বিশ্ব ফুটবলের পাতায় চোখ রাখলে প্রথমের দিকেই দেখতে পাওয়া যায় ডার্বি ম্যাচ।মিলান, ম্যানচেস্টার, এল ক্লাসিকো, সুপার ক্লাসিকো, ফ্লা-ফ্লু সহ ভারতের বড়ম্যাচ‌ অর্থাৎ ইস্ট-মোহন ডার্বি বহু ইতিহাসে সমৃদ্ধ। ঘটি, বাঙালের এই লড়াইয়ে দু’দল ছাড়াও মুখোমুখি হয় সাহস, স্পর্ধা, ঐতিহ্য, ইতিহাস ও আবেগ। ডাঙায় ইলিশ চিংড়ির এই যুদ্ধে নায়ক হয়েছেন বহু খেলোয়াড়, তেমন‌ই খলনায়ক‌ও হয়েছেন অনেকে। এই দুই ক্লাব তাদের ইতিহাস নিয়ে গর্ব করতে পারে। সমগ্র ভারতবাসী ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ইস্ট – মোহন সমর্থকদের কাছে বড় ম্যাচ মানেই “বুক কাঁপে, হাত ঠান্ডা ডার্বি জড় নাছোড়বান্দা।” সকল ডার্বি সম গুরুত্বপূর্ণ হলেও আজ আমরা কথা বলতে চলেছি স্মরনীয় পাঁচ ডার্বি নিয়ে।

1. সেপ্টেম্বর ৩০, ১৯৭৫আইএফএ শিল্ড ফাইনাল- ইস্টবেঙ্গল ৫ – মোহনবাগান ০ : এটি ইস্ট – মোহন ডার্বি ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়। এই জয় ইস্টবেঙ্গলের ইতিহাসে সোনায় সমৃদ্ধ। ১৯৭০ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত সময়কালে ইস্টবেঙ্গল সমস্ত ভারতীয় ট্রফি সহ ৬ বার কোলকাতা লীগ ও এই মহা ম্যাচ জয় করে শিল্ড পেয়েছিল। এই ম্যাচের গোলদাতারা হলেন শ্যাম থাপা(২), রঞ্জিত মুখার্জি, সুরজিৎ সেনগুপ্ত এবং শুভঙ্কর সান্যাল।

1975 ifa shield final 1472046736 800
6322451311 36da263af0 o
ছবিতে উচ্ছাসে মাতোয়ারা ইস্টবেঙ্গল সমর্থক

2. অক্টোবর ২৫, ২০০৯ – মোহনবাগান ৫- ইস্টবেঙ্গল ৩ : বলা যায় ১৯৭৫ এর প্রতিশোধ এই ম্যাচ। এই ম্যাচে অসাধারণ খেলেছিলেন নাইজেরিয় ফুটবলার চিডি এডে। চিডির চার গোল সহ মনীশ মৈথানী একটি গোল করেন মোহনবাগানের হয়ে। অপরদিকে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে গোল করেন ইয়াকুবু(২) এবং নির্মল ছেত্রী। এই দিনটি সমস্ত মোহনবাগান সমর্থকদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলা চলে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল এই যে, ১৯৭৫ এর সেই বড় ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের জয়ের অন্যতম অংশীদার সুভাষ ভৌমিক এই ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের কোচ ছিলেন। করিম, সুভাষ যুদ্ধে করিম জিতে যায়।

59092hp2
চার গোলের পর চিডির উচ্ছাস

৩. জুলাই ১৩, ১৯৯৭ – ইস্টবেঙ্গল ৪- মোহনবাগান ১ : এই ম্যাচে গ্যালারিতে ছিলেন ১ লক্ষ ৩১ হাজার ৭৮১ জন। মোহনবাগান কোচ অমল দত্তের ডায়মন্ড সিস্টেমকে ধূলিসাৎ করেছিলেন বাইচুং ভুটিয়া। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে প্রথম গোলটি করেছিলেন নাজিমুল হক, এরপর বাইচুংয়ের হ্যাট্রিক সহ মোট চার গোল, অপরদিকে মোহনবাগানের হয়ে গোলটি করেছিলেন চিমা ওকেরি। এই ম্যাচকে কেন্দ্র করে ইস্ট – মোহন সমর্থকবৃন্দের উন্মাদনা ছিল তুঙ্গে। বলা যায় বাইচুং ভুটিয়া প্রায় একাই সমগ্র ইস্টবেঙ্গল সমর্থকের মুখে হাসি ফুটিয়েছিলেন।

FB IMG 1587372602858
লাল হলুদ পতাকা নিয়ে বাইচুংয়ের উচ্ছাস

৪. ডিসেম্বর ৯, ২০১২ – অসমাপ্ত ম্যাচ : এই অভিশপ্ত ম্যাচটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে সমগ্র ইস্ট – মোহন সমর্থকদের কাছে। ম্যাচের বয়স যখন ৪৩ সে মুহূর্তে মেহতাব হুসেনের সেন্টারে ফ্লাইং হেডে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে গোলটি করেন হরমনজিৎ সিং খাবড়া। এরপরেই গ্যালারি থেকে উড়ে আসা ইঁটের আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন মোহনবাগানের রহিম নবি। মোহনবাগান তারকা ওডাফার লাল কার্ড দেখে বেরোনোর পর উত্তাল হয়ে ওঠে গ্যালারি। রেফারি বিষ্ণু চৌহানের হাত থেকে বেরিয়ে যায় ম্যাচ, হাফটাইমের পর খেলা আর হয় নি। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি পরে আয়ত্বে আসে।

kolkata2 660 120912074746
ছবিতে মাথা ফেটে যাওয়ার পরবর্তীতে রহিম নবিকে নিয়ে মাঠের বাইরে যাচ্ছেন ইস্টবেঙ্গল খেলোয়াড়রা

৫. সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৫ – ইস্টবেঙ্গল ৪ – মোহনবাগান ০ : সাম্প্রতিক কালে এই ম্যাচটি সবচেয়ে বড় ব্যবধানে ডার্বি জয়। বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের ইস্টবেঙ্গলের হয়ে দু’গোল করেছিলেন কোরিয়ান ফুটবলার ডো ডং হিউন। ফ্রি কিক থেকে দুটি চমৎকার গোল সমর্থকদেরকে উপহার দিয়েছিলেন ডো ডং। এছাড়াও অপর দুটি গোল করেছিলেন রাহুল ভেকে ও রফিক। ডো ডংকে কেন্দ্র করে এই ম্যাচে ছিল অনেক প্রত্যাশা, বলা যায় প্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছিলেন ডো ডং।

Do Dong 2
ম্যাচ শেষে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের কাছে নায়ক ডং