বর্তমানে আমাদের মধ্যে থেকে হারিয়ে গিয়েছে আরও এক মূল্যবান নক্ষত্র, KK। যদিও এই প্রথমবার কিছু নয় ২০২২ সালের শুরুর দিক থেকে একের পর এক নক্ষত্র পতন ঘটেই চলেছে।
তাবড় তাবড় সমস্ত শিল্পীদেরকে হারিয়ে ফেলেছেন ভারতের মানুষজন। তবে এবার যেন এক অবাক করা নক্ষত্র পতন দেখল সমগ্র ভারতবাসী।
গত ৩১শে মে স্টেজ পারফরম্যান্স করতে করতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন সকলের প্রিয় কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ওরফে KK, এরপরই যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানেই তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
তাঁর এই মৃত্যু যেন মেনে নিতে পারেনি সমগ্র ভারতবাসী, গোটা একটা রাত জেগে ছিল গোটা দেশের মানুষ। কেউ আশায় করতে পারেননি কলকাতাতে এসে নিজের প্রাণ ত্যাগ করতে চলেছেন সকলের প্রিয় গীতকার KK।
KK এর গান আমরা প্রায় প্রত্যেকেই ছোট থেকে শুনে বড় হয়েছি, উনার লেখা প্রত্যেকটি গান কিন্তু আমরা নিজেদের জীবনের সাথে মিলিয়ে নিতে পারি।
হয়তো তিনি আর আমাদের মধ্যে নেই কিন্তু সারা জীবন আমাদের মনের মধ্যে থাকবে এবং তাঁর লেখা প্রত্যেকটি গান জ্বলজ্বল করবে একইভাবে।
আমরা প্রত্যেকেই জানি যে কিভাবে তিনি KK হয়ে গোটা বলিউডে বিরাজমান করেছিলেন। তবে আপনারা কি জানেন খুব একটা সহজেই এই সম্মান তিনি পাননি?
অনেক কষ্ট করে এই সম্মান অর্জন করতে হয়েছে তাঁকে। নানান ভাবে পরিশ্রম করে এবং অপমান সহ্য করে আজ তিনি দেশজুড়ে এই খ্যাতি অর্জন করেছেন।
আজ আপনাদের KK এর অজানা এক গল্প বলতে চলেছি যেগুলো শুনলে আপনিও কেঁদে ভাসাবেন তা নিশ্চিত।
![KK - এক নক্ষত্রের অজানা গল্প! জানতে হলে শেষ পর্যন্ত নজর রাখুন!! 1 KK (singer)](https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/0/09/KK_%28125%29.jpg)
![KK - এক নক্ষত্রের অজানা গল্প! জানতে হলে শেষ পর্যন্ত নজর রাখুন!! 1 KK (singer)](https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/0/09/KK_%28125%29.jpg)
সালটা ছিল ১৯৬৮, সেই বছরের ২৩শে অগাস্ট জন্মগ্রহণ করেন কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ওরফে KK। মূলত হিন্দু মালয়ালি পরিবার জন্মগ্রহণ করে দিল্লিতে বেড়ে ওঠেন তিনি।
তাঁর পিতার নাম হল সি. এস. মেনন এবং মাতার নাম হল কুন্নথ কনকবল্লি। তিনি নিজের জীবনের প্রাথমিক শিক্ষা নিয়েছেন দিল্লির মাউন্ট সেন্ট ম্যারিস স্কুল থেকেই। এরপর সেখান থেকে নিজের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে তিনি এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ কিরোরি মাল কলেজ থেকেই নিজেরস্নাতক সম্পন্ন করেন।
১৯৯৯ সালে মূলত ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময় ভারতীয় ক্রিকেট টিমের জন্য সমর্থনে “জোশ অব ইন্ডিয়া” নিজের কণ্ঠ দিয়েছিলেন। যদিও বলিউডে প্রবেশ করার আগে তিনি ৩,৫০০ বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেলে কণ্ঠ দিয়েছিলেন।
জানা যায় ১৯৯১ সালে তিনি জ্যোতি কৃষ্ণার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, একইসাথে তাঁদের ২টি সন্তানও রয়েছে। ৩১ বছরের দাম্পত্য জীবন হলেও সম্পর্ক ছিল অনেক আগে থেকেই।
কৈশোর জীবন থেকেই একে অপরকে চিনতেন জ্যোতি এবং KK। বলা হয় যখন KK একেবারেই প্রতিষ্ঠা ছিলেন না তখন তাঁর হাত শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন জ্যোতি।
জানা গিয়েছে, সেই সময় যখন বিয়ের জন্য সিদ্ধান্ত নেন দুজনে। তখন পাত্রীর পরিবার থেকে খোঁজ লাগানো হয় যে পাত্র আসলে ঠিক কোথায় কাজ করেন।
তবে অবশেষে জানা যায় পাত্র বেকার কিছুতেই নিজের মেয়ের সাথে বেকার ছেলের বিয়ে দিতে রাজি ছিলেন না জ্যোতির বাবা।
শর্ত ছিল একটাই বিয়ে করতে হলে চাকরি করতে হবে। আর সেই সময় চাকরি পাওয়া ছিল খুবই কঠিন কাজ। তাও হার না-মেনে চাকরির সন্ধান শুরু করেছিলেন KK।
তাই সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়ে জ্যোতিকে বিয়ে করার জন্য সেলসের একটি চাকরিতে যোগদান করেন KK। আর এভাবেই জ্যোতিকে বিয়ে করেন তিনি।
জানা যায়, এই চাকরি খুব একটা সময় ধরে করতে পারেননি তিনি মাত্র তিন মাসের মাথায় চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে আসেন শিল্পী।
অনেক কষ্ট জল ঝাপটা সহ্য করতে হয়েছে একে অপরকে তবে কেউ কাউকে ছেড়ে যায়নি। অবশেষে লড়াইয়ের ফলাফল মিলল ১৯৯৯ সালেশিল্পীর গাওয়া গানের প্রথম অ্যালবাম রিলিজ করে। আর এরপর থেকে জীবনে আর কোনদিন পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।
একের পর এক হিট গান গেয়ে প্রত্যেকের মন জয় করে নিয়েছিলেন সংগীতশিল্পী KK। বিশেষত অভিনেতা ইমরান হাশমির ছবির কন্ঠ হিসেবে দেখা যেত KK-কে।
নক্ষত্র পতন হওয়ায় শুধুমাত্র যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিল্পীর পরিবার এবং ইন্ডাস্ট্রি এমনটা নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সমগ্র ভারতবাসী। আজ তাঁর এই অস্বাভাবিক মৃত্যু যেন সকলকে নাড়িয়ে দিয়ে গিয়েছে।
তিনি চলে গিয়েছেন না ফেরার দেশে তবে সারাজীবন থেকে যাবে তাঁর এই গাওয়া গান এবং স্মৃতি।