১৯৯৩ সালে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ান্স ক্লাব কাপের নাম পরিবর্তিত হয়ে চ্যাম্পিয়ান্স লীগ হয়। ইউরোপের সেরা ক্লাবেদের নিয়ে হয় এই টুর্নামেন্ট। বলা যায়, সমগ্র পৃথিবী প্রায় রাত জাগে এবং চোখ রাখে নিজের প্রিয় দলের খেলায়। ফুটবলারদের স্বপ্ন থাকে লীগ ফাইনাল খেলা। চ্যাম্পিয়ান্স লীগের ইতিহাসে অসাধারণ বহু ম্যাচের মাঝে, বেশ কিছু ফাইনাল রয়েছে যা আজ‌ও ফুটবলপ্রেমীদের মনে টাটকা। আলোচনা করা যাক এমন পাঁচ ফাইনাল নিয়ে যা চ্যাম্পিয়ান্স লীগের ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় থেকে যাবে।

51CMM01RMWL. AC SY400
ট্রফি হাতে জেরার্ড (সোর্স- Amazon UK)

১. লিভারপুল বনাম এসি মিলান ( ২০০৫) – এই দশকের চ্যাম্পিয়ান্স লীগ ফাইনাল নিয়ে বলতে গেলে সর্বপ্রথম যে ম্যাচটির কথা মনে পড়ে সেটি লিভারপুল বনাম এসি মিলান। এই ফাইনালের ফেভারিট ছিলো কার্লো আন্সেলত্তির এসি মিলান। ম্যাচ শুরুর প্রথমার্ধে পাওলো মালদিনি, হার্নান ক্রেসপো(২) -এর গোলে এগিয়ে যায় এসি মিলান। আশাহত হয়ে বহু লিভারপুলিয়ান মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান। কিন্তু কথায় আছে, ফুটবল ৯০ মিনিটের খেলা। দ্বিতীয়ার্ধে দারুণ ভাবে শুরু করে জেরার্ড, ভ্লাদিমির স্মিকার, এবং খাবি আলনসোর গোলে নির্ধারিত সময় শেষে ড্র করে লিভারপুল। রাফা বেনিতেজের লিভারপুল সে রাতে যেন ইস্তানবুলের আতার্তুক স্টেডিয়ামে ইতিহাস রচনা করেছিল। এক্সট্রা টাইমের পর খেলা পেনাল্টি শ্যুট‌আউটে গেলে সেখানে জয়লাভ করে লিভারপুল। এই ম্যাচ লিভারপুল প্রেমী সহ সমগ্র ফুটবল প্রেমীদের কাছে এক অসাধারণ ফিরে আসা এবং সাহসিকতার উদাহরণ।

1fae8b7ca94d731cad7aaff4575ffdbd
ট্রফি হাতে রিয়্যাল খেলোয়াড়রা (সোর্স- Pinterest)

২. রিয়্যাল মাদ্রিদ বনাম আতলেতিকো মাদ্রিদ (২০১৪) – এই ম্যাচের প্রথমার্ধে দিয়েগো গডিনের গোলে এগিয়ে যায় আতলেতি। অসাধারণ ফর‌ওয়ার্ড লাইনাপ থাকলেও সিমোনের আতলেতির বিরুদ্ধে ম্যাচের ৯০ মিনিট পর্যন্ত গোল করতে পারে নি রিয়্যাল। খেলা শেষের কিছু সেকেন্ড আগে কর্নার থেকে গোল করে নির্ধারিত সময়ে ম্যাচটি ড্র করেন সের্জিও রামোস। রিয়্যাল সমর্থকদের থমথমে মুখে হাসি ফোটান রামোস। এরপর এক্সট্রা টাইমের খেলায় ডি মারিয়ার জ্যিগজ্যাগের পর বেলের হেডে গোল, মার্সেলো এবং ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর গোলে রিয়্যাল ৪-১ গোলে পরাজিত করে আতলেতিকো মাদ্রিদকে।

e35400b59109cf619728d1f6c1d4ef09
জয়ের পরে চেলসি খেলোয়াড়রা (সোর্স- Pinterest)

৩. চেলসি বনাম বায়ার্ন মিউনিখ (২০১২) – এই ম্যাচের ফেভারিট বায়ার্ন মিউনিখ শুরু থেকেই বলে পজিশন বেশি রাখার চেষ্টা করেছিল। রবার্তো দি মাত্তিওর চেলসি ইতালির কাতানেচিও ফর্মেশনে ডিফেন্সকে সাজায়, যার ফলে ৩৫ টি শট্ এবং ২০ টা কর্নারের পরেও কেবলমাত্র মুলারের একটি গোল ছাড়া মিউনিখ কিছু করতে পারে নি।ম্যাচের একদম শেষ লগ্নে চেলসি তারকা ডিডিয়ের ড্রোগবা কর্নার থেকে হেডে গোল করে চেলসিকে সমতায় ফেরায়। এরপর এক্সট্রা টাইমের পরবর্তীতে পেনাল্টি শ্যুট‌আউটে চেলসি জিতে যায়। এই ম্যাচটি হাল না ছাড়া মানসিকতা ও ধৈর্যের এক অসাধারণ উদাহরণ।

merlin 138716301 7655ceb3 fb5e 4354 821a bfad8d475786 superJumbo
ট্রফি হাতে রিয়্যাল খেলোয়াড়রা (সোর্স- The Newyork Times)

৪. রিয়্যাল মাদ্রিদ বনাম লিভারপুল (২০১৮) – এই ম্যাচ ঘিরে ফুটবল প্রেমীদের মাঝে উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। ক্লপের সালাহ্, ফিরমিনো, মানের বিরুদ্ধে জিদানের বেল, বেঞ্জেমা, রোনাল্ডোর লড়াইয়ে অবশেষে শেষ হাসি হেসেছিলেন জিদান। ম্যাচ শুরুর কিছু পরেই চোট পেয়ে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান সালাহ্।এরপর লিভারপুলের গোলকিপারের ভুলে প্রথম গোল করেন বেঞ্জেমা। স্যাডিও মানে সেখান থেকে সমতায় ফেরালেও রিয়্যাল সেই ম্যাচ ৩-১ গোলে জয়লাভ করে। জিদান ও ক্লপের দলের এই ম্যাচ ফুটবল প্রেমীদের জন্য চিরকাল স্মরণীয় থেকে যাবে।

ট্রফি হাতে রিয়্যাল খেলোয়াড়রা (সোর্স- Fifa.com)

৫. জুভেন্তাস বনাম রিয়্যাল মাদ্রিদ (২০১৭) – এই ম্যাচের নায়ক ছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো। প্রথম কুড়ি মিনিট জুভে খেলা ভালো ভাবে ধরলেও রোনাল্ডো কুড়ি মিনিটের মাথায় গোল করেন। এরপর মানজুকিচ গোল করে জুভেকে সমতায় ফেরালেও ৬১ মিনিটে ক্যাসেমিরো গোল করেন। এরপর রোনাল্ডোর অসাধারণ ব্যাক ভলিতে ৩ গোল করে ফেলে রিয়্যাল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই অসাধারণ গোলের পর জুভে সভ্য সমর্থকেরাও করতালি দিয়ে রোনাল্ডোকে সাধুবাদ জানায়। খেলার একদম অন্তিম পর্যায়ে গোল করেন অ্যাসেনসিও। এই ম্যাচ ৪-১ গোলে জয়লাভ করে রিয়্যাল মাদ্রিদ। এই ম্যাচটি চ্যাম্পিয়ান্স লীগের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।