আগামী বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের এপ্রিল-মে মাস নাগাদ করে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোট অনুষ্ঠিত হবে। সেই ভোটের দিকে লক্ষ্য রেখে ইতিমধ্যেই এই রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষের মনে নানান রাজনৈতিক সমীকরণের সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক কৌতূহল তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস দাবি করছে আগামী নির্বাচনে জিতে তারাই পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় থেকে যাবে। অন্যদিকে বিজেপি দাবি করছে তৃণমূলকে পরাজিত করে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা দখল তাদের কাছে স্রেফ সময়ের ব্যাপার। একটু পিছিয়ে থাকলেও ময়দানে নেমে পড়েছে বাম-কংগ্রেস জোট। তাদের দাবি তৃণমূল-বিজেপি উভয়কেই পরাজিত করতে তাদের ওপর আস্থা রাখবেন রাজ্যের মানুষ।
অনেকের ধারণা ২০১৯ এর লোকসভা ভোটে তৃণমূলের খারাপ ফলাফল হওয়ায় একুশের নির্বাচনেও তৃণমূল খারাপ ফল করবে। যারা রাজনীতির ময়দানকে ভালো করে চেনেন তাঁরা এই ধারণা শুনে বলে উঠতে পারেন “গাছে কাঁঠাল / গোঁফে তেল।” কারণ যতক্ষণ পর্যন্ত না নির্বাচনের ফলাফল বেরোচ্ছে, ততক্ষণ কোনো কিছু নিয়েই নিশ্চিত হওয়া যায় না। এটাই রাজনীতির মূল প্রতিপাদ্য। তবুও আমরা কৌতূহলের বসবর্তী হয়ে অনেক কিছু নিয়েই আগাম ভাবনা চিন্তা করতে পছন্দ করি। সে ক্ষেত্রে আমরা বরং আলোচনা করে দেখি যে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল পরাজিত হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন এই দলটির পরিস্থিতি বা অবস্থা কি হতে পারে।
![একুশের বিধানসভায় হারলে যা যা হতে পারে তৃণমূলের সঙ্গে 1 images 4 5](https://www.banglakhabor.in/wp-content/uploads/2020/12/images-4-5.jpeg)
১) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইস্তফা দিতে পারেন
একুশের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল হেরে গেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলনেত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে পারেন। রাজনৈতিক মহলে তৃণমূল নেত্রী আবেগপ্রবণ বলে পরিচিত। এক্ষেত্রে তার নেতৃত্বে দল ক্ষমতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হলে পরাজয়ের যাবতীয় দায়ভার গ্রহণ করে তিনি সরে যেতেই পারেন।
২) লোকসভায় ফিরে যেতে পারেন তৃণমূল নেত্রী
মুখ্যমন্ত্রীর পদ হাতছাড়া হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়তো রাজ্যের বিরোধী নেত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালনে আগ্রহী হবেন না। এক্ষেত্রে দলের কোনো সাংসদ তার পদ থেকে ইস্তফা দিলে সেই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি নির্বাচনে জিতে আবার লোকসভার সদস্য হতে পারেন।
৩) জীবনে প্রথমবারের জন্য রাজ্যসভার সাংসদ হতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
সংসদে যাওয়ার জন্য লোকসভায় প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার ঝুঁকি নাও নিতে পারেন তৃণমূল নেত্রী। বিধানসভা নির্বাচনের পর প্রথম যে রাজ্যসভা ভোট হবে তাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি নিরাপদে রাজ্যসভার সাংসদ হিসাবে নির্বাচিত হতে পারেন।
![একুশের বিধানসভায় হারলে যা যা হতে পারে তৃণমূলের সঙ্গে 2 images 5 4](https://www.banglakhabor.in/wp-content/uploads/2020/12/images-5-4.jpeg)
![একুশের বিধানসভায় হারলে যা যা হতে পারে তৃণমূলের সঙ্গে 2 images 5 4](https://www.banglakhabor.in/wp-content/uploads/2020/12/images-5-4.jpeg)
৪) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব অস্বীকার করতে পারে অনেকে
একটি রাজনৈতিক দল যখন ক্ষমতায় থাকে তখন ক্ষমতার মোহে নেতারা খুব একটা মুখ খোলে না। তাই একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস পরাজিত হলে দলের উচ্চাকাঙ্ক্ষী নেতারা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে কাজ করতে অসম্মত হতে পারে। তার ফলে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়ে উঠতে পারে।
৫) দল ভেঙে যেতে পারে
তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতাচ্যুত হলে দল ভেঙে যাওয়ার বড় সম্ভাবনা আছে। দলের একাংশ ক্ষমতার লোভে বিজেপিতে গিয়ে শামিল হতে পারে। অন্য একটি অংশ আবার কংগ্রেসে ফিরে যেতে পারে।
৬) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসে ফিরে যেতে পারেন
দলের বেশির ভাগ নেতাকর্মী যদি দলত্যাগ করে অন্য দলে শামিল হয়, সে ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার পুরানো দল কংগ্রেসে প্রত্যাবর্তন করতে পারেন। কারণ দু-চার জন নেতা নিয়ে লড়াই করার থেকে কংগ্রেসের ফিরে গিয়ে নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়াটা তার পক্ষে অনেক সুবিধাজনক হবে।
৭) একাধিক তৃণমূল নেতা জেলে যেতে পারে
সারদা-নারদা কান্ড সহ একাধিক আর্থিক কেলেঙ্কারিতে তৃণমূলের বেশ কয়েকজন উচ্চ স্তরের নেতা অভিযুক্ত। অন্য দলের সরকার ক্ষমতায় এসে এই বিষয়ে কড়া অবস্থান গ্রহণ করতে পারে। সেক্ষেত্রে তৃণমূল নেতৃত্বের এর একটা বড় অংশকে জেলযাত্রা করতে হতেই পারে।
৯) ক্ষমতা হারিয়ে তৃণমূল আঞ্চলিক দলে পরিণত হতে পারে
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে হেরে গেলেই সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূলের জাতীয় দলের তকমা চলে যাবে না কিন্তু ভারতীয় রাজনীতিতে প্রভাবের বিচারে তারা স্রেফ একটি আঞ্চলিক দলে পরিণত হতেই পারে। সেক্ষেত্রে জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলের মতামত কারোর কাছেই আর খুব একটা গুরুত্ব পাবে না।
১০) নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন লড়াকু মমতা
কেবলমাত্র পশ্চিমবঙ্গে নয়, ভারতীয় রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লড়াকু নেত্রী হিসাবে সুপরিচিত। তার সমগ্র রাজনৈতিক জীবনে তিনি প্রতিমুহূর্তে লড়াই করে নিজের অবস্থানকে মজবুত করে তুলেছেন। একটি নির্বাচনী যুদ্ধে হার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দমিয়ে দিতে সক্ষম নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে নতুন উদ্যমে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন তিনি।
এই যে দশটা সম্ভাবনার কথা আমরা এখানে আলোচনা করলাম এগুলোর কোনোটাই বাস্তবায়িত নাও হতে পারে। আবার এগুলির সঙ্গে আরও কয়েকটি বিষয়ে ঘটতে পারে। যেমন তৃণমূল কংগ্রেস ভেঙে গিয়ে একাধিক অঞ্চল ভিত্তিক নতুন রাজনৈতিক দল সৃষ্টি হতে পারে। অতএব অনুমান ভিত্তিক জল্পনা যেমন থাকবে তেমনি সম্পূর্ণ চিত্রটা পরিষ্কার হওয়ার জন্য আমাদের আগামী বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশ পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।