হাতে আর মাত্র সাড়ে পাঁচ মাস। বেজে গিয়েছে 2021 এর বিধানসভা নির্বাচনের দামামা। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলি তাদের নিজেদের অবস্থানে ঘুঁটি পাকা করার দৌড়ে নেমে পড়েছে। গত নির্বাচনে ১৮ টি আসনে জয়যুক্ত হওয়া বিজেপিই শুধু নয়, বাম থেকে কংগ্রেস প্রত্যেকেই রাজ্য সরকারের প্রতিটি ত্রুটিকে কেন্দ্র করে সরব হয়েছে দিকে দিকে । কাটমানি থেকে রেশন বিভ্রাট, ইমাম থেকে পুরোহিত তোষণ,করোনায় শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য ব্যাবস্থার ভঙ্গুরতা, পরিবহনের অচলাবস্থা থেকে শুরু করে আম্ফানের ক্ষতিপূরণের তছরূপ , ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের দিকে আগেই তোপ দেগেছেন বিরোধীরা । ইদানিং বিভিন্ন উচ্চ ও নিম্ন পর্যায়েরর তৃণমূলী নেতৃত্বের বিজেপি অভিমুখে যাত্রা ও সর্বোপরি তমলুক তৃণমূল বিধায়ক ও বর্ষীয়ান নেতা শুভেন্দু অধিকারীর সর্বশেষ সিদ্ধান্ত কী হবে সেই নিয়ে সরগরম রাজ্য রাজনীতি।

images 2 1
The Economic Times

বাংলার রাজনৈতিক মহলে কান পাতলেই জানা যাবে ঠিক কোন বিষয়গুলি মুখ্যত উঠে আসছে রাজ্য ও বিরোধীদলীয় বিভ্রাটের কেন্দ্রে। বিজেপির আন্দোলন ও তার ওপর পুলিশের লাঠিচার্জকে কটাক্ষ করে বিজেপি জেলা সভাপতি দীলিপ ঘোষ বারংবার প্রশাসনিক ব্যবস্থার অচলাবস্থাকে দায়ী করেছেন । তবে ‘মানুষকে বিভ্রান্তকারী দল’ হিসেবে বিজেপিকে চিহ্নিত করে বাকযুদ্ধে পিছিয়ে নেই তৃণমূল শীর্ষ নেতারাও। ঠিক কী করনীয়? কি বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ? প্রধান কোন পাঁচটি জট মুক্ত হলেই সজীব হবে ঘাসফুল?

দেখে নিন তৃণমূলের সজীবতার 5 উপায়

দলবদলের প্রবণতা :

তৃণমূল
www.anandabazar.com

শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যই কি দলবদল এর প্রবণতা নাকি অন্য কোন প্রলোভন নাকি আবার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব? অর্জুন সিং থেকে সৌমিত্র খাঁ, মুকুল রায় থেকে মিহির গোস্বামী তৃণমূলের বড় থেকে ছোট বিভিন্ন পদাধিকারী নেতৃবৃন্দ ইতিমধ্যেই দল ছেড়ে যোগদান করেছেন গেরুয়া শিবিরে। যাঁরা শিশু তৃণমূলকে মহীরূহে রূপদানের কারিগর, তাঁদের মতবদলের ফল দলের ক্ষুদ্র মাঝারি নেতৃবৃন্দ এবং কর্মী-সমর্থকদের মনে যে ভীতির সঞ্চার করবে, তা অনস্বীকার্য । যদিও রাজ্য সরকারের স্ট্র্যাটেজিস্ট পিকে এ ব্যাপারে সরাসরি মুখ খোলেননি, তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা একে তৃণমূলের আসন্ন বিপদের অগ্রিম সূচনা বলতেও পিছু হটছেন না। তাই এ ব্যাপারে সমঝোতা এবং অন্দরের সমস্যা অন্দরেই মীমাংসা করে নেওয়াই হতে পারে সজীবতার নীতি ।

