“পিসিওডি বা পিসিওএস” এই সম্পর্কে অনেকের সাধারণ জ্ঞান থাকা তো দূরের কথা অনেকেই জানেন না এটি কি। এই সময়ে দাঁড়িয়ে পিসিওডি বা পিসিওএস খুবই সাধারণ একটি বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। পাঁচ জন মহিলার মধ্যে অন্তত তিন জন মহিলা এই সমস্যার সম্মুখীন হন। এই সমস্যা গোড়া থেকে দূর করার কোনো সঠিক উপায় না থাকলেও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু নিরাময়ের উপায় রয়েছে। তবে নিরাময় জানার আগে আমাদের পিসিওডি বা পিসিওএস এর সম্পর্কে একটি সঠিক ধারণা তৈরী করতে হবে। তবে আর দেরি না করে চলুন জেনে নি পিসিওডি বা পিসিওএস আসলে কি।
পিসিওডি বা পিসিওএস আসলে কি ?
পিসিওডি বা পিসিওএস পুরো নাম হল পলিসিস্টিক ওভারি ডিসিস বা পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রম। পিসিওডি বা পিসিওএস আসলে বিশেষত মহিলাদের হরমোনাল ডিসব্যালেন্সের কারনে হয়ে থাকে। শরীরে থাকা হরমোন ডিসব্যালেন্সের কারনে মহিলাদের ওভারিতে ছোট ছোট গোলাকৃতির সিস্ট বা ক্যাপসুলের মতো দেখতে এক ধরনের থলির সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে এই থলির পরিমান ওভারিতে বাড়তে থাকে এবং মহিলাদের শরীরে নানারকম সমস্যার সৃষ্টি হতে থাকে। যার মধ্যে ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড অনিয়মিত হওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি প্রধান সমস্যা। এছাড়াও অত্যাধিক ওজন বৃদ্ধি, মুখে ব্রণ, মুড্ সুইংস, ডিপ্রেশন প্রভৃতি সমস্যাও দেখতে পাওয়া যায়।
অনেক ক্ষত্রে দেখা যায় পিসিওডি বা পিসিওএস বংশ পরম্পরায় চলতে থাকে। ইদানিং পরিবেশ দূষণের কারনেও এই সমস্যার বাড়বাড়ন্ত দেখা যাচ্ছে। পাঁচ জন মহিলার মধ্যে গড়ে তিন জন পিসিওডি বা পিসিওএস সমস্যায় ভুক্তভোগী। ডাক্তারের মতে স্ট্রেস বা চিন্তা বৃদ্ধির কারণেও মহিলাদের মধ্যে পিসিওডি বা পিসিওএস এর সমস্যা বাড়ছে। যার ফলে মহিলাদের সন্তানধারনের সময় অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
তাহলে বোঝা গেল পিসিওডি বা পিসিওএস আসলে কি এবং এটি কেন হয়ে থাকে। তবে শুধু এটি কি এবং এটি কি কারনে হয় জানলে চলবে না। এটি নিরাময়ের ব্যাপারেও জানতে হবে। তাহলে চলুন আর দেরি না করে জেনে নিন এটি নিরাময়ে ডাক্তারের পরামর্শ।
পিসিওডি বা পিসিওএস এর কিছু লক্ষনঃ
কিছু কিছু লক্ষন দেখে সহজেই বোঝা যেতে পারে যে আপনি বা আপনার চেনা পরিচিত কেউ পিসিওডি বা পিসিওএস এর সমস্যায় পড়েছেন। লক্ষন গুলি হল –
- ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড অনিয়মিত হওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া।
- অত্যাধিক ওজন বৃদ্ধি।
- মুখে ব্রণ, দাগ এর বৃদ্ধি।
- অত্যাধিক পরিমানে মুড্ সুইংস।
- হুট্ হাট ডিপ্রেশনে চলে যাওয়া।
- শরীরে অত্যাধিক পরিমানে চুলের বৃদ্ধি।
পিসিওডি বা পিসিওএস নিরাময়ে চিকিৎসকের পরামর্শঃ
এই সমস্ত লক্ষন গুলি দেখতে পেলে বুঝবেন যে পিসিওডি বা পিসিওএস এর সমস্যায় পড়েছেন। এবার এই সমস্যার কিছু নিরাময় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। ডাক্তারদের মতে পিসিওডি বা পিসিওএস পুরোপুরি নিরাময় হওয়া সম্ভব নয়। কেন না হরমোনাল ডিসব্যালেন্স থেকে এই সমস্যার উৎপত্তি তাই এই সমস্যা থেকে চিরকালের মতো রেহাই পাওয়া এক কথায় অসম্ভব বলা চলে। তবে ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী এই সমস্যা নিরাময়ের কিছু উপায় রয়েছে যেগুলি সঠিক ভাবে পালন করতে পারলে পিসিওডি বা পিসিওএস এর থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাওয়া যেতে পারে।
