লড়াইয়ের ময়দানে দেখা হবে বলে হুঙ্কার ছাড়ছেন। পরক্ষণেই বলছেন, মমতা আমায় তাড়াননি, আমিও দল ছাড়িনি। মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন, সমস্ত সরকারি পদও ছেড়েছেন। কিন্তু বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেননি এখনও। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুভেন্দু অধিকারী যতটা গর্জন করছেন ততটা বর্ষাচ্ছেন না। ফলে তৈরি হচ্ছে ধোঁয়াশা।

trinamool congress tries to split gorkha janamukti morcha
indiatimes.com

শুভেন্দুর সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্কের অবনতি হল কেন?
নন্দীগ্রাম আন্দোলন থেকেই শুভেন্দুর উত্থান। সেই সময় তমলুকে বামপন্থী নেতা লক্ষণ শেঠের দাপটে বাঘে-গরুতে একঘাটে জল খায়। শুভেন্দু তখন বিরোধী শিবিরের সৈনিক। লড়াই করছেন বামেদের বিরুদ্ধে। অধিকারী বাড়ির বড়ছেলের যে বুকের পাটা আছে সেটা তখনই বুঝেছিলেন মমতা। ফলস্বরূপ ২০০৮ সালে শুভেন্দুকে যুব তৃণমূলের সভাপতি করেন তৃণমূল নেত্রী। এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল। তাল কাটল ২০১১ সালে। পরিবর্তনের সরকার ক্ষমতায় আসার পর।


২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে নতুন সংগঠনের ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল যুবা। সভাপতি করা হয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যুব তৃণমূলের পাশাপাশি সমান্তরাল এমন সংগঠন ভূমিষ্ঠ হতেই নড়েচড়ে বসেন শুভেন্দু। ওপর থেকে সেটা বোঝা না গেলেও তলায় তলায় সম্পর্কের অবনতির সেই শুরু। এরপর ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে নন্দীগ্রাম থেকে প্রায় আড়াই লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জেতেন।

কিন্তু তারপরেও শুভেন্দুকে সরিয়ে রাতারাতি যুব তৃণমূলের সভাপতি করে দেওয়া হয় তৎকালীন তৃণমূল নেতা সৌমিত্র খাঁকে। অধিকারী ঘনিষ্ঠরা বলে, এভাবেই ক্ষমতার বৃত্ত থেকে শুভেন্দুকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল তৃণমূল। আর শুভেন্দুর সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্কের অবনতির শেষ পেরেকটা পোঁতা হয়েছে প্রশান্ত কিশোরকে এনে।

mamata suvendu
theweek

তৃণমূলের ‘সেকেন্ড ইন কম্যান্ড’ হওয়ার উচ্চাকাঙ্খা আছে শুভেন্দুর?
পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেন, তৃণমূলের ‘সেকেন্ড ইন কম্যান্ড’ হওয়ার উচ্চাকাঙ্খা আছে অধিকারীদের বড় ছেলের। তাঁদের কথায়, মমতা ছাড়া আর কারও নেতৃত্ব মেনে নিতে রাজি নয় শুভেন্দু। যখন মুকুল রায় তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড ছিলেন তখনও তাঁর সঙ্গে শুভেন্দুর সম্পর্ক ভালো ছিল না। এই মুহূর্তে দলের অঘোষিত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা অভিষেক। তাঁর সঙ্গেও খিটিমিটি লাগছে শুভেন্দুর।

এসব বুঝেই বোধহয় বাঁকুড়ার সভা থেকে মমতা ঘোষণা করেছেন, ‘যখন থাকব না টিম করে দিয়ে যাব। তারা তৃণমূল সামলাবে।’ অর্থাৎ দলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড হওয়ার উচ্চাকাঙ্খা যে শুভেন্দুর আছে সেটা সত্যি। এবং মমতা যে এ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল সেটাও স্পষ্ট। রাজনীতিতে উচ্চাকাঙ্খা অপরাধ নয়। কিন্তু শুভেন্দু চাইলেও দলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড হয়ে ওঠা যে এখনই সম্ভব হচ্ছে না সেটা জলের মতো পরিষ্কার। আর ঠিক এই জায়গা থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে শুভেন্দুর সম্পর্কের অবনতি।

Bengal BJP
flipboard.com

শুভেন্দুকে নিয়ে বিজেপির এত আগ্রহ কেন?
শুভেন্দু শুধু বড় নেতাই নন, তিনি দক্ষ সংগঠকও। একা হাতে তিনি পাঁচ-পাঁচটা জেলার দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। সেই জেলাগুলি তো বটেই, আরও অন্তত ১০টি জেলায় শুভেন্দুর দখল আছে। দাদার অনুগামীর সংখ্যা ছড়িয়ে রয়েছে ১৫ বা ততোধিক জেলায়। পোস্টার, ব্যানারের ধুম সেরকমই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ফলে শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দিলে শাসক দলকে যেমন বড় ধাক্কা দেওয়া যাবে তেমনই একজন দক্ষ সংগঠককে পাবে গেরুয়া শিবির। পাশাপাশি যেসব তৃণমূল নেতা এখনও দলবদল নিয়ে দোলাচলে ভুগছেন তাঁরা যে পদ্মশিবিরে ঝাঁপিয়ে পড়বেন সেটা চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়।

সবচেয়ে বড় ব্যাপার সাধারণ কর্মী সমর্থকদের আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে উঠবে। সঙ্গে রাজ্যবাসীর চোখে তৃণমূলের নাম্বার কাটা যাবে অনেকটা। অর্থাৎ শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দিলে গেরুয়া শিবিরের সোনায় সোহাগা। ফলে অধিকারীদের বড় ছেলেকে নিয়ে পদ্মশিবিরের আগ্রহ ব্যাপক।

Suvendu Adhikari PTI
newindianexpress.com

শুভেন্দু নিজে কি করতে চান?
এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। রাজনীতি সম্ভাবনার খেলা। শুভেন্দুর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা যেমন আছে ঠিক তেমনই নতুন দলও গড়তে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। আবার কংগ্রেসের অনেক নেতা শুভেন্দুর সঙ্গে যোগাযোগ করছেন বলেও খবর ভাসছে বাংলার আকাশে বাতাসে। তবে যাই করুন, শুভেন্দু অস্বাভাবিক দেরি করছেন বলে অভিযোগ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।

তাঁদের মতে, এ যেন একতা কাপূরের সিরিয়াল। বিয়ে হবে সবাই জানে, কিন্তু কবে হবে কেউ জানে না। শুভেন্দুর ব্যাপারটাও অনেকটা সেরকম। গতিপ্রকৃতি বলছে তিনি তৃণমূল ছাড়বেন, কিন্তু কবে? সেটা নিয়েই যত টালবাহানা।
শুভেন্দুর মন্ত্রিত্ব ত্যাগের সঙ্গে অনেকেই ১৯৭০ সালে অজয় মুখোপাধ্যায়ের ইস্তফার প্রসঙ্গ টানছেন। এখন দেখার শুভেন্দু অজয়বাবুর মতো বাংলার রাজনীতিতে দাগ কাটতে পারেন কিনা।