রাশির সঙ্গে যেমন ভাগ্য চক্র জড়িয়ে থাকে, তেমনই গনের সঙ্গেও মানুষের চরিত্রগত বিভিন্ন বিষয় জড়িয়ে থাকে। বিভিন্ন রাশির প্রভাবে বিভিন্ন মানুষের ব্য়ক্তিত্ব নানান ধরনের হয়। বৈদিক শাস্ত্র মতে যে ব্যক্তির গন যেমন হয়,তাঁর স্বভাবও তেমন হয়। আর এর বিচারেই দেখে নেওয়া যাক, গন কিভাবে বিচার করতে হয়, আর গন অনুযায়ী মানুষ কেমন হয়!
দেব গন
গনের বিচার সবসময়েই কোষ্ঠীর নক্ষত্র অনুযায়ী হয়। অশ্বিনী, রেবতী, হস্ত, পুষ্প, পুনর্বাসু, অনুরাধা,শ্রাবণ , স্বাতী নক্ষত্র যাঁদের রয়েছে তাঁদের দেবগন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই গনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট অনুযায়ী, এই গনের ব্যক্তিরা খুবই বুদ্ধিদীপ্ত হন, এঁদেরা চেহারাগতভাবেও সুন্দর হন। আর খুবই সহজ সরল স্বভাবের হয়ে থাকেন। এঁদের কাছে আত্ম সম্মান আর শিক্ষা খুবই গুরুত্ব পায়।
নর গন
পূর্ব ফাল্গুনি, পূর্বা অশধা, পূর্ব ভাদ্রপাদ, উত্তর অশধা, উত্তর ভাদ্রপাদ,আদ্রা, রোহিনী, ভারিনী নক্ষত্র যাঁদের কোষ্ঠীতে থাকে,তাঁরা নরগনের অধিকারী হন। এই গনের ব্যক্তিত্বরা খারাপ হলে রাক্ষসের থেকেও ভয়ঙ্কর হন, আর ভালো হলে দেবের তূল্য ভালো মানুষ হয়ে থাকেন।

রাক্ষস গন
রাক্ষস গন নির্ধারন করতে , কোষ্ঠীতে কোন নক্ষত্র রয়েছে দেখতে হবে। কৃতিকা, মাঘা, অশ্লেষা, শতভীষা, চিত্রা, জ্যেষ্ঠা, ধনিষ্ঠা, মূলা, নক্ষত্র যাঁদের কোষ্ঠীতে রয়েছে তাঁরা রাক্ষস গনের মধ্যে পড়েন। শাস্ত্র মতে এঁদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট হিসাবে , সময়ে অসময়ে এঁরা রেগে যান বলে দাবি করেন শাস্ত্রজ্ঞরা ।

zodiac আপনার রাশি


রাশি অনুসারে বর্ণ এবং নক্ষত্র অনুসারে গণ নির্ণয় করা হয়। কর্কট, বৃশ্চিক ও মীন রাশির জাতক বিপ্র-বর্ণ, সিংহ, তুলা ও ধনু রাশির জাতক ক্ষত্রিয়-বর্ণ, মেষ, মিথুন ও কুম্ভ রাশির জাতক বৈশ্য-বর্ণ এবং বৃষ, কন্যা ও মকর রাশির জাতক শূদ্র-বর্ণ লাভ করে। হসত্মা, স্বাতী, মৃগশিরা, অশ্বিনী, শ্রবণা, পুষ্যা, রেবতী, অনুরাধা ও পুনর্বসু নক্ষত্রে জন্মগ্রহণ করলে দেবগণ হয়। রোহিণী, আর্দ্রা, উত্তর-ফাল্গুনী, উত্তরাষাঢ়া, উত্তর-ভাদ্রপদ, ভরণী, পূর্ব-ফাল্গুনী, পূর্বাষাঢ়া ও পূর্ব-ভাদ্রপদ নক্ষত্রে জন্মগ্রহণ করলে নরগণ হয়। কৃত্তিকা, অশ্লেষা, মঘা, চিত্রা, বিশাখা, জ্যেষ্ঠা, মূলা, ধনিষ্ঠা শতভিষা নক্ষত্রে জন্মগ্রহণ করলে দেবারি বা রাক্ষসগণ হয়। 