বিচ্যুতির সংশোধন:

bengal actor bjp 1563462359
India TV news

ক্রমাগত বিরোধী দলগুলির থেকে যে ধরনের অভিযোগ উঠে আসছে রাজ্য সরকারের প্রতি, তা অগ্রাহ্য না করে বা তার প্রতি পাল্টা কটাক্ষ না করে সেগুলির গোড়ায় গিয়ে সংশোধনই হোক তাদের নীতি। ক্রমাগত বাক-যুদ্ধে জড়ানোর ফলে উন্নয়নের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য থেকে কি সরে যাচ্ছে রাজ্য সরকার? অন্তত এমনটাই বিরোধীদের দাবি। নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, নতুন নতুন শব্দবন্ধ খুঁজে পাচ্ছেন রাজ্যের জনগণ, তা সে ‘পোস্তর বড়া’ ই হোক বা ‘প্যারাসুট’, বিতর্ক এখন এড়িয়ে যাওয়াই শ্রেয়। যোগ্য জবাব মুখে নয়, কাজে দেওয়া চাই – এমনটাই বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ।

অধিকারীর অবস্থান:

mamata suvendu
the week

অধিকারী আদৌ অধিকারে আছেন না নেই তা নিয়ে দ্বন্দ্বে বাংলার রাজ্য রাজনীতি। শুভেন্দুর ‘লিফ্টেও উঠিনি, প্যারাস্যুটেও নামিনি’র সূত্র ধরে পাল্টা আক্রমণ করলেন তৃণমূল যুব স্তরের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গোষ্ঠী সংঘাত চরমে ওঠার আগেই মঙ্গলবার রাতে আড়াই ঘণ্টার একটি গোপন বৈঠকে বালিগঞ্জের একটি আবাসনে আলোচনায় বসেন সৌগত রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রশান্ত কিশোর, অভিষেক বন্দোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী। সাংবাদিকদের সৌগত রায় রাতেই স্বস্তির বার্তা দিলেও 14 ঘন্টা পেরোতেই তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে শুভেন্দুর “একসাথে কাজ করা সম্ভব নয়” মেসেজ হতাশ করেছে অনেককেই । দলবদল এর সম্ভাবনার পাশাপাশি নতুন দল গঠনের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকেই । অধীর চৌধুরী তাকে কংগ্রেসে স্বাগত জানাতে তীব্র ইচ্ছুক হলেও কৈলাস বিজয়বর্গীয় শুভেন্দুর পদক্ষেপ নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নন বলেই দাবি করেছেন। এই হেভিওয়েট নেতার সিদ্ধান্ত তৃণমূলের পক্ষে কতটা স্বস্তিদায়ক হয়, এখন সেটাই দেখার।

রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাত :

images 4 2
India Today

দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই সংঘাতে কখনো চিঠি চালাচালি, কখনো টুইট যুদ্ধ, কখনো আইনি হুঁশিয়ারিতে বিধ্বস্ত রাজ্য-রাজ্যপাল সম্পর্ক। রাজ্য সরকার অনেক আগে থেকেই রাজ্যপালকে বিজেপির পক্ষপাত দুষ্ট বললেও সে কথা মানতে নারাজ বিজেপি। অন্যদিকে রাজ্যপাল রাজ্যের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছেন বারংবার যা তৃণমূলকে উত্যক্ত করেছে মর্মে মর্মে । সম্প্রতি কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যপালকে ক্রিমিনাল আখ্যায়িত করার প্রত্যুত্তরে ও সরব হয়েছে বিজেপি। সাংবিধানিক উপায়ে তার বিরুদ্ধে কোনো রকম আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যায় না এমনটাই মনে করাতে চাইছেন তারা এবং অপ্রয়োজনীয় বিতর্কে অংশ না নিয়ে মূল কাজের কথায় ফিরুক তারা , বিরোধীদের দাবি।

প্রকল্পের সঠিক রূপায়ণ:

images 5 2
Asianet News Bangla

সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘দুয়ারে দুয়ারে সরকার’ প্রকল্পের মাধ্যমে অসমাপ্ত এবং অসমভাবে বন্টিত প্রতিটি কর্মসূচিকে সম্পূর্ণ করার আশ্বাস দিয়েছেন। যদিও পাল্টা বিজেপি ‘আর নয় অন্যায়’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিবাদ শুরু করেছে, এই দৌড়ে এখন কে শেষ হাসি হাসে সেটাই দেখতে উৎসুক বঙ্গবাসী। যুযুধান দু’দলেরই একটিমাত্র বক্তব্য একদম স্পষ্ট, ” মানুষ বিচার করবে।”

এখন দেখার এই পাঁচটি জট নির্মূল করে আগের অবস্থানে অনড় থাকবে মা মাটি মানুষের সরকার নাকি মুকুট ছিনিয়ে নেবে ভারতীয় জনতার সরকার ।