাঁদের মান ও হুশ দুই বর্তমান।

d858a2a2737b7bdaa843989571d71755
Pinterest

ছোট থেকে বড় হয়ে ওঠা অবধি প্রতি পদে আমাদের শেখানো হয় ওদের থেকে দূরে থাক। ওরা ভালো না, ওরা পতিতা,  হিজরা, শরীর বেচে খায়, জোর করে টাকা আদায় করে। আচ্ছা আপনারা বলুন তো তাছাড়া  কোন পথ কি খোলা রেখেছি আমরা। প্রতিনিয়ত অপমান, মানষিক যন্ত্রনা, এমনকি শারীরিক যন্ত্রণা অবধি দিয়ে থাকে আমদের এই সভ্য সমাজ। আত্মহত্যার রেশ্মীয় কিন্তু ওদের মধ্যে অনেক বেশী।   তারা যদি নিজের পায়ে দাঁড়ায়  সমাজ তার স্থান কেড়ে নেন, কারন ভাবে তারা দুর্বল। না তারা দুর্বল নয় বরং তারাই মানুষ আমদের এই বর্বর সমাজকে প্রতিনিয়ত তারা ক্ষমা করে আসছে তাই তাঁদের কেউ কটুকথা বললে গায়ে মাখে না কিন্তু তাঁদের বুক ফাঁটে। কেউ কিন্তু সেই ফাটা বুকের হহাকার শুনতে পারে না কেউ।

large
Artsy

অধিকার কোথায় ?

কিন্তু আর কতদিন ?  দেওয়ালে যে পিঠ ঠেকেছে তাই ঘুরে দাড়িয়ে যে লড়াই করে নিজের অধিকার ছিনিয়ে নিতে হয় তারা শিখেছে কিন্তু হ্যাঁ সকলে যেমন ভাবে  তেমন ভাবে না সৎ পথে সৎ উপায়ে তারা অনেকেই আজ সামলম্বী।  কেউ শিক্ষিকা, কেউ উকিল, কেউ ডাক্তার, কেউ সেরা সুন্দরীর শিরোপা ধারণকারী, তো কেউ সমাজসেবামূলক  কাজেও নিযুক্ত। কারন তারাই আসল শিক্ষিত এই ভীরু সমাজের মতো ভ্রান্ত শিক্ষার মুখোশ পড়ে নেই।

আমাদের সমাজ তাঁদের বলে আরে তুই তো নারী ও না আবার পুরুষও না তোরা তো হিজড়ে। কোনদিন এগুলো বলার আগে ভেবে দেখেছেন যে একই শরীরে পুরুষ ও নারীর বাস সম্ভব। কেন আমাদের প্রিয় ঋতুপর্ন ঘোষের কথা মনে নেই সে বলেছিলেন যে কেউ শরীর পেয়েছে পুরুষের ন্যায় কিন্তু স্বত্বা তার নারীর, অনুভব নারীর সে কোনদিন ছেলে হয়ে উঠতে পারবে না।  তাই তার কথা অনুযায়ী বাহ্যিকভাবে সে পুরুষ কিন্তু অন্তরে, মননে সে পরিপুর্ন মহিলা। তাই স্বত্বা নিয়ে বাঁচো তাকে গুমরে মড়তে দিও নি। এটা ভগবানের সৃষ্টি।

আসলে জানেন কি ভগবান  সকলকে সেই অধিকার দেন নি  নিজের স্বত্বাকে চিনে নেওয়ার, কিন্তু ওদের দিয়েছে সেই অধিকার ।  তারা যে বেশে, যে স্বত্বায় বাঁচতে চাইবে তারা সেটা পারবে। তাই দেখতে গেলে কিন্তু নিজস্বভাবে বাচার অধিকার কিন্তু তাঁদের হাতেই।  তাই তাঁদের অপমান করা আমাদের ঠিক সাজে না। কারন আমাদের স্থান ঠিক যতটা ততটাই ওদের। ওরা হিজড়ে নয় ওরা মানুষ।  

2 COMMENTS