অষ্টোত্তরী ও বিংশোত্তরী জন্ম-দশা
জন্ম-নক্ষত্র অনুসারে জাতককে বিভিন্ন গ্রহের দশা ভোগ করতে হয়। জ্যোতিষ-শাস্ত্রে দুই প্রকার দশা প্রচলিত, যথা- অষ্টোত্তরী ও বিংশোত্তরী দশা। জাতক কৃষ্ণপক্ষে দিনে ও শুক্লপক্ষে রাতে জন্মগ্রহণ করলে বিংশোত্তরী দশা এবং কৃষ্ণপক্ষে রাতে ও শুক্লপক্ষে দিনে জন্মগ্রহণ করলে অষ্টোত্তরী দশা প্রযোজ্য হবে। অষ্টোত্তরী নিয়মে জাতক রবি (৬ বছর), চন্দ্র (১৫ বছর), মঙ্গল (৮ বছর), বুধ (১৭ বছর), শনি (১০ বছর), বৃহস্পতি (১৯ বছর), রাহু (১২ বছর) ও শুক্র (২১ বছর) এই আটটি গ্রহের দশা নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে উক্ত ক্রমে ভোগ করবে। যেমন- কেউ রবির দশায় জন্মগ্রহণ করলে তাকে রবির দশার ভোগ্যকাল শেষে ১৫ বছর চন্দ্রের দশা ভোগ করতে হবে এবং এরপর তাকে ৮ বছর মঙ্গলের দশা ভোগ করতে হবে, এভাবে মৃত্যর পূর্ব পর্যমত্ম তাকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন গ্রহের দশা ভোগ করে যেতে হবে।

অষ্টোত্তরী মতে জন্ম-নক্ষত্র কৃত্তিকা, রোহিণী ও মৃগশিরা হলে প্রথমে রবির দশা হবে, আর্দ্রা, পুনর্বসু, পুষ্যা ও অশেস্নষা হলে প্রথমে চন্দ্রের দশা হবে, মঘা, পূর্ব-ফাল্গুনী ও উত্তর-ফাল্গুনী হলে প্রথমে মঙ্গলের দশা হবে, হসত্মা, চিত্রা, স্বাতী ও বিশাখা হলে প্রথমে বুধের দশা হবে, অনুরাধা, জ্যেষ্ঠা ও মূলা হলে প্রথমে শনির দশা হবে, পূর্বাষাঢ়া, উত্তরাষাঢ়া, শ্রবণা হলে প্রথমে বৃহস্পতির দশা হবে, ধনিষ্ঠা, শতভিষা ও পূর্ব-ভাদ্রপদ হলে প্রথমে রাহুর দশা হবে এবং উত্তর-ভাদ্রপদ, রেবতী, অশ্বিনী ও ভরণী হলে প্রথমে শুক্রের দশা হবে।

