বছর শেষ হতে চলল, আর হাতে গোনা মাত্র কয়েকটা দিন বাকি তার পরই একটা নতুন বছরের সূচনা। তবে তার আগে আছে এক বিরাট উৎসব। হ্যাঁ আপনি ঠিকই ধরেছেন আমি বড়দিনের কথাই বলছি। খ্রিস্ট ধ্রর্মের এই ক্রিসমাস তথা বড়দিন কেবল মাত্র খ্রিস্ট ধর্মবলম্বীদের জন্য হলেও এই উৎসবে মেতে ওঠে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে গোটা বিশ্বের মানুষ।

Christmas is HERE — Newman Center at Oregon State
Osu newman Center

এই উৎসব মূলত যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন হিসাবে পালন করা হয়। এদিন কেকে কাটা হয়, আলো দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি দিয়ে চারদিক সুন্দর করে সাজানো হয় সব মিলিয়ে একটা সাজ সাজ রব। আদিযুগীয় খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুসারে, এই তারিখের ঠিক নয় মাস আগে মেরির গর্ভে আসেন প্রভু যিশু।  সম্ভবত, এই হিসাব অনুসারেই ২৫ ডিসেম্বর তারিখটিকে যিশুর জন্মতারিখ হিসাবে ধরা হয়। উপহার প্রদান, সংগীত, বড়দিনের কার্ড বিনিময়, গির্জায় ধর্মোপাসনা, ভোজ, আলোকসজ্জা, মালা, মিসলটো, যিশুর জন্মদৃশ্য, এবং হলি সমন্বিত এক বিশেষ ধরনের সাজসজ্জার প্রদর্শনী আধুনিককালে বড়দিন উৎসব উদযাপনের প্রধান অঙ্গ।

New Christmas Cards Combine Middle East War Scenes with Traditional  Nativity - Christian News Headlines
Christian Headlines

আর এই ক্রিসমাসের এই অন্যতম আকর্ষণ হল লাল পোশাক, লাল টুপি পরা সাদা ধবধবে দাড়ি-ভ্রু-ওয়ালা সান্তা ক্লজ। কিন্তু কি জানেন , কে এই সান্তা ক্লজ ? সান্তা ক্লজের আবির্ভাব ঘটে খ্রিষ্টীয় ৩ শতকে সেন্ট নিকোলাস নামে এক সন্ন্যাসীকে কেন্দ্র করে । ২৮০ নাগাদ এশিয়া মাইন যা, বর্তমানে তুরস্কের পাতারা-এ তাঁর জন্ম হয়েছিল বলে মনে করা হয়। তাঁর অসম্ভব সততা এবং দয়াশীলতার জন্য তাঁকে সবাই খুব পছন্দ করত। বিপুল সম্পদের অধিকারী এই ব্যক্তি সবসময় গরীব ও অসহায় মানুষদের সাহায্য করতেন।

যেসব দেশে ক্রিসমাস উদযাপন নিষিদ্ধ
24 live Newspaper

শোনা যায়, তিনি একবার ৩টি মেয়েকে ক্রীতদাস হিসাবে  বিক্রি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন এবং তাদের বিয়ের যাবতীয় খরচ বহন করেছিলেন। সেন্ট নিকোলাসের এইরূপ দানশীল-উদার মনোভাবের খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে তিনি মানুষের রক্ষক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। রেনেসাঁ পর্যন্ত ইউরোপে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন সেন্ট নিকোলাস ওরফে “সান্তা ক্লজ” ।

Santa's Secrets: Science Weighs In
Forbes

ডাচ ভাষায় সেন্ট নিকোলাসকে সিন্টার ক্লাস (সেন্টনিকোলাসের সংক্ষিপ্ত রূপ) নামে ডাকা হতো। এই সিন্টার ক্লাস থেকেই  উত্‍পত্তি হয়েছে সান্তা ক্লজ নামটির। ক্রিসমাসে বিশেষ করে কচিকাচাদেরকে উপহার দেওয়ার রীতি শুরু হয় উনিশশো শতকের গোড়ার দিক থেকে। ১৮২০ সাল থেকে ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে বিভিন্ন দোকানে দেওয়া হত বিজ্ঞাপন, পত্রিকায় বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হত যেখানে সান্তা ক্লজের ছবিও ছাপা হতো। ১৮৪১ সালে ফিলাডেলফিয়ার একটি দোকানে একটি মানুষরূপী সান্তা ক্লজ তৈরি করা হয় যা দেখতে ভিড়  জমিয়েছিল প্রায় কয়েক হাজার শিশু। আর এরপর থেকেই শিশু এবং তাদের বাবা-মায়েদের আকৃষ্ট করতে দোকানে দোকানে জীবন্ত সান্তা ক্লজ সাজানো হয়।

Should parents lie to kids about Santa Claus? We asked the experts. |  Popular Science
popular Science

প্রসঙ্গত, আজকের সান্তা ক্লজের যে রূপ চোখে পড়ে, তা কিন্তু এসেছে,” An Account of a Visit from St. Nicholas”- শীর্ষক একটি কবিতা থেকে। ১৮২২ সালে “ক্লেমেন্ট ক্লার্ক মুর” নামে একজন ক্রিসমাস  উপলক্ষ্যে এই কবিতাটি লেখেন। লাল পোশাক, কালো বেল্ট সাদা বর্ডার দেওয়া লাল টুপি পরা সাদা দাড়িওয়ালা এক ব্যক্তি ৮টি হরিণ টানা স্লেজ গাড়িতে উড়ে উড়ে ছোটদের বাড়ি গিয়ে উপহার বিতরণ করছে- এমনই এক চিত্র ফুটে উঠেছিল তার সেই কবিতায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই কবিতা খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।

Best Places To Visit In Tamilnadu During Christmas And New Year – Tamilnadu  Tourism
Tamilnadu Tourism

তবে সান্তা ক্লজের কাছ থেকে শুধু গিফ্ট পাওয়াই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় শিশুরা সান্তার জন্যে এক গ্লাস দুধ ও প্লেটে বিস্কুট সাজিয়ে আলাদা করে রেখে দেয়। ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ায় সান্তা ক্লজকে দেওয়া হয় বিয়ার অথবা মিষ্টি পিঠে। ডেনমার্ক, নরওয়ে ও সুইডেনে দেওয়া হয় পায়েস ও দারুচিনি। আয়ারল্যান্ডে সান্তার জন্যে রাখা হয় ক্রিসমাসের বিশেষ পুডিং ও দুধ। এইভাবে সারা বিশ্ব জুড়ে ক্রিসমাস ট্রি, রঙিন আলো, রংবেরঙের উপহারে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে ক্রিসমাস উৎসব।