রবিবার দুফুর , গাছের ফাঁক দিয়ে রোদের মিঠে আলো এসে আলো পড়ছে দোতালা বাড়ির বারান্দায়, দুফুরে কচি পাঠার ঝোল দিয়ে গরম গরম ভাত খেয়ে আরাম কেদারায় বসে  সজারুর কাঁটা পড়তে পড়তে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠার উপক্রম ঠিক তখনি ফোনে নেটফ্লিক্সের  মানি হেইস্ট  এর লাস্ট  সিজেনের নটিফিকেশন এসে কড়া নাড়ছে । ব্যাস আর কি শুরু হল মস্তিষ্ক এবং হৃদয়ের মধ্যে দন্ধ , হৃদয় বলে সজারুর কাঁটা, আর মস্তিষ্ক বলে নেটফ্লিক্স।  এরকম দোটানার মধ্যে আকছার প্রায়শই সকলকে পড়তে হয় ।   কেউ যায় বইয়ের সমুদ্রে পার লাগাতে/ গা ভাসাতে  কেউ আবার  পছন্দ করে নটফ্লিক্সের দুনিয়ায় বিভোরিত হতে। কিন্তু যদি তুলনামূলক  বিচার  করি  তো  দেখা  যাবে  গা  ভাসানোর  চেয়ে ঝাঁপ দিতে বেশী সাচ্ছন্দ্য বোধ করে বর্তমান প্রজন্ম।

প্রেক্ষাপট-

ওটিটি জন্ম যদিও আজ নয় । ওটিটির জন্ম ভারতে হয় ২০০৮ সালে রিলায়েন্সের হাত ধরে  Bigfix নামে যদিও সেটা শুধুমাত্রে সিনামে ডাউনলডের  জন্য। তারপর ধীরে ধীরে তাকে অনুসরন করে খেলা দেখার জন্য আসে এক NEXGTV, এরপর একে একে dittotv, sony liv এই ধরনের কিছু প্ল্যাটফর্ম । কিন্তু এরা তাঁদের আধিপত্য তেমন বিস্তার  করতে পারেনি। কিন্তু হটাৎ করেই যেন সকলকে পিছনে ফেলে  এক লাফে চোখের নিমেশে এগিয়ে গেল ও টি টি প্ল্যাটফর্ম। ২০১৮ থেকে রমরমা ওটিটি বাজার দর।  ওটিটি  মানুষের মধ্যে নেশা লাগিয়ে দিয়েছে । তা বলে এ নেশা কিন্তু ড্রাগসের নেশা নয় ওয়েব সিরিজের, সিনেমার নেশা । ক্লান্ত মানুষ গোটাদিন যতই খাটাখাটনি করুক না কেন  না গুমিয়ে ভোর রাত অবধি এই নেশায় মত্ত থাকে, এই নেশা তাদের মাথা থেকে নামতেই চায় না,  তখন তারা নিজেদের মধ্যে  যেন আলাদা শক্তি অনুভব করে  । বই পরার, টিভি দেখার স্বাদ, তারা এখনে খুঁজে নিয়েছে এই নতুন প্লাটফর্মে । সকলের পছন্দের কিছু ওয়েবসিরিজ  NETFLIX র ,Money heist, Dark, 13 reason why, Sacred games. AMAZON PRIME র Panchayat, Prisons break, Family man, Mirzapur, Made in heaven, Four more shot please ।

ওটিটি প্ল্যাটফর্মের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ার পাঁচ কারন

১) মাসিক খরচ হ্রাসের জন্য

প্রতি মাসেই টিভির জন্য টাকা ভরা, তার মধ্যে সিরিয়াল,খেলা, মুভি চ্যানেলের জন্য আলাদা করে সাবক্রিপশন নেওয়া । আলাদা আলদা চ্যানেলের আবার আলাদা আলদা দাম।  তার উপর হলে গিয়ে সিনেমা  প্রায় প্রতি মাসেই দেখা হয় তাতে আবার বাড়তি খরচা, কারন সিনেমার টিকিটের দাম ভালো কোন হলে ১৫০ নিচে পাওয়া ভাগ্যের বিষয় ফলে পকেটেও বেশ টান পড়ে। তাই পকেটের টানকে বাঁচাতে সবাই ওটিটিকে বেঁছে নিচ্ছে।  স্বল্প টাকার একবছরের সাবক্রিপশন খরচ   প্রতি মাসের টিভি ও সিনেমাহলের  মিলিত খরচ বাবদ  প্রায় অর্দেক হয়ে যাচ্ছে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই ওটিটিকেই সকলে আপন করবে।

ওটিটি প্ল্যাটফর্মসাপ্তাহিক
(খরচ)
মাসিক
(খরচ)
অর্ধ বাৎসরিক
(খরচ)
বাৎসরিক
(খরচ)
 Zee 5 999
Disney+ Hotstar399
Netflix 199 (sd quality)                  
499 (sd quality)        
           699 (hd quality)                 
  799 (hd quality)
Amazon prime129999
Sony liv  2999299499
Voot99999
Alt balaji 300
Hoichoi499
699

