নিজস্ব সংবাদদাতা- বিধানসভা ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে দলবদলের মরসুম শুরু হয়েছে। একের পর এক রাজনৈতিক নেতা আগের দল ছেড়ে অন্য রাজনৈতিক দলে যোগ দিচ্ছেন। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া হেভিওয়েট নেতার সংখ্যা একটু হলেও যেন বেশি। ডিসেম্বরের ১৯ তারিখ বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। মুকুল রায়ের পর এতো হাইপ্রোফাইল আর কোনো নেতা তৃণমূল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে এরমধ্যে সামিল হননি। এবার মুকুল-শুভেন্দুর মতো না হলেও যথেষ্ট আলোচিত এবং হাওড়া জেলার অত্যন্ত প্রভাবশালী তরুণ তৃণমূল নেতা ও সদর প্রাক্তন মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়‌ও বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন।

তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার স্রোতের সামিল হলেও এক অন্যরকম ধারা তৈরির চেষ্টা করছেন রাজীব। শুভেন্দু অধিকারী সহ অন্যান্য নেতারা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। কিন্তু রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় উল্টো পথে হেঁটে দিল্লির বিমান ধরার আগে অব্দি বলে গেলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার নেত্রী! আমি তাকে আজও শ্রদ্ধা করি।”

বঙ্গ রাজনীতিতে এই মুহূর্তে দলবদলের পাশাপাশি কুকথার স্রোত বয়ে চলেছে। একের পর এক শীর্ষস্তরের রাজনৈতিক নেতারা অন্যদের বিরুদ্ধে কেবলমাত্র দুর্নীতির অভিযোগ‌ তুলেই থামছেন না, ব্যক্তি আক্রমণের সামিল হচ্ছেন তারা। এমনকি তুই তোকারি বা প্রকাশ্য মঞ্চে দাঁড়িয়ে গালিগালাজ করা রোজকার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেখানে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে তৃণমূলের দুর্নীতি এবং অশান্তি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এতদিন ওই দলে ছিলাম। ছেড়ে দিন, আমি এই বিষয়ে কিছু বলব না। কখনও কাউকে ব্যক্তি আক্রমণ করি নি, আজও সেটা উচিত নয়।”

“আমি দলেই থেকে যেতে চেয়েছিলাম। দলীয় নেতৃত্ব বা কোনো কর্মীর বিরুদ্ধে একটিও খারাপ কথা না বলা সত্ত্বেও মন্ত্রী থাকাকালেই আমার বিরুদ্ধে কয়েকজন সহকর্মী নোংরা কথা বলতে শুরু করে। এমনকি আমার পরিবারের লোকজনদের বিরুদ্ধেও বাজে বাজে কথা বলা হয়েছে। গোটা ঘটনাটি আমাকে খুব আহত করে। সবচেয়ে কষ্ট পেয়েছি যারা এসব বলেছিলেন তাদের বিন্দুমাত্র সতর্ক পর্যন্ত করেননি দলের নেতৃত্ব। প্রচণ্ড মানসিক কষ্টে ছিলাম। মানুষের কাজ করতে চাই, তাই একটা বড় ছাতার তলায় সামিল হওয়া দরকার”, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তিনি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি পুরানো দলের কারোর সম্বন্ধেই যে আলাদা করে কিছু বলবেন না সেটাও পরিষ্কার করে দেন ডোমজুড়ের এই সদ্য প্রাক্তন বিধায়ক।

রাজনৈতিক মহলের একাংশের ধারণা স্বচ্ছ ভাবমূর্তির এই তরুণ নেতা রাজ্য রাজনীতিতে এক অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করলেন। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও বলেছেন, “রাজনীতিতে শিষ্টাচার থাকা উচিত”। অবশ্য একাংশ মনে করছেন পুরোটাই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিনয়। তার আগের দলের সমর্থকদের মন জয় করতেই তিনি এই ধরনের কথাবার্তা বলছেন। শোনা যাচ্ছে বিজেপি সুবক্তা ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির এই নেতাকে সামনে তুলে ধরতে পারে।