বিংশোত্তরী মতে, জাতক রবি (৬ বছর), চন্দ্র (১০ বছর), মঙ্গল (৭ বছর), রাহু (১৮ বছর), বৃহস্পতি (১৬ বছর), শনি (১৯ বছর), বুধ (১৭ বছর), কেতু (৭ বছর) ও শুক্র (২০ বছর) এই নয়টি গ্রহের দশা নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে উক্ত ক্রমে ভোগ করবে। কৃত্তিকা, উত্তর-ফাল্গুনী ও উত্তরাষাঢ়া জন্ম-নক্ষত্র হলে প্রথমে রবির দশা হবে, রোহিণী, হসত্মা ও শ্রবণা হলে প্রথমে চন্দ্রের দশা হবে, মৃগশিরা, চিত্রা ও ধনিষ্ঠা হলে প্রথমে মঙ্গলের দশা হবে, আর্দ্রা, স্বাতী ও শতভিষা হলে প্রথমে রাহুর দশা হবে, পুনর্বসু, বিশাখা ও পূর্ব-ভাদ্রপদ হলে প্রথমে বৃহস্পতির দশা হবে, পুষ্যা, অনুরাধা ও উত্তর-ভাদ্রপদ হলে প্রথমে শনির দশা হবে, অশেস্নষা, জ্যেষ্ঠা ও রেবতী হলে প্রথমে বুধের দশা হবে, মঘা, মূলা ও অশ্বিনী হলে প্রথমে কেতুর দশা হবে এবং পূর্ব-ফাল্গুনী, পূর্বাষাঢ়া ও ভরণী হলে প্রথমে শুক্রের দশা হবে।

এখন অষ্টোত্তরী মতে প্রথম দশার ভোগ্যকাল নির্ণয় প্রসঙ্গে আসা যাক। ধরা যাক, কোন জাতক রোহিণী নক্ষত্রের ৩০ দণ্ডে (১২ ঘণ্টা) জন্মগ্রহণ করেছেন। যেহেতু কৃত্তিকা, রোহিণী ও মৃগশিরা নক্ষত্রে জন্মগ্রহণ করলে জাতকের প্রথমে রবির দশা হয় সেহেতু ঐ জাতক রোহিণী নক্ষত্রে জন্মগ্রহণ করায় তাকে প্রথমে রবির দশা ভোগ করতে হবে। এখন ৩টি নক্ষত্রের জন্য রবির মোট ভোগ্য বছর ৬। তাহলে প্রতিটি নক্ষত্রকে রবি ৬/৩ = ২ বছর করে ভোগ করে। রোহিনী নক্ষত্রের স্থিতিকাল ৬০ দণ্ড (২৪ ঘণ্টা)। বর্তমান নক্ষত্র যে সময় পর্যমত্ম অবস্থান করে তা থেকে পূর্ববর্তী নক্ষত্র যে সময় পর্যন্ত অবস্থান করেছিল তা বিয়োগ করলেই নক্ষত্রে স্থিতিকাল পাওয়া যাবে। যেহেতু ৩০ দণ্ড পর জন্ম হয়েছে সেহেতু সে ৬০ – ৩০ = ৩০ দণ্ড ভোগ করবে। এখন সম্পূর্ণ নক্ষত্র ভোগের জন্য অর্থাৎ ৬০ দণ্ডের জন্য রবির ভোগ্যকাল ২ বছর হলে ৩০ দণ্ডের জন্য রবির ভোগ্যকাল হবে ১ বছর। জন্মের ১ বছর পর রবির ভোগ্যকাল শেষে চন্দ্রের দশা শুরু হবে যা ১০ বছর পর্যন্ত থাকবে।

বিংশোত্তরী মতে কোন জাতকের জন্ম রোহিনী নক্ষত্রে হলে তাকে প্রথমে চন্দ্রের দশা ভোগ করতে হবে। রোহিনী নক্ষত্রের ২৪ দ– জন্ম হলে তার নক্ষত্র ভোগ্যকাল হবে ৬০ – ২৪ = ৩৬ দণ্ড। এখন ৬০ দণ্ডের জন্য চন্দ্রের ভোগ্যকাল ১০ বছর হলে ৩৬ দণ্ডের জন্য চন্দ্রের ভোগ্যকাল হবে ৬ বছর। জন্মের ৬ বছর পর চন্দ্রের ভোগ্যকাল শেষে মঙ্গলের দশা শুরু হবে যা ৭ বছর পর্যন্ত থাকবে এবং এভাবে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত দশা ভোগ চলতে থাকবে।

ঋদ্ধিমান