নিজস্ব সংবাদদাতা- রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ তাসের ঘরের তুলনা করছেন। কারণ খেলার ছলে তাস দিয়ে যে ঘর বানানো হয় তা থেকে একটি তাস সরিয়ে নিলেই গোটা স্ট্রাকচারটি হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে! তাদের মতে তৃণমূলের অবস্থাও ঠিক সেরকম। প্রতিদিন কোনো না কোনো জনপ্রতিনিধি হয় দল ছাড়ছেন, নয়তো উল্টো সুরে গাইতে শুরু করে দিচ্ছেন। সবচেয়ে বড় কথা একজন নেতা উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করলেই আরও বেশকিছু জন সেই পথ ধরেছে, ঠিক যেন যৌগিক সুদের গল্প!

সরল সুদ হচ্ছে ধার নেওয়া টাকার ওপর সোজা পথে যতটা সুদ চাপে। কিন্তু যৌগিক সুদের বিষয়টি হল সুদের উপর সুদ তার উপর সুদ! ‘কথায় আছে সুদের ফাঁদে পড়েছে তো গেছ’, তৃণমূলের অবস্থা এখন সেই রকম! একসময় মনে হয়েছিল দলের নাম্বার টু পজিশন ধরে রাখতে না পারার ফলেই মুকুল রায় দলত্যাগ করছেন। আসলে সেটা ছিল শুরু ধাপ। তিনি দল ছাড়ার কিছুদিন পর থেকেই ধাপে ধাপে একের পর এক সাংসদ বিধায়ক দল ছাড়তে শুরু করে। শুভেন্দু অধিকারী বিজেপিতে যোগ দেয়ার পর এই প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভের উদ্দেশ্যে তৃণমূলের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে বিজেপির মতো সাম্প্রদায়িক দলকে আটকাতে হলে তারা ছাড়া গতি নেই। একাধিক তৃণমূল নেতা বাম ও কংগ্রেস সমর্থকদের উদ্দেশ্যে মাঝেমধ্যেই আবেদন করছেন তারা যাতে বিজেপিকে আটকানোর জন্য তৃণমূল প্রার্থীদের ভোট দান করে।

এই বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। একটা বড় অংশের বামপন্থী সমর্থকরা দাবি করছেন তৃণমূলকে ভোট দেওয়ার অর্থ বিজেপিকে ভোট দেওয়া! না, তারা এক্ষেত্রে ‘উভয় দলই সাম্প্রদায়িক’ এই যুক্তির কথা আপাতত আলাদা করে উল্লেখ করছেন না। তাদের ইঙ্গিত একের পর এক তৃণমূল নেতাদের দলত্যাগের দিকে।

নেটিজেনদের এই অংশটির দাবি তৃণমূলের টিকিটে যারা নির্বাচনে জয়লাভ করবে তারাই তো সেই পরে গেরুয়া শিবিরের সামিল হবে! অর্থাৎ তৃণমূল প্রার্থীরা নির্বাচনে জয়লাভ করার পর দলেই থাকবেন এরকম কোনো সম্ভাবনা মানুষের মন থেকে ক্রমশ মুছে যাচ্ছে। ঘটনাচক্রে এই আলোচনা এবং প্রচার ক্রমশ ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। দীর্ঘদিন ধরে যদি এই প্রচার চলতে থাকে এবং তা যদি তৃণমূল নেতৃত্বের পক্ষ থেকে কাউন্টার করা সম্ভব না হয় তাহলে আগামী নির্বাচনে একটা বড় অংশের তৃণমূল সমর্থক তাদের কাছ থেকে সরে আসতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন মানুষের মনে তৃণমূল প্রার্থীদের সম্বন্ধে সংশয় ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন বাম কর্মী সমর্থকরা। ঘটনা হল সাধারণ মানুষ যদি একবার ভাবতে শুরু করেন তাঁর ভোটে জয়লাভ করা তৃণমূল প্রার্থীর দু’দিন পরেই বিজেপিতে গিয়ে সামিল হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তাহলে তারা আর সহজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলকে ভোট দেবে না। যা আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের মূল বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে!