সৌজন্যে Naidunia

করোনা ভ্যাকসিন বা প্রতিষেধক প্রায় এসে গেল | ডিসেম্বর মাসেই আমেরিকা ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে টিকা করণ চালু হয়ে যাবে বলে বোঝা যাচ্ছে | আমাদের দেশে আসতে আরো দু এক মাস দেরী হতে পারে | কোন ভ্যাকসিন কেমন, কতোটা কার্য্যকারিতা , কত দাম সেই সব বিষয় গুলি নিয়ে আলোচনা করব |

কটি ভ্যাকসিন তৈরী হচ্ছে

এই মুহুর্তে ৩ টি ভ্যাকসিন জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদন পেয়েছে ( চীন ও রাশিয়া তে ) ও ৩ টি ভ্যাকসিন অনুমোদন পাবার দোরগোড়ায় রয়েছে ( আমেরিকা ও ইউরোপে ) | সারা বিশ্বে  ১৩ টি ভ্যাকসিন ফেজ-৩ (Phase-3) ট্রায়াল, ১৭ টি ফেজ -২ এবং ৩৮ টি ভ্যাকসিন  ফেজ -১ ট্রায়াল এ রয়েছে | এছাড়া প্রাথমিক স্তরে রয়েছে ৮৭ টি ভ্যাকসিন | ভ্যাকসিন তৈরী হতে সাধারণত অনেক বছর সময় লাগে | কিন্তু করোনা অতিমারির জন্যে অত্যন্ত দ্রুত প্রচেষ্টায় ১ বছরেই প্রতিষেধক তৈরী করা সম্ভব হয়েছে |  ৪টি স্তরে পরীক্ষা বা ট্রায়াল করে তবে ভ্যাকসিন বাজারে ছাড়ার অনুমোদন পায়

ট্রায়াল গুলি কি 

প্রাথমিক ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল (পরীক্ষা) –

 ১) প্রাথমিক বা Preliminary স্তরে জন্তুদের ওপর পরীক্ষা চালানো হয় ভ্যাকসিনের প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে কিনা জানবার জন্যে |

২) Phase-১ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল- এতে ছোট সংখ্যার  (১০০র কম) দলের ওপর পরীক্ষা করে দেখা হয় |

৩) Phase-২ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল- এতে কয়েকশ লোকের ওপর পরীক্ষা করা হয় বিভিন্ন বয়স ভিত্তিক গ্রুপে |

৪) Phase-3 ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল- বেশ কয়েক হাজার লোকের ওপর ভ্যাকসিনের নিরাপত্তা ও প্রতিরোধ ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয় | এতে বড় দুটি গ্রুপ করা হয় | এক দল পান আসল ভ্যাকসিন আর আর এক দল পান প্লেসবো (Placebo) | প্লেসবো ভ্যাকসিনের মত দেখতে হলেও তাতে আসলে কোনো অসুধ থাকে না | এই দুটি গ্রুপের মধ্যে ভ্যাকসিনের উপকারিতার  তারতম্য  পরীক্ষা করে ভ্যাকসিনের প্রতিরোধ ক্ষমতা ও নিরাপদ প্রয়োগের ওপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় |

ভ্যাকসিন টি নিরাপদ হলে ও ৫০ % এর ওপর কার্য্যকারিতা দেখালে তা দেশের ওষুধ অনুমোদন সংস্থা সেটা বিচার করে অনুমোদন করেন |

যে ৩ টি ভ্যাকসিন জরুরি ভিত্তিতে অনুমোদন পেয়েছে

images?q=tbn:ANd9GcQngGMtItzd
sciencemag.org

রাশিয়ার গামালেয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে তৈরী স্পুটনিক -৫ ভ্যাক্সিন রাশিয়াতে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়গের অনুমোদন পেয়েছে । ফেজ-৩ ট্রায়াল এর প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হচ্ছে যে এটি ৯৫% শতাংশ কার্য্যকরি | চিনের ক্যান্সিনো বায়োলজিক্স , সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাক এর তৈরী ভ্যাকসিন জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োগের জন্যে চীন, রাশিয়া ও UAE (সংযুক্ত আমিরশাহী ) তে প্রয়োগের জন্যে অনুমোদন পেয়েছে | এদের ফেজ -৩ ট্রায়াল এর রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায় নি | ভালো করে ট্রায়াল না হবার দরুন অনেকেই এগুলির প্রয়োগে দ্বিধা করছেন |

যে তিনটি ভ্যাকসিন অনুমোদনের দোরগোড়ায়

Phase -3 ট্রায়াল এর অন্তর্বর্তী রিপোর্টের ভিত্তিতে ৩ টি ভ্যাকসিন জনগনের জন্যে ঢালাও ব্যবহারের জন্যে মাস খানেকের মধ্যেই অনুমোদন পেতে চলেছে | হয়তো ক্রিসমাসের আগেই এই টিকাকরণ গুলি আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চালু হয়ে যাবে | ভারতেও মাস দেড়েকের চালু হবার জোর সম্ভাবনা রয়েছে |

