যোগাসনের আবির্ভাব হয় ভারতবর্ষে বহু প্রাচীনকাল থেকে ।নিরোগ শরীর বজায় রাখতে নিয়মিত যোগাসনের বিকল্প নেই। শরীর ও মন— দুয়ের উপরেই যোগের ভীষণ প্রভাব। এমনকি এই যোগাসন মানুষের মানসিক জড়তা ও অবসন্ন ভাব ও সাহায্য করে। যোগাসনের মাধ্যমে মানুষের রাগ, চঞ্চলতার মতো মনের বেশ কিছু বিশেষ অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। আমাদের আধুনিক সমাজের আধুনিক জীবনযাত্রার টাইট সিডিউলে নিজেকে সুস্থ রাখতে যোগাসন আপনারা করতে পারেন। তাহলে চলুন আজ জেনে নিই যোগাসনের ১oটি উপকারিতা।

যোগাসন
Photo source : zee news

১. রক্ত সঞ্চালন:

যোগাসন সাহায্যে শরীরে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াটি ভালো থাকে । যোগাসনের ফলে দেহে অক্সিজেন ও প্রয়োজনীয় পুষ্টি সঠিকভাবে প্রবেশ করে। তাই রক্ত সঞ্চালন সঠিকভাবে বজায় রাখা যায়। এর ফলে সমস্ত অঙ্গগুলি ঠিক করে কাজ করে ও ত্বকের উজজ্বলতা বৃদ্ধি পায়।তাছাড়া, প্রতিদিন নিয়ম করে যোগাসন করলে রক্ত সঞ্চালন ও অক্সিজেনের সঠিক চালনা হওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপ কমে আসে। এতে শরীর ঠাণ্ডা হয়।

২)শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানির সমস্যা ও পেটের সমস্যা কমাতে:

হাঁপানির টান বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলে তারা যোগাসন করার অভ্যেস করুন। এতে করে ফুসফুসের কার্যকারিতা ধীরে ধীরে সঠিক ছন্দে আসে ও আরাম পাওয়া যায়। তাছাড়া প্রতিদিন যোগাসন করলে হজম ক্ষমতা বেড়ে যায় যার ফলে গ্যাসের সমস্যা সহজে সমাধান হয়। এছাড়া পেটের অন্যান্য সমস্যাও নিরাময় হয়।

৩) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও দেহে সতেজতা ফিরে আসা :

যোগাসন অভ্যাসের সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার যোগাযোগ রয়েছে। যোগাসনের সাহায্যে শরীরের কোষগুলি নষ্ট হওয়া রোধ করা যায় ও শরীর ধীরে ধীরে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ফিরে পায়। তাছাড়া শরীরে যোগাসনের মাধ্যমে শরীর নতুন করে শক্তি সঞ্চারিত হয় যার ফলে এক হারানো সতেজতা ফিরে আসে।

৪) শরীরে সোডিয়াম নিয়ন্ত্রণে থাকে:

সোডিয়ামের অভাবে শরীরে নানারকমের সমস্যা দেখা যায় যেমন রক্তচাপ কমে যাওয়া, থাইরয়েড, ইত্যাদি। যোগ ব্যায়ামের মাধ্যমে সোডিয়াম নিয়ন্ত্রণে থাকে ও নানারকমের শারীরিক সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়।

marjaryasana jpg
photo source : Asianet news bangla

৫) আর্থারাইটিস বা বাত নিরাময় :

যোগাসন নানা ভঙ্গি ও দৈহিক কেরামতির দ্বারা করা হয় যার ফলে হাড়ের অনেক সমস্যা কমে যায় ও হার শক্ত হয়। এর ফলে আর্থ্রাইটিসে ভোগা মানুষদের জন্যে এটি খুব উপকারী।

৬) ক্যান্সার নিরাময়ে :

বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে যোগাসন নিয়মিত করলে শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ ধ্বংস হয় ও উন্নতমানের কোষ গঠিত হয়। এতে ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা অনেকটা কমে যায়।

