নিজস্ব সংবাদদাতা- অমিত শাহ ঠাকুরনগর থেকে সভা করে যাওয়ার পরেই গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ল বিজেপি। বনগাঁর মতুয়া ভোটব্যাঙ্কের দখল নিয়ে লড়াই বেধেছে ঠাকুরবাড়ির ছেলে তথা বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে বনগাঁর বিজেপি বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসের। এমনকি এই লড়াইয়ে একে অপরের বিরুদ্ধে ‘ব্ল্যাকমেল’ করার অভিযোগ আনেন। বিশ্বজিৎ দাস অভিযোগ করেন মতুয়াদের ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছে। পাল্টা দিতে গিয়ে শান্তনু ঠাকুরের অভিযোগ দল ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করছেন বিশ্বজিৎ।

বিশ্বজিৎ দাস সাংবাদিক সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন মতুয়াদের নাগরিকত্ব দেওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে তিনি ব্ল্যাকমেল শব্দটি ব্যবহার করে বুঝিয়ে দেন আগামী বিধানসভা নির্বাচন উপলক্ষে মতুয়াদের সিএএ’র টোপ দেখিয়ে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। নাম না করলেও তার সমালোচনার লক্ষ্য নিজের দল বিজেপি বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা।

এই প্রসঙ্গে শান্তনু ঠাকুরকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “কে ব্ল্যাকমেল করছে আপনারাই দেখুন। আমি তো সিএএ দেব না। এই সংক্রান্ত আইন এনেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার দপ্তর। আমি দলের বিরুদ্ধে কোনো কথা না বলেও মতুয়াদের পক্ষে গলা তুলতে পারি। কিন্তু উনি ব্ল্যাকমেলের কথা বলে আসলে সরাসরি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করছেন।”

বিশ্বজিৎ দাসের বিরুদ্ধে দল বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ এনে শান্তনু ঠাকুর বলেন, “আমাকে অনেকদিন ধরেই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক দলে টানার চেষ্টা করছেন। কিন্তু যারা সিএএ সমর্থন করেন না তাদের দলে যাওয়া তো দূরের কথা মুখ দেখতে চাই না। আর উনিতো উল্টে মুখ্যমন্ত্রীর পায়ে গিয়ে প্রণাম করে ফেললেন। কে দলবিরোধী আচরণ করছে সবাই তা জানে।”

এই দুই বিজেপি নেতার দ্বন্দ্বের বিষয়ে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা গাইঘাটার বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এরকম বেসুরো আরও অনেকেই হবে।” তার ইঙ্গিতের লক্ষ্য যে বনগাঁর বিধায়কের দিকে তা পরিষ্কার। বিশ্বজিৎ দাসের দলে ফিরে আসার সম্ভাবনা নিয়ে বলেন, “দলে কে আসবে সে বিষয়ে বলতে পারব না। তবে তৃণমূল ছেড়ে যারা বিজেপিতে গিয়েছে সে রকম একজন বিধায়ক‌ও স্বস্তিতে নেই। তারা সবাই বেসুরো হয়ে উঠবে।”

স্থানীয় রাজনৈতিক মহল সূত্রে খবর বিশ্বজিৎ দাসের সঙ্গে শান্তনুর ঠাকুরের কোনোদিনই সুসম্পর্ক ছিল না। বনগাঁর রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল ও মতুয়া ভোটের ওপর আধিপত্য বিস্তারের বিষয়টি নিয়ে তাদের দুজনের মধ্যে রেষারেষি ক্রমশ তীব্র হয়েছে। এদিকে অমিত শাহর সভায় আমন্ত্রণ থাকা সত্ত্বেও বিশ্বজিৎ দাসকে প্রথমে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে শুভেন্দু অধিকারীর হস্তক্ষেপে তিনি সভায় প্রবেশ করেন। এই ঘটনার পর বিরোধ আরও বেড়েছে বলেই খবর। রাজনৈতিক মহলের মতে বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই দুই নেতার দ্বন্দ্বের ফল ভুগতে হতে পারে বিজেপিকে।