১) স্বাস্থ্য পর্যালোচনা-
পিসিওডি বা পিসিওএস এর ক্ষেত্রে ভালোমতো শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে দেখভাল করতে হবে। নিয়মিত শরীরকে একটিভ রাখতে হবে। নিয়মিত এক্সসাইজ, যোগ ব্যায়াম করতে হবে যার ফলে শরীরের অঙ্গ প্রতঙ্গ গুলি একটিভ থাকতে পারে। পিসিওডি বা পিসিওএস সমস্যা থেকে রেহাই পাবার জন্য শরীরের দেখভাল করা অন্তত আবশ্যক। শুধুমাত্র একটিভ নয়, ফিট থাকাটাও অতন্ত জরুরি।
২) খাদ্যা অভ্যাস-
পিসিওডি বা পিসিওএস এর ক্ষেত্রে নিজের খাদ্যা অভ্যাস ঠিক করতে হবে। খাদ্যা অভ্যাস ঠিক রাখা অতন্ত জুরুরি কেননা উল্টো পাল্টা খাওয়ার কারণেও আমাদের শরীরে অনেক রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। সঠিক সময়ে সঠিক পরিমানে খাবার গ্রহণ করা খুবই প্রয়োজন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খাবারের তালিকায় নিয়মিত ফল,প্রোটিন জাতীয় খাদ্য রাখতে হবে। বাইরের খাবার পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। দরকার পড়লে একটি ডায়েট চার্ট মেইনটেইন করতে হবে।
৩) ওজন কন্ট্রোলে রাখতে হবে-
কন্ট্রোলে এর ক্ষেত্রে প্রধানত ওজন কন্ট্রোলে রাখা অতন্ত আবশ্যক একটি বিষয়। সাধারণ ক্ষত্রে দেখা যায় পিসিওডি বা পিসিওএস এ ভুক্তভুগী মহিলারা নিজের শরীরের ওজন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকেন না। সঠিক খাদ্যা অভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। যার ফলে ওজন কন্ট্রোলে থাকে।
৪) ওষুধপত্র ঠিকমতো নিতে হবে-
পিসিওডি বা পিসিওএস এর ক্ষত্রে শুধুমাত্র খাদ্যা অভ্যাস বা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখলেই চলে না, সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ মতো নিয়মিত ওষুধপত্র নিতে হবে। সাধারণত পিসিওডি বা পিসিওএস এর থেকে ডাক্তারের সঠিক পরামর্শ ছাড়া মুক্তি পাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই জন্য সবার আগে একটি ভালো স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া অতন্ত জরুরি।
৫) মানসিক স্বাস্থ্য দেখভাল করতে হবে-
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় পিসিওডি বা পিসিওএসে ভুক্তভুগী অধিকাংশ মহিলারা মানসিক অবসাদে ভোগেন। তাদের মধ্যে যে শারীরিক পরিবর্তন ঘটে তার ফলে তারা মানসিক ভাবে কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন। সাথে সাথেই পারিপার্শ্বিক অন্যান্য সমস্যার সমাধান করতে করতেও মানসিকভাবে ভেঙে পরেন। এই সময়ে তার পরিবার ও প্রিয়জনদের উচিত তাকে সঠিক পরামর্শ দেওয়া এবং তাকে যথাসম্ভব সাহায্য করা।
তাহলে আশাকরি কিছুটা হলেও আপনারা পিসিওডি বা পিসিওএস এর সম্পর্কে অবগত হলেন। যদি আপনার পরিবারের কোনো মহিলা সদস্য বা আপনার বান্ধবী বা আপনার চেনাপরিচিত কোনো ব্যাক্তি এই সমস্যায় পরে থাকেন তাহলে তাকে যথাসম্ভব পরামর্শ দেবেন এবং তার মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখবেন। কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন যে আপনি আপনার চেনা পরিচিত কাউকে এই বিষয়ে কখনো সাহায্য করেছেন কিনা এবং আপনার এই বিষয় সম্পর্কে জেনে কেমন লাগলো।