নিজস্ব সংবাদদাতা: বি টি রোডের ধারে অবস্থিত অন্যতম হাই প্রোফাইল বিধানসভা কেন্দ্রকে বরানগর। একসময় এই কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়েই জয়লাভ করেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। তবে সেসব এখন অতীত! গত কয়েক বছর ধরে এখানে তৃণমূলেরই রাজত্ব। গত দুটি বিধানসভা নির্বাচনের মতো এবারও বরানগরে লড়ছেন তৃণমূলের ওজনদার প্রার্থী তথা মন্ত্রী তাপস রায়। বছরভর জনসংযোগই তাঁকে প্রতিপক্ষ বিজেপির প্রার্থী অভিনেত্রী পার্নো মিত্র ও কংগ্রেসের অমলকুমার মুখোপাধ্যায়ের থেকে অনেকটা এগিয়ে রেখেছে।

তবে তাপস বলছেন কাজ এখনও অনেক বাকি। প্রার্থী জানান, ‘‘পানীয় জল, নিকাশির সমস্যা প্রায় দূর করে ফেলেছি। জল জমা নিয়ে আর এক-দুটো জায়গায় সমস্যা আছে। ভবিষ্যতে সেটাও মিটিয়ে ফেলব। সারা বছর মানুষের সঙ্গে থাকি, তাঁদের প্রতি পূর্ণ আস্থা আছে।’’ এদিকে, সেই এলাকাতেই বিজেপির তারকা প্রার্থী পার্নো মিত্রর হয়ে রোড শো করেছেন মিঠুন চক্রবর্তী। পার্নোকে নিয়ে গেরুয়া শিবিরের কর্মীরা ঘুরছেন বটে, তবে তাপসকে টক্কর দেওয়ার মতো জোর চোখে পড়ছে না এলাকায়। প্রচারে বিজেপি বলছে, পানীয় জলের সমস্যার কথা, নিকাশির দুরবস্থা। পার্নোর কথায়, ‘‘যে সাড়া পাচ্ছি তাতে অভিভূত।’’

এদিকে, বরানগরে সত্তরের দশকে কংগ্রেস আমলের গণহত্যার স্মৃতি এখনও বহু প্রবীণ নাগরিকের মনে দগদগে ঘা-র মতো তরতাজা। তাঁদের বড় অংশই বামপন্থী। বরানগরের রাজনীতি নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাঁদের একাংশের মতে, এই প্রবীণ বামফ্রন্ট সমর্থকদের কাছে কংগ্রেস এখনও অচ্ছ্যুৎ। তাই সেই ভোট বড় ফুলে যাবে নাকি ছোট ফুলে, তা নিয়ে জল্পনা চলছে বরানগরের অলিতে-গলিতে।

অন্যদিকে, পানিহাটি বিধানসভা আসনের প্রচার দেখলে একটু ধন্দে পড়তে হয়। রাজ্য রাজনীতির চেয়ে এখানে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে স্থানীয় বিষয়গুলি। নিকাশি, রাস্তাঘাট, পরিস্রুত পানীয় জলের দাবির পাশাপাশি বিরোধীদের দাবি, বিধায়ক তথা এ বারে তৃণমূল প্রার্থী নির্মল ঘোষ এখানে ‘পরিবারতন্ত্র’ কায়েম করেছেন। তবে এ সবকে গুরুত্বই দিচ্ছেন না বিধানসভায় শাসকদলের মুখ্য সচেতক নির্মল। প্রচারে বলছেন, ‘‘উন্নতমানের নিকাশির ব্যবস্থা হয়েছে। পানীয় জলের সমস্যা অল্প কয়েক জায়গায় থাকলেও অধিকাংশ জায়গায় মানুষ পরিস্রুত জল পাচ্ছেন। উন্নত মানের স্কুল করেছি। তৈরি হচ্ছে স্টেডিয়াম।’’ তাঁর আশা উন্নয়নই তাঁকে ভোট বৈতরণী পার করে দেবে।

তবে নির্মলের উন্নয়নের ফিরিস্তিকে স্রেফ ‘গল্প’ বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন গত বার ‘হাত’ চিহ্নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এ বারের পদ্ম-প্রার্থী সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় ও কংগ্রেস প্রার্থী তাপস মজুমদার। দীর্ঘদিন কংগ্রেসে কাউন্সিলর ছিলেন সন্ময়। ঠিক ভোটের মুখে দলবদল করে বিজেপি প্রার্থী হওয়ায় ভোটদাতাদের কাছে জবাবদিহি করতে অনেকটা সময় ব্যয় করতে হচ্ছে তাঁকে। এক্ষেত্রে পানিহাটিতে জোট প্রক্রিয়া অনেক জায়গার তুলনায় মসৃণ। প্রচারে তেমন জৌলুস না-থাকলেও অলিতে-গলিতে ঘুরছেন কংগ্রেসের তাপস। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রামাঞ্চলেও যা উন্নতি হয়েছে, পানিহাটিতে তা হয়নি। এখানে উন্নয়নে নামে দুর্নীতি হয়েছে। বিধায়ক যা করেছেন তা নিজের পরিবারের জন্য করেছেন।’’