করোনার থাবা এবার রাষ্ট্রনেতাদের উপর :

২০২০ সালে আমাদের সবার জীবনটা অনেকখানিই বদলে গিয়েছে। অতিমারীর ভয়ে প্রায় সাত-আট মাসেরও বেশি সময় ধরে লোকজন গৃহবন্দী। তবুও রোগ তো পিছু ছাড়ছে না। মাস্ক, স্যানিটাইজার ইত্যাদি রোগ প্রতিরোধের হাজারো সরঞ্জাম বয়ে বেড়ালেও যে কোনও ছোট্ট অসাবধানতার সুযোগেই করোনা থাবা বসাচ্ছে শরীরে। আর এই রোগটি ধনী-দরিদ্র, কিশোর-বয়স্ক, নারী- পুরুষ, নেতা-মন্ত্রী কাউকেই রেহাই দিচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধির এদিক থেকে ওদিক হলেই দেখা দিচ্ছে নানান লক্ষণ, টেস্টে ধরা পড়লে আর চিকিৎসায় উন্নতি হলে সেরে যাচ্ছে কখনও কখনও। কিন্তু চিকিৎসার সুব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও করোনা বহু মানুষের জীবনহানি ঘটিয়েছে ইতিমধ্যেই। আঁটসাঁট সুরক্ষার মধ্যে থেকেও বিশ্বের বহু তাবড় নেতারা গত ছয় সাত মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। একটু জেনে নিই তাঁদের কথা-


ডোনাল্ড ট্রাম্প– অক্টোবর মাসে যে ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তিনি হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সস্ত্রীক এই রোগের শিকার হন তিনি। নভেম্বরের প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশনের মাত্র কিছুদিন আগে জোরকদমে ক্যাম্পেনিং করার সময়ই তিনি ইনফেকটেড হন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে ইতিমধ্যেই তিনি এই অবস্থাতেও ব্রেকিং নিউজ তৈরি করছেন নানান বক্তব্যের মাধ্যমে।

DONALD TRUMP LIST SEPT29


বরিস জন্সন– ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বরিস জন্সন করোনায় আক্রান্ত হবার পর তাঁর অবস্থা রীতিমতো সংকটজনক হয়ে দাঁড়ায়। প্রথমে হাসপাতালে এবং পরে আইসিইউতে দ্রুত স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে। চিকিৎসকরা তাঁর অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বারবার।


প্রণব মুখোপাধ্যায়– ভারতবর্ষের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও বর্ষীয়ান নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায় গত ৩১সে আগস্ট প্রাণ হারিয়েছেন করোনায়। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স ছিল ৮৪। করোনার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর শরীরে ছিল পতনজনিত গুরুতর চোট। অস্ত্রোপচার করা হলেও তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

করোনা


মিখাইল মিসহাস্টিন- রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী এপ্রিল মাসেই শিকার হন কোভিদের। মিখাইল মিসহস্টিন তাঁর ৫৪ বছর বয়সে রাশিয়ার রাজনৈতিক নেতা হিসেবে সারা বিশ্বে অত্যন্ত পরিচিত মুখ। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পরেই ইনি ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব।


জেইনাইন আনেজ– বলিভিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন রাষ্ট্রপ্রধান জেইনাইন আনেজ জুলাই মাসে আক্রান্ত হন এই রোগে। তারপরই তাঁর ক্যাবিনেটের আরও সাতজন মন্ত্রীরও করোনা ধরা পড়ে। বলিভিয়ায় এখনও পর্যন্ত এই রোগে প্রায় ৮০০০ মানুষ মারা গেছে।

21061172 7690379 image a 74 1573835548828

জাইর বলসনারো– ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বলসনারো জুলাই মাসে করোনায় আক্রান্ত হন। ত্রাণকর্মের জন্য বাইরে ঘোরাঘুরির ফ্লেই করোনা থাবা বসায় তাঁর শরীরে এমনটাই অনুমান করা হয়েছে।

প্রিন্স চার্লস– ব্রিটেনের যুবরাজ প্রিন্স চার্লস মার্চ মাসেই আক্রান্ত হন করোনায়। তখনও পর্যন্ত এই অতিমারির ভয়াল রূপ সম্পর্কে সারা বিশ্ব তেমনভাবে ওয়াকিবহাল ছিল না। ফলে বারবার বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে হাত মেলানোর মধ্যে দিয়েই এই রোগ তাঁর শরীরে ছড়ায় বলেই মনে করা হয়েছে। সম্প্রতি সেরেও উঠেছেন ইংল্যান্ডের রাজপুত্র।

FWDJmWthKaV9gn0w6GJUOS

আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো– বেলারুশের রাষ্ট্রপ্রধান যিনি করোনাকে সাইকোসিস বলে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলেন, গত জুলাই মাসে তিনি নিজেই আক্রান্ত হন এই ভাইরাসটির দ্বারা। এই রোগের তীব্রতা আঁচ না করে এই নেতা জনগণকে ভদকা খেয়ে সুস্থ থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন।

পিটার ডটন- ৪৯বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ার এই হোম মিনিস্টার মার্চ মাসে আমেরিকা থেকে ঘুরে আসবার পর আক্রান্ত হন করোনায়। এক মাসের মধ্যেই সেরে উঠলেও ততদিনে এই রোগের তীব্রতা সম্পর্কে অনেকখানি উপলব্ধি হয়েছিল তাঁর। অস্ট্রেলিয়ার জনগণকে সতর্ক করতে বিশেষ বার্তাও দেন তিনি।

অমিত শাহ- ভারতবর্ষের বিজেপি দলের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডান হাত অমিত শাহ করোনায় আক্রান্ত হন আগস্ট মাসে। তাঁর পরই দেশের মন্ত্রী পরিষদের আরও দশ জনও শিকার হন এই রোগের। ৫৫বছর বয়সী এই নেতা দেশের আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সময় গোমূত্র খেয়ে সুস্থ থাকার পরামর্শ দিলেও রোগাক্রান্ত হয়ে তিনি ভর্তি হন এইমসেই ।

Amit Shah EPS

ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে কোভিদ আমাদের সবাইকে দলমত, বিত্ত, বয়স নির্বিশেষে যেকোনো অসতর্ক মুহূর্তেই আক্রমণ করতে পারে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাবলয় ভেদ করে বিশ্বের এই বড় বড় নেতারা যখন এর শিকার হচ্ছেন বলে জানা যায়, তখন সাধারণ মানুষের আরও অনেক বেশি সতর্ক হওয়াই প্রয়োজন, তাই নয় কি!

1 COMMENT