অভিনয় : অক্ষয় কুমার, কিয়ারা আদবানী, শরদ কেলকার ;
পরিচালক : রাঘব লরেন্স
বছর শেষে ঠিক দীপাবলির আগে আগেই OTT প্লাটফর্মে মুক্তি পেল রাঘব লরেন্স পরিচালিত, অক্ষয় কুমার অভিনীত ছায়াছবি “লক্ষ্মী” । এই ছবির নাম প্রথমে “লক্ষ্মী বোম্ব” রাখা হলেও, পরবর্তী কালে ছবির নাম নিয়ে আপত্তি ওঠায় ছবির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় “লক্ষ্মী” । শুরুতে ছবিটির মুক্তি পাওয়ার দিন ঠিক ছিল 22 মে 2020, কিন্তু করোনাকালীন পরিস্থিতির জন্য অবশেষে ছবিটি মুক্তি পায় 9 নভেম্বর 2020 । ছবিটির ট্রেলার মুক্তি পাওয়ার সাথে সাথেই অক্ষয় ভক্তদের মধ্যে ছবিটি নিয়ে প্রত্যাশার সৃষ্টি হয় । ভিন্ন স্বাদের চরিত্রে অভিনয় করে সাধারণ মানুষের কাছে অক্ষয় কুমার আগেই তার অভিনয় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, এক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম ঘটেনি । এই প্রথমবার অক্ষয় কুমার কে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে ‘কিন্নর’ বা ‘অর্ধনারীশ্বর’ রূপে, যদিও মূল লক্ষ্মী চরিত্রটিতে অভিনয় করেছেন শরদ কেলকার । ছবিটিতে ভৌতিক রূপায়ণ এবং হাস্যরসের মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সমাজের দ্বারা অবহেলিত ‘কিন্নর’ সম্প্রদায়ের কয়েকটি মানুষের গল্পকে । তবে ভয়, হাসি, অক্ষয় কুমার এবং শরদ কেলকার-র ‘কিন্নর’ রূপী অসামান্য অভিনয় ব্যর্থ হয়েছে ছবিটিকে ব্লকব্লাস্টার বানাতে ।
ছবিটির ব্যর্থতার দিকে আলোকপাত করার আগে একটু নজর দেওয়া যাক ছবিটির মূল গল্পে । ছবিটির প্রধান চরিত্র আসিফ (অক্ষয় কুমার) এবং রশ্মি (কিয়ারা আদবানী) আসেন দমন এ রশ্মি-র বাবা মায়ের 25 বছর বিবাহবার্ষীকি অনুষ্ঠানে । রশ্মি তার পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে আসিফকে বিয়ে করেন, রশ্মির মা, দাদা, বৌদি আসিফকে মেনে নিলেও, রশ্মির বাবা (রাজেশ শর্মা) আসিফ মসুলমান হওয়ার জন্য তাকে জমাই হিসেবে গ্রহন করেননি । গল্পের মোর ঘুরে যায় যখন একটি কিন্নরের আত্মা লক্ষ্মী (শরদ কেলকার) আশ্রয় নেন আসিফ-র শরীরে । ক্রমশ আসিফ-র ব্যবহারে পরিবর্তন দেখা যায়, তার সাথে রশ্মির বাড়িতে ঘটতে থাকে নানান সব ভৌতিক কান্ড । এই লক্ষ্মী আসলে কি চায় আর কি ভাবে এই ভৌতিক কান্ডের অবসান ঘটে সেই আলোচনা বরং উহ্য থাক সেইসব দর্শকের জন্য যারা এখনও ছবিটি দেখেনি।
“লক্ষ্মী” ছবিটি মূলত 2011 সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তামিল ছবি ‘কাঞ্চনা’ র রিমেক । ‘কাঞ্চনা’ ছবিটিও রাঘব লরেন্স ই পরিচালিত ছবি । এই ছবিটিতে রাঘব লরেন্স নিজেও মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন এবং প্রশংসিত হন । ‘কাঞ্চনা’ ছবিটিতে হাস্যরস ও ভৌতিকতার যে অসামান্য রসায়ণ লরেন্স ফুটিয়ে তুলে ছিলেন, সেই ম্যাজিক থেকে অনেকটাই বঞ্চিত “লক্ষ্মী”। তবে “লক্ষ্মী” ছবিটিতে ‘কিন্নর’ সম্প্রদায়ের গল্পের সাথে সাথে দেখানও হয়েছে চিরাচরিত চলে আসা হিন্দু মুসলিম জাতি ভেদাভেদের গল্পকেও । ছবিটি দেখে দর্শকের খুব হাসিও পাবেনা আবার খুব ভয়ও লাগবে না আর এটাই ছবিটির মূল ব্যর্থতা । অভিনয়ের দিক থেকে অক্ষয় কুমার যথাযথ চেষ্টা করেছেন আসিফ এবং লক্ষ্মী দুটো চরিত্রই ভিন্ন ভিন্ন ভাবে ফুটিয়ে তুলতে । কিন্নর বেশে অক্ষয় কুমারের ‘বম্ ভোলে’ নৃত্য টি দর্শকের মনে আলাদা দাগ রেখে যাবে । এছারাও এই ছবির আরেকটি গান ‘ব্রুজ্ খলিফা’ শ্রোতাদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে । কিয়ারা র এই ছবিতে তেমন কিছু করার ছিলনা তবে যতটুকু করেছেন তা যথাযত, বাকি কলাকূশলী রাও তাদের নিজ নিজ অভিনয়ে প্রত্যেকটি চরিত্র ই সঠিক ভাবে দৃশ্যায়িত করতে সক্ষম হয়েছেন । অবশ্য যার কথা আলাদা করে এখানে না উল্যেখ করলেই নয় তিনি হলেন শরদ কেলকার । “লক্ষ্মী” চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ে তিনি সাবলীল ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন একটি কিন্নর র চালচলন, কথা বলার ভঙ্গি, চোখের চাহনী এবং বাকী অঙ্গভঙ্গিকে । ইতিমধ্যে ছবির সংলাপ সেরকমভাবে দর্শকের মনে দাগ কাটতে পারেনি, ছবিটি মুক্তির আগে দর্শক যতটা উচ্ছ্বসিত ছিল এখন সেই উচ্ছ্বাস অনেকটাই কম ।
যদি ‘কাঞ্চনা’ ছবিটির সাথে তুলনা না করে শুধুমাত্র একটি ভিন্ন স্বাদের ভৌতিক ছবি হিসেবে “লক্ষ্মী” ছবিটি দেখা যায় তাহলে ছবিটির মূল গল্প সাধারন মানুষের মনে রেখাপাত করতে সক্ষম হবে ।
[…] […]