এগুলি হলো

১)  ফাইজার-বায়নটেক এর তৈরী ভ্যাকসিন

আমেরিকার কোম্পানি Pfizer আর জার্মানির কোম্পানি Biontech মিলিত ভাবে করেছেন | এই ভ্যাকসিন এ করোনা ভাইরাস এর নিজস্ব জিন এর কিছু অংশ আমাদের শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার জন্যে | অন্তর্বর্তী রিপোট এ বলা হচ্ছে এটি ৯৫ % কার্য্যকরী | এর অসুবিধে হচ্ছে এটিকে -৭০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এ রেখে  দিতে হবে যা করা বেশ শক্ত ব্যাপার | ভারতে এটা করা খুব ই অসুবিধে জনক | এর দাম ও হবে প্রায় ২০ ডলার মানে ২০০০ টাকার কাছাকাছি | ভারতে এই ভ্যাকসিন তেমন জনপ্রিয় হবে না সেটা ভারত সরকার ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন| তবে আমেরিকা ও ইউরোপে এই টিকা ব্যবহার করা হবে

Approval for Pfizer vaccine

২) মোডারনা এর ভ্যাকসিন

আমেরিকার মোডারনা র তৈরী প্রতিষেধক অনেকটা Pfizer এর তৈরী ভ্যাকসিনের মতই | অর্থাৎ এটি একই পদ্ধতিতে শরীরে করোনার জিন এর অংশ ঢুকিয়ে করা হয়েছে | এর কার্য্যকারিতা ৯৪.৫% শতাংশ | এটিকে -২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এ মজুত করতে হবে যা করা ভারতের পক্ষে অসুবিধা জনক | এর দাম ও হবে ৩৭ ডলার মানে প্রায় ৩০০০ টাকা | তবে ইউরোপ ও আমেরিকা তে এই টিকা ঢালাও ভাবে জনগণ কে দেওয়া ডিসেম্বর এর মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে আশা করা যায় |

Approval for Moderna vaccine soon

৩) অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার AZD1222

Wall Street Journal astrazeneca 1
সৌজন্যে Wall Street Journal

এই ভ্যাকসিনের দিকে চেয়ে আছেন সারা বিশ্বের লোক | আমাদের দেশেও এটা কেই প্রধান বলে ধরে নেওয়া যায় | UK বা যুক্তরাজ্যে তৈরী এই ভ্যাক্সিনে অন্যরকম প্রযুক্তি গ্রহণ করা হয়েছে | করোনা আক্রান্ত শিম্পাঞ্জির দেহ থেকে ভাইরাস নিয়ে সেটিকে জিন প্রযুক্তির সাহায্যে নির্বিষ করে মানুষের দেহে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে | এই ভ্যাকসিন করোনা ভাইরাসের একটি অংশ থাকে যার নাম ‘স্পাইক প্রোটিন’ | মানব দেহে প্রবেশ করালে এটি অ্যান্টিবডি ও টি –সেল উৎপন্ন করে যা থেকে রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে ওঠে মানুষের দেহে | এটিকে বিভিন্ন রকম ডোজে দুবার দিলে ৬০% থেকে ৯০% পর্য্যন্ত কার্যকারিতার প্রমান পাওয়া গেছে (যদি ও এই নিয়ে কিছু মত বিরোধ দেখা গেছে ) |

এই ভ্যাকসিন মজুত করা অনেক সহজ | ২-থেকে ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস এ সাধারণ রেফ্রিজারেটর এর মধ্যেই একে মজুত করা যাবে | এর দাম ও অনেক কম হবে ১০০০ টাকার মধ্যে | ভারতে সিরাম ইনস্টিটিউট ইতিমধ্যেই এর বহু পরিমান ডোজ তৈরী করে মজুত করি ফেলেছেন | চাইলে এক্ষুনি এই টিকা জনগণ কে দেওয়া যায় | সিরাম ইনস্টিটিউট ভারত সরকারের কাছে এর অনুমোদনের জন্য আবেদন ও করেছেন | এই ভ্যাকসিন শুধু ভারত সহ সারা বিশ্বে বহুল পরিমানে ব্যবহৃত হবে অনুমান করা যায় |

দেশীয় কোম্পানির  দ্বারা প্রস্তুত টিকা :

ভারতে দেশীয় কোম্পানি ভারত বায়োটেক ও জাইডুস ক্যাডিলা ভ্যাকসিন করছেন ।প্রাথমিক রিপোর্টে ভারত বায়োটেক এর ভ্যাকসিন ৬০% কার্য্যকরী বলে প্রমান পাওয়া গেছে | এই ভ্যাকসিন গুলি ফেজ -২ পরীক্ষা শেষ করে ফেজ -৩ পরীক্ষা শুরু করে দেবেন খুব তাড়াতাড়ি | ৫-৬ মাসের মধ্যে এগুলিও পাওয়া যেতে আরম্ভ করবে | এই সব ভ্যাকসিন মজুত করা সোজা হবে ও দামে অনেক কম হবে বলে আশা করা যায় | যেহেতু আমাদের দেশের লোকসংখ্যা অনেক বেশি তাই একাধিক ভ্যাকসিন দরকার | দেশীয় ভ্যাকসিন এই প্রয়োজন মেটাবে |

সুতরাং ভ্যাকসিন এসে গেল বলে | দেশের সরকার সাজসাজ রব নিয়ে লেগে পড়েছেন বলা যায় | মাস্ক পরে আর মৃত্যু ভয় নিয়ে বাস করতে হবে না আর কিছু দিনের মধ্যেই | আপনি এই নিয়ে কি ভাবছেন আমাদের কমেন্টে জানান |

আরো পড়ুন : বাড়িতে বসে রোজগার