ভাইবোন ; কথায় বলে ভাইবোন দের সম্পর্ক খুব শুদ্ধ এবং খাটি হয়। স্বভাবতই তাদের মধ্যে যে মানসিক বোঝাপড়া ও বন্ধন থাকে টা সত্যিই যে কারোর কাছে দুষ্প্রাপ্য।তবে পৃথিবীতে এমন ও অনেক ভাইবোন আছে যারা জন্মসূত্র থেকে ই মানসিক এর পরিবর্তে শারীরিক ভাবে একে অপরের সাথে জড়িত।
এরম ই অনেক শিশু এর সন্ধান আজও পাওয়া যায় । আজ এরম ই কিছু শারীরিক ভাবে জুড়ে থাকা বাচ্চাদের কথা আলোচনা করবো। চলুন শুরু করা যাক।
১. সাল ১৯৫১ তে ২৪ অক্টোবর আমেরিকার এক শহরে রোডি এবং ডোনি গ্যালিনিয়ন জন্ম গ্রহণ করেন। তাদের পেটে এর দিকের অংশ এক্সাথে জোড়া লাগা ছিল । হাসপাতালে টানা ২ বছর থাকার পর ডাক্তার জানান যে তাদের পৃথক করা সম্ভব নয়। এবং খুব ই ঝুঁকি পূণ্য, তাই তারা জীবনের শেষ অবধি প্রায় ৬১ বছর এক সাথে বাচে।
২. লরি এবং ডরি স্ক্যাপেল, তারা ক্র্যানিওপ্যাগাস নামক জায়গায় জন্মগ্রহণ করেন । এই বাচ্চা দুটির ক্ষেত্রে , জোড়া মাথা নিয়ে তারা জন্ম গ্রহণ করেছিল যাদের তাদের ব্রেন একটি। ডাক্তার অনেক পর্যবেক্ষন করার পর জানিয়েছিলেন যে তাদের পৃথক করার চেষ্টা করলে উভয় ই মারা যেতে পারে। তাই শেষমেশ আসার কোনো আলো বজায় না থাকায়, ২৪ বছর তারা একসাথে জীবন অতিবাহিত করে।
৩. লুইসেন্ এবং লুইটেন দুই ভাই চাইনা এর এক শহরে ১৮৮৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। এই দুই জন এর পেটে র অংশ এর কাছে জোড়া ছিল। তাদের মূত্র থলি একটা, দুটি পা ছিল । এদেরকেও অন্য দের মতই জীবনের অন্তিম সময় অবধি একসাথে জুড়ে থাকা অবস্থাতেই অতিবাহিত করতে হয়।
৪. এবি এবং ব্রিটা নিয়াংশেল নামেরও দুই শিশু যখন জনগ্রহন করেছিল তাদের একটি শরীরের দুই টি মাথা ছিল। একটি শরীর হলে ও তাদের ব্রেন ছিল দুটি । প্রত্যেকের পৃথক হৃদয়, পেট, মেরুদণ্ড, ফুসফুস জোড়া এবং মেরুদণ্ড রয়েছে।প্রতিটি যমজ একটি বাহু এবং একটি পা নিয়ন্ত্রণ করে। শিশু হিসাবে কল করা, হাঁটা এবং গান একসাথে শিখতে পারে । তারা পৃথকভাবে এবং একযোগে খেতে এবং লিখতে পারে। দৌড়, সাঁতার, চুল ব্রাশ এবং গাড়ি চালানোর মতো ক্রিয়াকলাপগুলিকে তারা একসাথে ই করে।
৫. গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জ এ জন্মগ্রহণ করেছিল দুই শিশু সন্তান। তোরা- তোফা নামে এই দুই শিশু দের পেট ছিল জোড়া । তাদের দুজনের পৃথক শরীর থাকলেও পাকস্থলী ছিল একটাই। ১ ম আগুস্ট তোরা- তোফা র জোড়া শরীর এক অস্ত্রোপচার এর চেষ্টা চালনো হয় এবং অস্ত্রোপচার এর মাধ্যমে তাদের কে অবশেষে পৃথক করে আনা সম্ভব হয়। প্রায় ২০ ঘন্টা সার্জারি এর পর তাদের সুস্থভাবে দুই শরীর পৃথক করা সম্ভব হয়।
৬. রবিয়া এবং রোকেয়া, দুই শিশু জোড়া অবস্থায় জন্ম নেয়। সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) একটি গুরুতর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের পৃথক করা হয়েছিল যা ২ আগস্ট ২০১২ এ হয়েছিল। রাবেয়া এবং রোকেয়া এখন পাবনা জেলায় সফল জীবন যাপন করছে।
৭. ৩০ জুন, ২০১৯ রাতে পাবনা যমুনা ক্লিনিকে জন্ম নেয় রাজা- বাদশা নামক দুই শিশু । শিশু দুটি জন্ম থেকে ই তাদের শরীরের বুক থেকে কোমর পর্যন্ত জোড়া। শিশুটির চাচা আলমগীর হোসেন জানান, যমজ দুই শিশুই ছেলে সন্তান। আত্মীয়রা নাম রেখেছেন ‘রাজা-বাদশা’। নিজ খরচে উন্নত চিকিৎসা করানোর মত আর্থিক সামর্থ শিশু দুটির মা-বাবার নেই। তাই জটিল শারীরিক সমস্যা নিয়ে জন্ম নেওয়া এই যমজ সন্তানের চিকিৎসা নিয়ে এখনও গভীর হতাশার মধ্যে রয়েছে তাদের পরিবার।
বিজ্ঞান এর চেষ্টায় অনেক জোড়া শিশু দের কে বর্তমান সময়ে এখনও অবধি আলাদা করা সম্ভব হয়েছে। তবে মাঝেমধ্যে তাদের পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে থাকে যাতে মানুষের পক্ষে কিছু করবার কোনো রকম সুযোগ থাকে না বা থাকলেও অর্থের অভাব থাকার জন্য এই ধরনের নিষ্পাপ শিশুদের জীবনের অন্তিম মুহূর্ত অবধি অপরিবর্তিত অবস্থায় কষ্ট পেতে পেতে অতিবাহিত করতে হয়।
একদিকে তো শারীরিক সমস্যা রয়েছেই তার উপর সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও বাস্তব জিবনে চলার পথে এদের ক্ষেত্রে দুর্বিষহ করে তোলে । নিজেদের দোষ না থাকলেও ভুক্তভুগী ত তাদেরকেই হতে হয় । সরকারের কি কর্তব্য নয় এদের সুস্থ্য করে তোলবার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা ! যাতে এর অন্যান্য শিশুদের মতই এক সুস্থ্য স্বাভাবিক শৈশব থেকে নিজেদের গড়ে তুলে দেশের ভবিষ্যত সামলাতে পারে।