‘বন্ধু তোমার ছাড়ো উদ্বেগ, সুতীক্ষ্ণ করো চিত্ত/ বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি বুঝে নিক দুর্বৃত্ত।’ এই স্লোগান সামনে রেখেই একসময় আকাশ কাঁপাত বামপন্থীরা। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দেন কোনও ঘাঁটিই অভেদ্য, অজেয় নয়। তাতে ভাঙন ধরানো সম্ভব। আর আজ মমতার দেখানো পথেই পশ্চিমবঙ্গে সিঁধ কাটছে বিজেপি। গড়ে তুলছে নিজেদের দুর্গ।

Why Hindutva is a pariah in world opinion

১। হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির উত্থান – একথা প্রথমেই স্বীকার করে নেওয়া ভালো যে হিন্দুত্বকে সরিয়ে দিলে বিজেপির হাতে থাকে পেনসিল। তথাকথিত সেকুলার রাজনীতির সওয়ার হলে বিজেপির ক্ষমতা দখল স্বপ্নই থেকে যেত। সে কেন্দ্রেই হোক কিংবা রাজ্যে। ২০১৩-১৪ সাল থেকেই দেশ জুড়ে হিন্দুত্ববাদী শক্তির উত্থান ঘটেছে। সেই রথেই সওয়ার হয়েছেন মোদী। পশ্চিমবঙ্গেও তার ছোঁয়া লাগাটাই স্বাভাবিক। তারওপর এই বাংলারই ঘরের ছেলে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। ফলে বিজেপির সঙ্গে খুব সহজেই নিজেদের কানেক্ট করতে পেরেছে আমবাঙালি।

২। শক্তিশালী বিরোধীর অভাব – ২০১১ সালে মমতার ক্ষমতা দখলের পরেই কংগ্রেস এবং সিপিএম ছেড়ে দলে দলে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার হিড়িক পরে যায়। রাজনীতিতে বিরোধী স্থান কখনওই শূন্য থাকে না৷ তাই বাম ও কংগ্রেসকে টপকে চতুর্থ থেকে প্রধান বিরোধী শক্তির দিকে উত্থান হয়েছে বিজেপির৷

৩। সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগ – পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু ভোট প্রায় ৩০ শতাংশ৷ এদের সিংহভাগই তৃণমূলের সমর্থক৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, তৃণমূলের লক্ষ্য মুসলিম ভোট। এ রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর কথাবার্তা, পোশাক, আচরণে এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেন৷ এটাকে তোষণের রাজনীতি হিসাবে প্রচার করেছে বিজেপি। সংখ্যাগুরুর মধ্যে তার প্রভাবও পড়েছে। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটই তার প্রমান।

৪। দূর্ণীতি – লক্ষ লক্ষ মানুষ সর্বস্ব হারিয়েছেন সারদা-রোজভ্যালিতে। নারদ তদন্তে গোপন ক্যামেরায় টাকা নিতে দেখা গিয়েছে অনেককে৷ তবে তৃণমূলের সবচেয়ে মাথাব্যাথা বাড়িয়েছে পঞ্চায়েত স্তরে দূর্ণীতি। আমফানের ত্রাণের টাকা এমনকী রেশনের চাল চুরিরও অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূল কর্মীরা বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা দিতে গ্রামবাসীদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা এটাকেই বলছেন ‘কাটমানি’। এর সঙ্গে রয়েছে উদ্ধত আচরণ, দুর্ব্যবহার৷ ফলে মানুষ বীতশ্রদ্ধ। যা সহজে বিজেপিকে প্রবেশ করার পথ করে দিচ্ছে।

৫। দল ভাঙানোর খেলা – রাজনীতির কারবারিরা বলেন, দল ভাঙানোর খেলার মাস্টার আর্টিস্ট মুকুল রায়। অভিযোগ, তৃণমূলের নাম্বার টু থাকাকালীন সিপিএম-এর নেতা-কর্মী ভাঙাতেন তিনি। বিজেপিতে এসে সেই খেলাটাই আবার শুরু করেছেন। ইদানীং শাসক দলের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের সংঘাত হচ্ছে চতুর্দিকে৷ অর্থাৎ, তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়ার মতো ক্ষমতাধর বলে বিজেপি প্রতিষ্ঠা পেয়ে গিয়েছে৷তাই বাম ও কংগ্রেস সমর্থকরাও বিজেপির দিকে ঝুঁকছে। তাঁরা মনে করছেন, তৃণমূলের সঙ্গে টক্কর দিতে পারে পদ্মশিবিরই। ফলে সহজ হচ্ছে বিজেপির কাজ।