করোনা ভাইরাসের অতিমারীতে বিশ্ব জুড়ে এখন কার্যত নাজেহাল সাধারণ মানুষ। প্রায় বছর খানেক আগে চিনের উহান প্রদেশে প্রথম দেখা মিলেছিল করোনা ভাইরাসের। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত বিশ্ব জুড়ে এই মারণ ভাইরাসের দাপট প্রাণ কেড়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষের। শুধু তাই নয়, মানুষের দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক ছন্দকেই এলোমেলো করে দিয়েছে করোনা ভাইরাস। গুঁড়িয়ে দিয়েছে বহমান জীবনের চেনা আস্বাদ।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পৃথিবীর তাবড় বিজ্ঞানীরা নেমে পড়েছিলেন প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কারের চেষ্টায়। আমেরিকা, রাশিয়া, ইংল্যান্ড, চীন থেকে শুরু করে ভারত- টিকা আবিষ্কারের কাজ শুরু হয়েছিল বিভিন্ন দেশেই। কিন্তু সংক্রমণের প্রথম পর্যায়ে এই মারণ ভাইরাস বারবারই বদলে চলেছিল রূপ। ফলে হয়রান হয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।
তবে করোনা অতিমারীর প্রথম পর্বের সেই কঠিন সময় এখন কিছুটা হলেও পেরিয়ে এসেছে বিশ্ব। না, করোনা সংক্রমণের হার এখনও কমে নি, খুব একটা কমে নি মৃত্যুর সংখ্যাও, তবে বিজ্ঞানী এবং সাধারণ মানুষের মনে আশা জাগিয়ে তৈরি হয়েছে ভ্যাকসিন।

যদিও ভারতের বাজারে এখনও পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক কোনো ভ্যাকসিনের প্রচলন ঘটে নি, তবে খুব শীঘ্রই ভ্যাকসিন আসা নিয়ে আশাবাদী ভারতের চিকিৎসা মহল। বিশ্ব জুড়ে একাধিক টিকার ট্রায়ালে মিলছে সাফল্য, যার ফলে করোনার টিকা যে এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা, তা আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

এখনও পর্যন্ত ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন বা হু (WHO) স্বীকৃত মোট ৫০টি সংস্থা কোভিড ১৯ ভ্যাকসিন প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত আছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশে আছে নানা ছোট বড় সংস্থা। করোনা টিকা বাজারে আনার দৌড়ে এগিয়ে কারা? যে ৫টি সংস্থার টিকা এখনও পর্যন্ত বিশ্বের বাজারে সাড়া জাগাতে পেরেছে, রইল তাদের কথা।
https://www.banglakhabor.in/wp-admin/post.php?post=9150&action=edit
১) অক্সফোর্ডের করোনা টিকা:

ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ড নির্মিত করোনা টিকার নাম অ্যাস্ট্রাজেনেকা (Oxford-Astrazeneca)। যেসমস্ত সংস্থা সবার আগে টিকা তৈরির কাজ শুরু করেছিল অক্সফোর্ডের টিকা তার মধ্যে অন্যতম। এই ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রায় ৯০% কার্যকর বলে দাবি করা হয়। যদিও সম্প্রতি ট্রায়ালে এই ভ্যাকসিনের কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিন ভারতে তৈরি করছে পুণের সিরাম ইনস্টিটিউট। ওই সংস্থার কর্ণধার আদার পুনাওয়ালা ভারতে এই ভ্যাকসিনকে ‘কোভিশিল্ড’ বলে চিহ্নিত করবেন বলে জানিয়েছেন। অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের অন্যতম উল্লেখযোগ্য বিষয় হল এর দাম। বাকি ভ্যাকসিনের চেয়ে এটি তুলনামূলক সস্তা হবে বলেই জানিয়েছেন নির্মাতারা।
২) ফাইজারের করোনা টিকা:

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার বায়োএনটেক (Pfizer BionTech) নির্মিত করোনা ভ্যাকসিনের নাম BNT162b2. বৃহত্তর ট্রায়ালে সাফল্যের জন্য এই টিকা ইতিমধ্যেই আশা জাগিয়েছে মানুষের মনে। এমনকি আমেরিকা থেকে এই টিকার ব্যবহারে সম্মতিও জানানো হয়েছে। এই ভ্যাকসিনের করোনার বিরুদ্ধে কার্যকারিতা ৯০%-এর বেশি বলে দাবি করা হয়েছে ফাইজারের তরফ থেকে। চলতি মাসেই ফাইজারের এই ভ্যাকসিনের বাজারে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। এই ভ্যাকসিন বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন দামে পাওয়া যাবে।
৩) মডার্নার করোনা টিকা:

আমেরিকার অপর ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থা মডার্না (Moderna) । মডার্না টিকা এর পরীক্ষামূলক ট্রায়ালে কার্যকারিতার হারে চমক লাগিয়েছে বিশ্বের স্বাস্থ্য মহলে। মডার্না তাদের টিকায় mRNA (messenger RNA technology) ব্যবহার করেছে, যার ফলে এটি নির্ভরযোগ্য হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমানে মডার্না টিকার তৃতীয় পর্বের ট্রায়াল চলছে। জানা গেছে, প্রায় ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের উপর প্রয়োগ করা হচ্ছে এই টিকা। মডার্না টিকার কার্যকারিতার হার প্রায় ৯৪%। ইতিমধ্যে বিশ্বের তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীদের প্রশংসা কুড়িয়েছে মডার্নার এই টিকা। এই টিকার বিষয়ে প্রথম থেকেই আশাবাদী ছিলেন নির্মাতারা।
৪) ভারতের করোনা টিকা:

করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের দৌড়ে অন্যান্য দেশের সঙ্গে নেমেছে ভারতও। পুণের সিরাম ইনস্টিটিউট অক্সফোর্ডের টিকা বানালেও ভারতের সম্পূর্ণ নিজস্ব টিকা বানাচ্ছে ভারত বায়োটেক সংস্থা। এই টিকার নাম দেওয়া হয়েছে ‘কোভ্যাকসিন’। গত জুলাই মাস থেকে এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হয়েছে। বর্তমানে এই ভ্যাকসিনেরও তৃতীয় পর্বের ট্রায়াল চলছে। এই ভ্যাকসিনের কোনোরকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বলে জানানো হয়েছে ভারত বায়োটেকের তরফ থেকে। প্রাথমিক ভাবে করোনার বিরুদ্ধে কোভ্যাকসিনের কার্যকারিতার হার ৬০% ধরা হয়েছে, তবে সময়ের সাথে সাথে এই হার বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ভারত বায়োটেকের প্রেসিডেন্ট সাই ডি প্রসাদ।
৫) রাশিয়ার করোনা টিকা:

করোনা সংক্রমণের আবহে আগস্ট মাসে সর্বপ্রথম ভ্যাকসিন নির্মাণের কথা ঘোষণা করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল রাশিয়া। এই ভ্যাকসিনের নাম স্পুটনিক ভি (Sputnik V)। রাশিয়ার তরফ থেকে দাবি করা হয়েছিল এই ভ্যাকসিন করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রায় ৯২% কার্যকরী। তবে এখনও পর্যন্ত এই ভ্যাকসিন তৃতীয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পর্বে রয়েছে, তাই ৯০%-এর উপরের এর ঘোষিত কার্যকারিতা এখনই খুব একটা নির্ভরযোগ্য নয়।