নিজস্ব সংবাদদাতা- লকডাউনের পর দেশের অর্থনৈতিক কাজকর্ম স্বাভাবিক হলেও এখনও দেশের অর্থনীতি পুরনো ছন্দে ফেরেনি। অর্থনীতিবিদদের অনেকেই বলছেন এই মুহূর্তে ভারতে মন্দা চলছে। সেই মন্দার ছোঁয়া লেগেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের গায়ে। অন্তত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কার্যকলাপ ঘিরে এই প্রশ্ন উঠতেই পারে।

তাপসিয়ার তৃণমূল ভবনে এই প্রথম বিধানসভা ভোট পরিচালনার জন্য দলীয় কর্মী সমর্থকদের অনুদান গ্রহণের উদ্দেশ্যে তিনটি ছোট ছোট অনুদান সংগ্রহ বাক্স বসানো হয়েছে। এই বাক্সগুলিতে যে কেউ ক্যাশ, চেক বা নির্বাচন কমিশন প্রদত্ত ইলেকশন বন্ডের মাধ্যমে অনুদান জমা দিতে পারেন। চেকে অনুদান জমা দিতে হলে দাতার প্যান কার্ড নম্বর এবং আধার নম্বর একই সঙ্গে জমা দিতে হবে বলেও বাক্সের গায়ে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

সাধারণত কৌটো নেড়ে বা অনুদান গ্রহণ বাক্স বসিয়ে কর্মী সমর্থকদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করার রীতি এ রাজ্যের বামপন্থী দলগুলোর মধ্যে প্রচলিত ছিল। বাকি দক্ষিণপন্থী দলগুলোর মতো তৃণমূল নির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতি না মেনেই এতদিন অনুদান গ্রহণ করত দলীয় কর্মী সমর্থকদের কাছ থেকে। প্রতিবছর নির্বাচনের আগে কেবলমাত্র দলের ওয়েবসাইটে দলীয় কর্মী সমর্থকদের নির্বাচন পরিচালনার কাজে অনুদান দেওয়ার জন্য আবেদন করা হতো দলের পক্ষ থেকে।

বিজেপি শিবিরের এক নেতা এই প্রসঙ্গে কটাক্ষ করে বলছেন, “রাজ্যের ক্ষমতায় টিকে থাকতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল হুবহু সিপিএমকে অনুসরণ করার চেষ্টা করছে। তাই বাক্স বসিয়ে অনুদান সংগ্রহ করে তৃণমূল নেত্রী হয়তো ভাবছেন তিনি বামেদের মতো ৩৪ বছর এ রাজ্যে ক্ষমতায় টিকে থাকবেন।”

তৃণমূল পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় ৩৪ বছর টিকবে নাকি তার আগেই তাদের বিদায় ঘটবে তা সময় বলবে। কিন্তু আদ্যোপান্ত একটি দক্ষিণপন্থী দল হয়ে এভাবে বাক্স বসানোর ঘটনাটি দুটি দিকে ইঙ্গিত করতে পারে। এক, সত্যিই তাদের ভাঁড়া শূন্য। বিশেষ করে কানাঘুষো শোনা গিয়েছে প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপ্যাককে পরামর্শদানের জন্য প্রায় কয়েক শ’ কোটি টাকা দিতে হয়েছে রাজ্যের শাসক দলকে। সে ক্ষেত্রে ভাঁড়ে মা ভবানী হাল হওয়া খুব একটা আশ্চর্য জনক নয়। দ্বিতীয় সম্ভাবনাটি হল স্রেফ ভাবমূর্তি উদ্ধারের লক্ষ্যে এবং তারা রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় থাকলেও অর্থের অভাবে আছেন বোঝাতেই দলনেত্রীর নির্দেশে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়ে থাকতে পারে।

রাজনৈতিক হিসেবের দিকে তাকিয়েই রাজ্যের মানুষের কাছে দলের আর্থিক দুর্দশা প্রমাণের মধ্য দিয়ে তৃণমূল বোঝাতে চাইতে পারে তাদের বিরুদ্ধে যে সমস্ত দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তা ভুয়ো। দুর্নীতি করলে তাদের অর্থের অভাব থাকত না!