২) সময়সাপেক্ষতা বিহীন আনন্দ উপভোগের জন্য

ওটিটি প্ল্যটফর্মে  সিনেমা হোক কিংবা সিরিয়াল, হোক না কোন খেলার টুর্নামেন্ট কোন সময়সাপেক্ষতার ব্যাপার নেই। নিজের পছন্দ মতো সময় অনুযায়ী অনুষ্ঠান উপভোগ করা  যায়।  কোন নির্দিষ্ট সময় নেই আমার ইচ্ছা হলে যে কোন অনুষ্ঠান অর্ধেক আজ দেখে বাদ বাকি অংশ কালকের জন্য রেখে দিতে পারি তাও ডাউনলোড না করে, বা গোটা সিরিজ আকদিনে শেষ করে দেওয়া যায়।  ২ ঘন্টা ধরে বসে বোর হওয়ার পালাও নেই। খেলার ক্ষেত্রে সেটি রেকর্ড  করে রাখার অপশনও আছে , অফিসের কাজ শেষ করে যখন তখন খেলার মজা উপভোগ করার ক্ষেত্রে ওটিটি বেস্ট অপশন বর্তমান সময়কালীন পরিস্থিতিতে।

৩) লকডাউনের অবসাদ কাটানোর জন্য

 ২০২০ একটি অভিশপ্ত বছর যেই বছরে কোন শুভ কিছু খুজে পাওয়া খুব দুস্কর। আর কোভিডের এই বাড়বাড়ন্তের ফলে মানুষের জীবন প্রায় ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠার জোগাড়। বিনোদনের জন্য প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সিনেমা দেখা সেটাতেও স্থগিতাদেশ বসিয়েছে লকডাউন। কিন্তু মানুষ তো হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র মোটেও না। বিকল্প হিসেবে বেঁছে নিয়েছে  ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে।  এক বছরের ছোট্ট টাকার বিনিময়ে সিনেমা থেকে সিরিজ, সিরিয়াল, কার্টুন সমস্ত অনুষ্ঠান এই ওটিটিতে উপস্থিতি থাকার ফলে লকডাউনের অবসাদ প্রায় অনেকটাই ঘুচেছে দেশবাসীর । তাই  বিশেষ করে এই এই লকডাউনে ওটিটি জনপ্রিয়তা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে।

৪) বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা পূরনে

 এখন সবাই যুগের সাথে পা মিলিয়ে চলতে অভ্যস্ত। প্রত্যেকের হাতে একটি করে স্মার্টফোন বাঞ্ছনীয়। আর সকলের কাছেই সময় অতন্ত্য সাপেক্ষ,   নিজের সাথে সময় কাটাতেই বেশী ভালবাসে বিশেষ করে  বর্তমান প্রজন্ম। তাই তারা প্রতি মুহূর্তে নতুন বিষয়কে গ্রহন করতে এক পা এগিয়ে, তাই তাঁদের কাছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম যে জনপ্রিয়তা পাবে তা খুব একটা আশর্যচকিত বিষয় নয়। তারা গড়পত্তা ডেইলি সোপে মত্ত কখনই ছিল না, তাঁদের আসক্তি  ওয়েব সিরিসের দিকে। তাই বর্তমান ফিল্ম ইন্ড্রাস্টিও এই বর্তমান জেনারেশনের তুমুল চাহিদাকে গুরুত্ব দিতেই বেশীরভাগ সিনেমা ওটিটি প্ল্যটফর্মে  বার করছে, শুধু তাই নয় নামযাদা অভিনেতা অভিনেত্রীদের সিনেমাও রিলিজ করা হচ্ছে ওটিটিতে যারা এক সময় সিনেমা হল কাঁপিয়েছে, তাই বিনোদন পেতে গেলে এখন একমাত্র  সম্বল ওটিটি  প্ল্যাটফর্ম।

৫)পরিবারের সকলের আশা পূরণ করতে

 টিভি দেখতে বসে প্রত্যেক সংসারেই আগুন লাগে, মা দেখবে সিরিয়াল, বাবার চাই খবর , ছেলের আবার খেলা ছাড়া চলবে না, মেয়ে সিনামার জন্য নাছড়বান্ধা, সকলের ভিন্ন ভিন্ন চাহিদা।  তাই এই চাহিদা কে একত্রিত করে সকলের সামনে  নতুন রূপে এসেছে ওটিটি।  একবার সাবক্রিবশন করে নিলে ভিন্ন ভিন্ন ডিভাইস অর্থাৎ, টিভি, ল্যাপটপ, ট্যাব, ফোন থেকে প্রত্যকে নিজের পছন্দ মতো অনুষ্ঠান দেখতে পারবে, ফলে পরিবারে শান্তি বজায় থাকল আবার  সকলের চাহিদাও পূর্ন হল। তাই ওটিটির চাহিদা এখন আকাশ ছোঁয়া।

আগে এতো ওটিটির ক্ষিদে না থাকলেও যত দিন যাচ্ছে মানুষ সম্পূর্ণ ভাবে ওটিটি আশক্ত হচ্ছে। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এখন আট ঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে, ফলে প্রেক্ষাগৃহের চাহিদা যে কমতির দিকে তা বুঝতে কারোর বাকি নেই, বেশিরভাগ উচ্চমানের সিনেমাও এখন ওটিটির নৌকায় সওয়ারি করছে।  কারন যেখানে দর্শকের আগ্রহ বেশী সেখানেই আর্থিক লাভ বেশী। তাই ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলি তাঁদের  ব্যবসার পসার জাঁকিয়ে বসেছে, কে কাকে টেক্কা দেবে , কারন তাঁদের সকলের পায়ের তোলার ভিত যে শক্ত হয়ে গেছে, তাঁদের  টলান যে খুব কষ্টসাধ্য সেটা  তাঁদের কাছে জলের চাইতেও স্পষ্ট। তাই এখন শুধু একে অপরকে ছাপিয়ে শিকড়ে ওঠার পালা।