৭)ওজন নিয়ন্ত্রণ করে ও শরীরের যাবতীয় কার্যকারিতা :

যোগাসনের অর্থ হল শরীরের সমস্ত অংশকে প্রকৃতির সাথে আত্মস্থ করা। এর ফলে শরীরের চালনা ও উৎফুল্লতা বজায় থাকে। তাছাড়া যোগাসনের ফলে পাচনতন্ত্র ভালো হয় ফলে ওজন কমে, শরীর সুস্থ ও সবল থাকে।

৮) মেজাজ ফুরফুরে রাখে ও মানসিক চাপ কমায়:

যোগাসন করলে শরীর ও মনে একটা আলাদা সতেজতা ও ঔজ্বল্ল্য ফুটে ওঠে যা খুব সহজেই মেজাজ ফুরফুরে করে রাখে।নিয়মিত যোগাসন করার ফলে মানসিক চাপ ও ক্লান্তিভাব নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে মানসিক চাপ কম হয়।

৯) আত্মসংযমবোধ ও মনোযোগ বাড়ায়:

জীবনে বেঁচে থাকার জন্য আত্মসংযমবোধ থাকা খুবই প্রয়োজনীয়। যোগাসনের মাধ্যমে মনের জোর বাড়ে ও তার সাথে আত্মসংযম বোধ বাড়ে। আপনি হয়তো জানেন না যে যোগাসনের ফলে মনোযোগ ও ভীষণ পরিমাণে বৃদ্ধি পায়।মাত্র আট সপ্তাহ যোগাসন চর্চা বা অনুশীলন করলেই মনোযোগিতা বাড়ে। এটি ছাত্রদের জন্য খুব উপযোগী।

১০) পিঠে ব্যাথা কমায় :

পিঠে ব্যাথা কমাতে দারুণ উপকারিতা প্রদান করে যোগাসন। প্রতিদিন ৩০ মিনিট পিঠ সোজা করে পদ্মাসন করলে খুব শিগ্রই পিঠের ব্যাথার উপশম হয়।

yoga 1 700x431 1
Photo source : sajgoj

শুধু উপকারিতা জানলেই তো হবেনা, তার সাথে সাথে এই উপকার পেতে গেলে কিছু নিয়ম তো মানতেই হবে। যোগাসন করার কিছু বিশেষ নিয়ম রয়েছে যা আপনার যোগাসন শিক্ষক আপনাকে প্রথমেই জানিয়ে দেবেন। কিন্তু আগে থেকে জানা থাকলে আপনার আরো বেশি উপকার হবে। নিচে প্রয়োজনীয় নিয়মগুলি বিস্তারিত ভাবে দেওয়া হল:

সঠিক পোষাক :

ঢিলেঢালা ও আরামদায়ক পোষাক পরে যোগাসন করতে হয়। তার সাথে অবশ্যই দরকার একটি যোগাসন করার ম্যাট যার ওপরে বসে অনুশীলন করতে হবে। যোগাসন সবসময় খালি পায়ে করা উচিত।

নিঃশ্বাস প্রশ্বাস :

যোগাসনে একটি গুরুত্বপূর্ণ শেখার বিষয় হল নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের দিকে খেয়াল রাখা তাতে ফল পাওয়া যায়।এই বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে।

খাওয়ার নিয়ম :

খেয়াল রাখতে হবে যেন যোগাসন করার আগে পেট খালি থাকে। অর্থাৎ যোগাসন করার অন্তত ২ থেকে ৪ ঘণ্টা আগে খাবার খাওয়া যায় এবং হয়ে যাওয়া ২ ঘণ্টা পর খাওয়া যায়। না’হলে শরীরে অস্বস্তি হতে পারে।

ধৈর্য্য ধরে ব্যায়াম করা :

জোর করে না করে ধীরে ধীরে ব্যায়াম করা উচিৎ নাহলে শরীরে ব্যাথা আরো বেড়ে যেতে পারে। ধীরে ধীরে যোগাসন করতে করতে ক্রমে ফল পাওয়া যায়।