কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি দূরত্ব প্রায় 600 কিলোমিটার। ট্রেনে গেলে মোটামুটি 12 ঘণ্টা কমপক্ষে এবং রাস্তা ধরে সেই  দূরত্ব অতিক্রম করতে লেগে যায় প্রায় 12 থেকে 16 ঘন্টা যানবাহনের যানজটের উপর ভিত্তি করে।কিন্তু নতুন যে যানবাহন পদ্ধতির কথা (হাইপার লুপ) আমরা আলোচনা করছি তার মাধ্যমে এটি 45 মিনিটেই  অতিক্রম করা সম্ভব।এই  যানবাহন পদ্ধতির নাম হল হাইপারলুপ। হ্যাঁ, এটা আর দিবা স্বপ্ন নয় | কারণ হাইপারলুপের যাত্রী নিয়ে সফল পরীক্ষা ইতিমধ্যে হয়ে গেছে |

গত ৮ নভেম্বর লাস ভেগাসে ভার্জিন হাইপারলুপের ডেভলুপ পরীক্ষা কেন্দ্রে জস গিগেল ও সারা লুচিয়ান হাইপারলুপে একটি pod বা কক্ষে বসে চারশো মিটার পরীক্ষা মূলক যাত্রা সম্পন্ন করেন মাত্র কয়েক সেকেন্ডে | ঘন্টায় ১৭৩ কিলোমিটার গতিবেগে | এখন এই বেগ ১৭৩ কিমি প্রতি ঘন্টায় হলেও একে বাড়ানো যাবে ১১০০ কিমি প্রতি ঘন্টায় বা তার বেশিতে | এবং ভারতে এই ধরনের পদ্ধতির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার সম্ভাবনা প্রবল যদিও সেটা সময়সাপেক্ষ।যদিও বলে রাখা প্রয়োজন মুম্বাই থেকে পুনে হাইপারলুপের জন্য পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে অনেকাংশই এগিয়ে গেছে। কিন্তু চলুন একবার দেখে নেওয়া যাক কি এই হাইপারলুপ এবং কিভাবে এর ব্যবহার উপযোগিতা পেতে চলেছে ভারতবাসী।

হাইপার লুপ কি?

হাইপারলুপ হলো যান চলাচলের এক নতুন যুগান্তকারী ব্যবস্থা | এতে একটি প্রায় বায়ুশূন্য বড় একটি নলের মধ্য দিয়ে একটি pod বা কক্ষ কে চালানো হয়| এটি রেলের ওপর দিয়ে চললেও এর সঙ্গে লাইন এর যোগযোগ থাকে না | ম্যাগনেটিক লেভিটেসান (magnetic levitation) বা বিদ্যুত-চৌম্বকীয় উত্তোলনের সাহায্যে একে রেলের থেকে একটু উপরে তুলে প্রচন্ড গতিতে চালানো হয় | ম্যাগনেটিক লেভিটেসান কে ছোট কথায় বলা হচ্ছে ম্যাগলেভ | যেহেতু প্রায় বাযুশূন্য নলের মধ্যে দিয়ে একে চালানো হয় তাই সামনে বায়ুর জন্যে কোনো বাধা পায় না| দ্বিতীয়ত লাইনের সঙ্গে কোনো স্পর্শ না থাকায় লাইনের সঙ্গে ঘর্ষণ জনিত কোনো বাধাও একে সহ্য করতে হয় না | ফলে অত্যন্ত কম বিদ্যুত শক্তিতে খুব দ্রুত একে চালানো যায় | যে নলের মধ্য দিয়ে pod টি যাবে সেটি রাখা হবে  মাটির কিছু ওপরে | নলটিও  খুব মজবুত করে বানানো হবে যাতে কোনো আঘাত বা ভূমিকম্পে এটি নষ্ট না হয় |

হাইপার লুপ
চিত্র সৌজন্য smartcitiesworld.net

হাইপার লুপের আইডিয়া বা ধারণা প্রথম দেন স্পেস-এক্স ও টেসলার প্রতিষ্ঠাতা বিখ্যাত প্রযুক্তিবিদ এলন মাস্ক ২০১২ সালে | সেই আইডিয়া নিয়ে পরবর্তী কালে এগিয়ে যায় বিভিন্ন কোম্পানি | তার মধ্যে সবচেয়ে নামকরা হলো চার্লস ব্র্যানসনের ভারজিন হাইপারলুপ ওয়ান |

