একটি খুনের ঘটনা ঘটার প্রায় ১০ বছর পর তদন্তকারীরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কাউকে গ্রেপ্তার করছেন এই ঘটনা খুবই কম দেখতে পাওয়া যায়। গতকাল এরকমই ঘটনা ঘটল, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার জুনিয়ার মৃধা খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মোহনবাগানের সহ-সভাপতি তথা প্রখ্যাত ব্যবসায়ী বলরাম চৌধুরীর পুত্রবধূ প্রিয়াঙ্কা চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে সিবিআই।

ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১১ সালে। একদিন সকালে বেলঘড়িয়া এক্সপ্রেস‌ওয়ে থেকে উদ্ধার হয় ২৬ বছরের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার জুনিয়ার মৃধার মৃতদেহ।পুলিশ সহ জুনিয়রের বাড়ির বেশিরভাগ সদস্যই ভেবেছিলেন রোড এক্সিডেন্টের ফলে তার মৃত্যু হয়েছে।। যদিও জুনিয়রের বাবা সমরেশ মৃধা একদম শুরু থেকেই খুনের দাবিতে অনড় ছিলেন। মৃতদেহ ময়না তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায় জুনিয়ারের মাথার পিছনে বন্দুকের গুলি আটকে আছে। তারপরেই পরিষ্কার হয়ে যায় এই তরুণ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারকে খুন‌ই করা হয়েছে।

সেই লড়াই শুরু সমরেশ মৃধার। ছেলের ন্যায় বিচারের দাবীতে এবং অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে গিয়ে একসময় তিনি নিজেই তদন্তকারীর ভূমিকায় বলতে গেলে উপনীত হন। বারে বারে ঘটনাস্থলে গিয়েছেন এবং পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে। একসময় সিআইডির হাতে তদন্তভার তুলে দেওয়া হলেও তারা বিশেষ কিছু করতে পারেনি। অভিযুক্তদের সম্বন্ধে কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে দেয় সিআইডি। তখন সমরেশ বাবু কলকাতা হাইকোর্টে গিয়ে সিবিআই তদন্তের দাবি জানান। হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিলে তার বিরোধিতা করে সিআইডির পক্ষ থেকে ডিভিশন বেঞ্চে যাওয়া হয়। যদিও ডিভিশন বেঞ্চ সিঙ্গল বেঞ্চের রায় পুনর্বহাল রাখে।

সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার তুলে দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই এই ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে নাম উঠে আসে প্রিয়াঙ্কা চৌধুরীর। সেই সময় প্রিয়াঙ্কা উঠতি মডেল ছিলেন তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল টলিউডের প্রযোজক প্রতীক শর্মার। এই প্রযোজকের নাম‌ও খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে যায়। অভিযোগ ওঠে ত্রিকোণ সম্পর্কের কারণেই খুন হতে হয়েছে জুনিয়রকে। জানা যায় খুনের দিন প্রিয়াঙ্কা এবং প্রতীকের মধ্যে ২৫০ বার ফোনে কথা হয়েছে। অন্যদিকে সেইদিন প্রিয়াঙ্কার বাড়ি গিয়েছিলেন জুনিয়র। পরবর্তীতে প্রিয়াঙ্কা চৌধুরীর সঙ্গে বিয়ে হয় মোহনবাগান কর্তা বলরাম চৌধুরীর বড় ছেলের।

প্রিয়াঙ্কা চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করার পর খানিকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন সমরেশ বাবু। তিনি জানিয়েছেন এতদিনে তার ছেলের খুনের তদন্তে সঠিক বিচার হল। তিনি অভিযুক্তদের কড়া শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। যদিও প্রিয়াঙ্কা চৌধুরীর শ্বশুর বলরাম চৌধুরী সিবিআইয়ের এই পদক্ষেপকে ষড়যন্ত্র বলে ব্যাখ্যা করেছেন। তার দাবি ১০ বছর আগের খুনের ঘটনায় এখন কিসের ভিত্তিতে সিবিআই গ্রেপ্তার করছে? তার বক্তব্য এই মুহূর্তে তো প্রমান বলে আর কিছু নেই। তাহলে কিসের ভিত্তিতে প্রিয়াঙ্কাকে গ্রেফতার করা হল?