নিজস্ব সংবাদদাতা: নবান্ন অভিযানের দিন পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে গেলেও মারতে পারেনি ডিওয়াইএফআই-র সেই কর্মীকে। কারণ, সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর সংগঠনেরই সভানেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। রানীগঞ্জ-আসানসোলের মতো শিল্প তালুকে আঞ্চলিকভাবে মীনাক্ষীর গ্রহনযোগ্যতা বহুদিন আগে তৈরি হলেও, রাজ্য-রাজনীতিতে মূলত সেই নবান্ন অভিযানের দিনই তাঁর উত্থান। আর তারপরই বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে দল পাঠালো এমনই এক কেন্দ্রে, যেখানে নজর ছিল গোটা দেশের। এক দিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অন্য দিকে শুভেন্দু অধিকারী। তবে এরকম হেভিওয়েট কেন্দ্রেও নিজের জোরেই নিজের আলাদা পরিচিতি তৈরি করে নিতে পেরেছেন তিনি।

নির্বাচনের ফল শেষ পর্যন্ত যা-ই হোক, নন্দীগ্রামের ভোটে তৃতীয় পক্ষকে নিয়ে চর্চা মমতা-শুভেন্দুর থেকে কম হয়নি। দলের অন্দরমহলের বক্তব্য, মূলত মীনাক্ষীর জোরেই এবার নন্দীগ্রামে প্রতিটি বুথে পোলিং এজেন্ট বসাতে পেরেছিল সিপিএম। তবে নন্দীগ্রামের ভোট এখন অতীত। কিন্তু মীনাক্ষীর লড়াই এখনও চলছে। আর তাই নন্দীগ্রামের ভোট মিটতেই সেখানকার সিপিএম প্রার্থী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের ডাক পড়ছে অন্যত্র জোটের প্রচারে। বড় নেতাদের ছাপিয়ে সিপিএম এবং কংগ্রেস প্রার্থীদের পছন্দের তালিকায় রাতারাতি উপরে উঠে এসেছেন মীনাক্ষী। এমনকি, জোট শিবিরের যে সব নেতা নিজেরা ভোটে প্রার্থী হয়েছেন, তাঁরাও প্রচারে চাইছেন সিপিএমের এই যুব নেত্রীকে।

রাজ্যে সিপিএমের যুব সংগঠনের শীর্ষ পদে প্রথম মহিলা মুখ মীনাক্ষীই। দু’বছর আগে লোকসভা ভোটের সময়েও ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সভানেত্রীকে প্রচারের কাজে নামিয়েছিল সিপিএম। তবে সেবার অতটাও চর্চায় আসেননি তিনি। এ বার নন্দীগ্রামের মতো বামেদের পক্ষে ‘কঠিন’ আসনে এবং তা-ও আবার মমতা-শুভেন্দুর মতো হেভিওয়েট নেতাদের বিপরীতে মীনাক্ষীর বক্তব্য এবং প্রচারশৈলী নজর কেড়েছে বেশি। সেই কারণেই বাকি পর্বের ভোটের আগে তাঁর কর্মসূচির তালিকা লম্বা হচ্ছে। কিছু কর্মসূচি পূর্বনির্ধারিতই ছিল। তার সঙ্গেই যোগ হচ্ছে নতুন সূচি।

প্রার্থী তালিকায় নাম ঘোষণার পর থেকে টানা নন্দীগ্রামেই ছিলেন মীনাক্ষী। ওই কেন্দ্রে বৃহস্পতিবার ভোট হয়ে যাওয়ার পরে শুক্রবার সেখান থেকে বেরিয়েছেন সিপিএমের যুব নেত্রী। আজ হুগলির চণ্ডীতলায় সিপিএম প্রার্থী এবং দলের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের সমর্থনে প্রচার তাঁর। ডানকুনি-দিল্লী রোড থেকে পদযাত্রার সূচনায় রয়েছেন তিনি। তার পরে যাবেন সিঙ্গুরে সিপিএম প্রার্থী এবং এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্যের সমর্থনে মিছিলে। আবার বিকালে হালতু নন্দীবাগানে সংযুক্ত মোর্চার সভাতেও তিনি অন্যতম প্রধান বক্তা। যাদবপুরের প্রার্থী এবং সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর সমর্থনে ওই সভায় থাকার কথা সুশান্ত ঘোষেরও।

জোট সূত্রের খবর, মীনাক্ষীকে প্রচারে পাওয়ার জন্য সেলিম-সুজনদের কাছে অনুরোধ আসছে বিভিন্ন প্রার্থীর তরফে। বিরোধী দলনেতা এবং চাঁপদানির কংগ্রেস প্রার্থী আব্দুল মান্নান তাঁর এলাকায় মীনাক্ষীকে প্রচারে চেয়েছেন। মীনাক্ষী হিন্দিতেও স্পষ্ট বক্তা, সেটাও তাঁর বাড়তি সুবিধা। প্রদেশ যুব কংগ্রেস সভাপতি ও ভবানীপুরের কংগ্রেস প্রার্থী শাদাব খান যেমন বলছেন, ‘‘কর্মসংস্থান-সহ যে সব দাবি সামনে রেখে আমরা যুবরা রাজ্যে লড়াই করছি, সেই কথা মানুষের কাছে সহজে গ্রহণযোগ্য ভঙ্গিতে পৌঁছে দিতে পারছেন মীনাক্ষী। ভবানীপুর কেন্দ্রে তাঁকে নিয়ে আমি সভা করতে চাই।’’