রাজ্যে চলছে বিধানসভার ভোট। এবারের বিধানসভা ভোটে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে লড়াই মুখ বনাম দলের। শুভেন্দু অধিকারী থেকে রাজীব ব্যানার্জি- রাজ্যের এমন বেশ কয়েকজন নেতা-মন্ত্রী যারা দলবদল করার পর এমন সমীকরণ দাঁড়িয়েছে যে দল বনাম মুখ জিনিসটা বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখে নেওয়া যাক রাজ্যের প্রাক্তন-বর্তমান বেশ কয়েকজন নেতা-নেত্রীদের কথা যারা ভোটে জেতেন বা জিততেন দলের চেয়েও বেশি নিজেদের ক্যারিশ্মায়

১) মমতা ব্যানার্জি
এখনও পর্যন্ত জীবনে একবারই ভোটে হেরেছেন। সেটাও একেবারে তাঁর কেরিয়ারে গোড়ার দিকে। এর পর তাঁকে হাজার চেষ্টার পরেও কেউ হারানো তো দূরে থাক, ধারেকাছে আসতে পারেনি। ২০০৪ লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল জিতেছিল মাত্র একটা আসন, সেটা ছিলেন মমতা। বিধানসভা ভোটে দু বার দাঁড়িয়েই দুবার জয়। দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রেও জেতাটা অভ্যাসে পরিণত করেছিলেন। এবার রাজ্যে বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রাম থেকে দাঁড়িয়েছেন। ভোটের ফল ২ মে। তবে এখন থেকেই বলা যায় বাংলায় মমতা ব্যানার্জির ব্যক্তি ক্যারিশ্মা প্রশ্নাতীত।

আরও পড়ুন: চার দফায় ১৩৫ কেন্দ্রে ভোট শেষ, কোন দিকে ঝুঁকে রাজ্যে

২) গনি খান চৌধুরী

মালদার শেষ কথা। জীবিত অবস্থাতে তো বটেই বরকত দা-র সব কথায় মালদা সায় দিত। ১৯৫৭-৭২ থেকে টানা চারবার বিধানসভায় গিয়েছেন ভোটে জিতে। রাজ্যের মন্ত্রীও ছিলেন ১৯৭২-৭৭-এ। এরপর ১৯৮০ সালে মালদা লোকসভা কেন্দ্র থেকে সেই যে জেতা শুরু করেন, আর কখনও হারেননি। টানা আটবার রেকর্ড ভোটে জিতে এসেছেন মালদা থেকে। ইন্দিরা গান্ধীর মন্ত্রিসভায় রেলমন্ত্রী ছিলেন। তার হাত ধরেই কলকাতা মেট্রো ও সার্কুলার রেল হয়। মালদাতে তো রেলব্যবস্থার উন্নতি ঘটান। মজার কথা মৃত্যুর এত বছর পরেও তাঁর নামেই মালদায় এখন ভোট হয়, এবং তাঁর আত্মীয়রা জেতেন। গণি খান হল ভোটে ব্যক্তি ম্যাজিকের সেরা উদাহরণ।

৩) অধীর চৌধুরী
বহরমপুর বেতাজ বাদশা। ১৯৯১ সালে নবগ্রামে বিধানসভায় ভোটের দিন প্রার্থী হয়ে সিপিএমের হাতে মার খেয়েছিলেন। অল্পের জন্য সেই ভোটে হারের পর শপথ নিয়েছিলেন, আর কোনওদিন হারবেন না। বর্তমানে রাজ্যে কংগ্রেসের মুখ অধীর চৌধুরী সে কথা রেখেছেন। ১৯৯৬ বিধানসভায় নবগ্রাম থেকে জেতার পর ১৯৯৯ লোকসভায় সেই যে বহরমপুর থেকে ভোটে দাঁড়িয়েছেন, জেতাটা অভ্যাসে পরিণত করেছেন। বহরমপুর কেন্দ্রে টানা ৫ বার জেতার রেকর্ড গড়েছেন। বাম আমলে একা গড় রক্ষা করে জিতেছেন, আবার দিদির চরম সুসময়েও জিতেছেন, রাজ্যে বিজেপি-র উত্থানের মাঝেও জিতেছেন। অধীর ম্যাজিক এখানেই।

৪) সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়
তিনিই ছিলেন বাংলা থেকে সিপিএমের টিকিটে জেতা প্রথম সাংসদ। ১৯৭১ লোকসভা ভোটে বর্ধমান কেন্দ্রে থেকে জিতেছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। মোট ১০ বার সাংসদ হয়েছিলেন। জীবনে একবারই মাত্র ভোটে হেরেছিলেন। সেটা ছিল ১৯৮৪ যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে। তবে ১৯৮৫ উপনির্বাচন থেকে ২০০৪ লোকসভা ভোটে বোলপুর কেন্দ্রে টানা জিতেছেন। বোলপুরে মোট ৭বার লোকসভা ভোটে জিতেছিলেন। বোলপুর সেসময় সিপিএম শক্ত গড় ছিল ঠিক, কিন্তু তার মধ্যে লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের ব্যক্তি ক্যারিশ্মাও অনেকটা ছিল। কমিউনিস্ট দলে থেকে ব্যক্তি ক্যারিশ্মার রাজনীতি খুবই কঠিন। তবু সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ব্যতিক্রম।

৫) ইন্দ্রজিৎ গুপ্ত
দেশের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। লোকসভায় সবচেয়ে বেশিদিন সাংসদ থাকার রেকর্ড আছে তাঁর। সিপিআইয়ের হয়ে ভোটে লড়ে লোকসভায় মোট ১১বার জেতেন। হ্যাঁ, ১১ বার। একবারই মাত্র ভোটে হেরেছিলেন। সেটা ছিল এমার্জেন্সি সময়কালে, ১৯৭৭ সালে অশোক দত্তের কাছে। ১৯৬২ লোকসভা ভোটে জিতেছিলেন কলকাতা দক্ষিণ-পশ্চিম কেন্দ্রে। এরপর পঞ্চম ও ষষ্ঠ লোকসভা ভোটে জেতেন আলিপুর কেন্দ্র থেকে। ১৯৮০-৮৯ পর্যন্ত ছিলেন বসিরহাটের সাংসদ। ১৯৮৯ লোকসভা ভোট থেকে যতদিন বেঁচেছিলেন মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে টানা জিতে আসেন। মেদিনীপুর লোকসভায় জেতেন টানা পাঁচবার।

৬) প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি

সবার কাছের প্রিয় দা। ভোটে জেতাটা জিতল অভ্যাসের মত। ১৯৭১ লোকসভা ভোটে দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্র থেকে প্রথম জয়। এরপর ১৯৮৪-১৯৯৬-এর মাঝে হাওড়া লোকসভা কেন্দ্র থেকে টানা চারবার। ১৯৯৯ থেকে আবার রায়গঞ্জ কেন্দ্রে জিততে শুরু করেন। প্রিয় দা-র ব্যক্তি ক্যারিশ্মায় ছিল আলাদা।