একুশের বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে এখন সরগরম রাজ্য রাজনীতি। তবে শুধু বাংলাতেই নয়, দেশের একাধিক রাজ্যেই এখন চলছে ভোটের মরশুম। বিহারের বিধানসভা নির্বাচনের পর হায়দ্রাবাদেও চলছে পুরো ভোট। নির্বাচনী এই আবহে রাজ্য তথা দেশের রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে সচেতন হওয়া কিন্তু আবশ্যিক। তাই আর দেরী না করে আসুন দেখে নেওয়া যাক ভারতের কেন্দ্র সরকার আর রাজ্য সরকারের ইতিবৃত্ত।


ভারতের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাকে সারা পৃথিবীর মধ্যে বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। গণতন্ত্র অর্থাৎ ভারতের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি,মুখ্যমন্ত্রী অথবা রাজ্যপাল যত রকমের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পদই থাক না কেন, শাসনতন্ত্রের মূল ক্ষমতা আছে ‘গণ’ অর্থাৎ জনগণের হাতেই। ভারতের জনগণ বা সাধারণ মানুষই ভোট দিয়ে মন্ত্রী নির্বাচন করেন, মন্ত্রী যদি দুর্নীতিমূলক কাজ করেন তাহলে তাঁকে ক্ষমতা থেকে অপসারণও করেন জনগণই। তবে ভারতের এই গণতন্ত্র যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো দ্বারা তৈরি।
ভারতীয় গণতন্ত্রের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো
যুক্তরাষ্ট্র বলতে বোঝায় একটি কেন্দ্র সরকার এবং একাধিক রাজ্য সরকারের যুগ্ম তত্ত্বাবধানে এগিয়ে চলে ভারতের শাসন পরিচালনা। সংবিধান অনুযায়ী ভারতে একটি জাতীয় সরকার এবং ২৮টি রাজ্য সরকার আছে। কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে দেশের আইন ও শাসন বিভাগীয় ক্ষমতা বন্টিত আছে। কেন্দ্র ও আঞ্চলিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতার সুষ্ঠু বন্টনই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর মূল বৈশিষ্ট্য। এছাড়া, ভারতের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট পালন করে চলেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
১) কেন্দ্রের ক্ষমতাধীন বিষয়ের তালিকা:
মূল সংবিধানের ২৪৫ থেকে ২৫৫ ধারা পর্যন্ত কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে আইন সংক্রান্ত ক্ষমতার বন্টন উল্লিখিত হয়েছে। কেন্দ্র সরকার মোট ৯৯ টি বিষয়ে আইন প্রণয়নের অধিকারী। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, রেল, ডাক, বিমা, মুদ্রা, যুদ্ধ, শান্তি ইত্যাদি।
২) রাজ্যের ক্ষমতাধীন বিষয়ের তালিকা:
মূল সংবিধানের বর্তমানে রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয় মোট ৬১টি। এগুলি হল পুলিশ, ভূমি, রাস্তাঘাট, কৃষি ইত্যাদি। রাজ্য আইনসভা এই বিষয় গুলির উপর আইন প্রণয়ন, পরিবর্তন বা বাতিল করতে পারে।
৩) যুগ্ম তালিকা:
ভারতীয় সংবিধানে কিছু কিছু বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের যুগ্ম ক্ষমতা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। মোট ৫২টি বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারই আইন প্রণয়নের অধিকারী। এগুলি হল দেওয়ানি ফৌজদারি আইন, বিবাহ, সংবাদপত্র, শিক্ষা। তবে রাজ্য প্রনীত আইনের সঙ্গে কেন্দ্রের বিরোধ বাধলে রাজ্য আইনটি বাতিল হয়ে যায়।


ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র কি কেন্দ্রপ্রবণ?
সংবিধান অনুযায়ী ভারতের শাসনক্ষমতা কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ভাগ করা থাকলেও অনেকেই মনে করেন ভারতের শাসনব্যবস্থা আদতে অতিরিক্ত কেন্দ্র প্রবণ। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন কাঠামোও ব্যাহত হয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কেন এমন মনে হয়?
বস্তুত, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় কেন্দ্র বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী। আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা গুলির ক্ষেত্রে অসম বন্টন চোখে পড়ার মতো। এছাড়া রাষ্ট্রপতি চাইলে জরুরি অবস্থা জারি করে যে কোনো সময় যে কোনো রাজ্যের শাসনক্ষমতা দখল করে নিতে পারেন। আর্থিক বিষয়েও অনেকাংশে রাজ্য নির্ভর করে থাকে কেন্দ্র সরকারের উপর।
সর্বোপরি ভারতে জনগণের একটাই মাত্র নাগরিকত্ব স্বীকৃত হয়। তা হল ভারতবাসী হিসেবে কেন্দ্রীয় নাগরিকত্ব। রাজ্য বাসী হিসেবে আলাদা কোনো নাগরিকত্ব ভারতে পাওয়া যায় না। সচেতন নাগরিক হিসেবে দেশের শাসনব্যবস্থার এই বিষয় গুলি মাথায় রাখা নিতান্ত প্রয়োজন।