মুম্বাই পুনে প্রজেক্ট

ভারজিন হাইপারলুপ মহারাষ্ট্র সরকারকে কিছু দিন আগেই feasibility study করে জানায় যে মুম্বাই পুনে যোগযোগ করা যাবে এবং তাতে কত খরচা হতে পারে | কিন্তু মহারাষ্ট্র সরকার সত্যিকার পরীক্ষা কেন্দ্রে এর সফল যাত্রা না হওয়া পর্য্যন্ত এই প্রজেক্টে পুরোপুরি মত দিতে পারছিলেন না |  লাস ভেগাস এর সফল পরীক্ষা মহারাষ্ট্র সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া কে সহজ করে দিল |

প্রস্তাবিত এই প্রজেক্ট করা হবে দুটি অংশ বা ফেজ (phase) এ | প্রথমে ১১ কিমি লম্বা অংশে পরীক্ষামূলক ভাবে কাজ হবে | এতে খরচা হবে  ৫০০ মিলিয়ন ডলার বা এখন কার হিসেবে ৩৭৫০ কোটি টাকা | সেটি সফল হবে শেষ হলে বাকি দ্বিতীয় অংশে কাজ করা হবে | এর জন্যে লাগবে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার বা ৬৭,৫০০ কোটি টাকা | প্রজেক্টের  কাজ আরম্ভ হবে ২০২১ সালে| আশা করা হচ্ছে এই কর্মকান্ডে ১৮ লক্ষ নতুন কর্ম সংস্থান হবে এবং এর জন্যে ৩৬ বিলিয়ন ডলার বা দু লক্ষ্য ৭০ হাজার কোটি টাকার আর্থ সামাজিক উপকার হবে |

মুম্বাই অংশের কাজ হবে মাটির তলায় | এই হাইপার লুপের জন্যে যাত্রা সময় কমে যাবে ও মুম্বাই -পুনের যাত্রাপথের অত্যন্ত বেশি ভিড় হালকা হয়ে  যাবে  | যাত্রা পথে গাড়ির প্রস্তাবিত গতিবেগ হবে ঘন্টায় ৩৬০ কিলোমিটার বা সেকেন্ডে ১০০ মিটার | যাত্রীবাহী এক একটি pod এ থাকবে ২৩ জন যাত্রীর বসার ব্যবস্থা | প্রতি ৩০ সেকেন্ড অন্তর ৬-১০ টি pod ছাড়বে স্টেশন থেকে | দুটি স্টেশন এর মধ্যে কোনো স্টপ থাকবে না | পুরো যাত্রা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সফ্টওয়ারের সাহায্যে নিয়ন্ত্রিত হবে | আশা করা হচ্ছে ৪-৫ বছরের মধ্যে পুরো কাজ সম্পূর্ণ করা যাবে |

প্লেনের তুলনায় সুবিধে

এই যাত্রার খরচও প্লেনের তুলনায় অনেক কম এবং সাধারণ লোকের আয়ত্বের  মধ্যে থাকবে বলা হচ্ছে | প্লেনের তুলনায় এর আরেকটা সুবিধে হচ্ছে যে এটা একেবারে শহরের কেন্দ্রে এসে থামবে | এয়ার পোর্ট সাধারণত শহর থেকে অনেক দুরে থাকে এবং সেখান থেকে মূল শহরে আসতে অনেক সময় ও টাকার ব্যয় হয়|

অন্য প্রজেক্ট

মুম্বাই পুনে ছাড়াও অন্য কয়েকটি রুটে হাইপার লুপের কথা ভাবা হচ্ছে | এর মধ্যে এগিয়ে আছে বেঙ্গালুরুর কেম্পেগৌডা এয়ার পোর্ট থেকে শহরের কেন্দ্র পর্য্যন্ত যোগযোগ | এতে এয়ার পোর্ট থেকে শহরের কেন্দ্রে আসতে সময় লাগবে মাত্র ১০ মিনিট | এর feasibily report করার চুক্তি এর মধ্যেই হয়ে গেছে | এগুলি সফল হবার পর ভারতের অন্য বিভিন্ন শহরের মধ্যে হাইপার লুপ যোগাযোগের পরিকল্পনাও ভারত সরকারের রয়েছে |

ভারতের গর্ব

হাইপার লুপ পৃথিবীর আর কোথাও এখনো তৈরী হয়নি | মুম্বাই পুনেতে তৈরী হলে ভারত প্রথম কয়েকটি দেশের মধ্যে চলে আসবে যেখানে এই উন্নত মানের দ্রুত পরিবহন ব্যবস্থা থাকবে | বন্দে ভারত ও বুলেট ট্রেনের সঙ্গে এটি হবে নবতম সংযোজন |

আরও পড়ুন ঃ

3 COMMENTS