চোখ রাঙাচ্ছে নতুন ভাইরাস – জিকা, ইতিমধ্যেই কেরালায় শুরু হয়েছে প্রকোপ; জানুন বিস্তারিত – লেখায় শিরিন শবনম পারভীন

করোনা ভাইরাসের মারণ ছোবলের এবং তা রোধ করার চেষ্টার মাঝেই নতুন ভাইরাস হিসাবে উদ্ভব হয়েছে জিকা ভাইরাসের।গতকাল,বৃহস্পতিবারে কেরালায় ১৩ জন ব্যক্তির শরীরে এই ভাইরাসের সন্ধান মিলেছে। তিরুবনন্তপুরাম জেলা থেকে পাওয়া সমস্ত নমুনাই পজিটিভ! স্যাম্পলগুলি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি(NIV)তে পাঠানো হয়েছে। মুথরুভূমি সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায়,ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল ২৪ বছরের এক গর্ভবতী মহিলাকে দিয়ে।তিনি জ্বর,মাথাব্যথা এবং ত্বকে লাল দাগ নিয়ে উপস্থিত হলে এই নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছিল।

জিকা ভাইরাসের আদিকথা:

জিকা ভাইরাস ফ্লাভিভাইরাইডি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং ফ্লাভিভাইরাস জিনাসের হওয়ায় এটি ডেঙ্গু,ইয়েলো ফিভার, জাপানিজ এন্সেফেলাইটিস ভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্কিত। ২০১৫ সালে লাতিন আমেরিকায় এই ভাইরাসের প্রকোপ সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট নজর কেড়েছিল।সেই সময়, প্যান আমেরিকান হেল্থ অর্গানাইজেশন আক্রান্ত দেশ এবং অঞ্চলগুলির একটি তালিকা প্রকাশ করে জিকা ভাইরাসের আঞ্চলিক সংক্রমণ সম্পর্কে সচেতন করেন। এই ভাইরাসের মূল নিয়ন্ত্রক হোস্ট ছিল একজাতীয় বাঁদর।মশা-বাঁদর-মশা এই চক্রেই এই রোগ ছড়াতো।মানুষের মধ্যে এই রোগ দুর্লভ ছিল।পরবর্তীতে এই ভাইরাস প্রতিষ্ঠিত ও শক্তিশালী হয় এবং মশা-মানুষ-মশা এই চক্রে এই রোগ ছড়াতে শুরু করে,ঠিক ইয়েলো ফিভার এবং ডেঙ্গুর মত।

রোগ হিসাবে জিকা ভাইরাস:

জিকা ভাইরাস মূলত একটি সংক্রামক রোগ,যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে।এই মশা দিনের বেলায় কামড়ায়।শুধু জিকা নয়,এই এডিস মশাই ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া এবং ইয়েলো ফিভারের জন্যও দায়ী।সবচেয়ে সাংঘাতিক ব্যাপারটি হলো,এই ভাইরাস গর্ভবতী মহিলার মাধ্যমে তাঁর ভ্রুনেও প্রভাব ফেলতে সক্ষম।এর ফলে নবজাতকের দেহে মাইক্রোসেফালি এবং অন্যান্য জন্মগত ত্রুটির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।এ ছাড়াও অন্যান্য জটিলতা,যেমন – নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই সন্তানের জন্ম অথবা গর্ভপাতের সম্ভবনাও হতে পারে এই ভাইরাসের কারণে।ইউনাইটেড স্টেটসের সেন্টারস ফর ডিসিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন(CDC) জানিয়েছে,এই ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি সঙ্গম করলে তাঁর সঙ্গীরও এই রোগ হতে পারে।

জিকা ভাইরাস
bn.wikipedia.org

জিকা ভাইরাসের লক্ষণ:

মশা-ঘটিত এই রোগের লক্ষণ হিসাবে বলা যায় – হালকা বা প্রবল জ্বর,ফুসকুড়ি,চোখ ওঠা বা কনজাংটিভাইটিস,মাসল পেইন এবং গাঁটে গাঁটে ব্যথা,মাথা ব্যথা ইত্যাদি।এই ভাইরাসের উন্মেষপর্ব হলো ৩- ১৪ দিন এবং মানবদেহে এটি ২-৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে,বেশিরভাগ জিকা ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের কোনো রোগলক্ষণ প্রকাশ পায়না।

প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা:

এই ভাইরাস প্রতিরোধের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা বা ভ্যাকসিন এখন অব্দি আবিষ্কৃত হয়নি।২০১৬ সালের মার্চ মাসে ১৮টি কোম্পানি ও ইনস্টিটিউশনে এই ভাইরাস নির্মূল করার জন্য টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা করা হলেও তা এখনও ট্রায়াল পর্বেই আটকে আছে এবং সংস্থার অধিকর্তারা জানিয়েছেন,আগামী ১০ বছরের মধ্যে ভ্যাকসিন মেলার সম্ভবনা রয়েছে। ইউনাইটেড নেশনসের হেল্থ এজেন্সির পরামর্শ,আক্রান্ত ব্যক্তিরা যেন বেশি করে জল এবং তরল আহার গ্রহণ করেন।ব্যথা এবং জ্বরের জন্য তাঁরা সাধারণ জ্বরের ওষুধই ব্যবহার করার কথা বলেছেন।এই ভাইরাসের আক্রমণ থেকে মুক্তি পাবার অন্যতম উপায় হলো মশার কামড় থেকে মুক্তি পাওয়া।প্রয়োজনে দিনের বেলাতেও মশারী ব্যবহার করা যেতে পারে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ,এই রোগ যেহেতু গর্ভবতী মহিলা,শিশু এবং গর্ভধারণে সক্ষম এমন বয়সী মহিলাদের বেশি ক্ষতি করে তাই তাঁদের ক্ষেত্রে যেন বেশি যত্ন নেওয়া হয়।