নিজস্ব সংবাদদাতা: রাজ্য বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমতি ছাড়াই আজ সকালে গ্রেফতার রাজ্যের দুই হেভিওয়েট মন্ত্রী ও এক বিধায়ক। অভিযোগ নারদ কাণ্ডে জড়িত ছিলেন তাঁরা। সোমবার মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং সুব্রত মুখোপাধ্যায় এবং কামারহাটির বিধায়ক মদন মিত্রকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। পাশাপশি রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা শহরের মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কেও গ্রেফতার করা হয়েছে এদিন সকালে।

যদিও এদিন সন্ধ্যায় দীর্ঘক্ষণ শুনানি চলার পর প্রত্যেককেই জামিন দিয়েছে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত। এই ঘটনাটি নিয়ে ঠিক কী ভাবছে রাজ্যের বুদ্ধিজীবী মহল?

চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন মজুমদার এই গ্রেফতারি প্রসঙ্গে বলেছেন, “দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হল একটা প্রতিহিংসামূলক পন্থা নিয়ে এই বিজেপি সরকার চেষ্টা করছে যাঁরা সর্বতভাবে প্রতিবাদী, তাঁদের কণ্ঠরোধ করতে। রাজ্যের বিধানসভার স্পিকারের অনুমতি ছাড়া বিধায়কদের গ্রেফতার করা যায় না। সেই ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। রীতিমত ‘পদ্মপাল’ হিসেবেই কাজ করছেন রাজ্যপাল। ‘পদ্মপাল’ হিসেবেই অনুমতি দিয়েছেন এই কাজে। এটা করা যায় না। এখনও যদি সাধারণ মানুষ কেন্দ্র থেকে ওই নোংরা দলকে সরাতে না পারে, তাহলে ভারতের ভবিষ্যত বড় অন্ধকার।”

ইতিহাসবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি বলেছেন, “এই দেশে রীতিমত স্বৈরাচার চলছে। বিপুল জনমতের বিরুদ্ধে গিয়ে এই ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে বিজেপি। তাঁরা জানেন না এই কাজের জেরে ৭৫টা আসনও শূন্য হয়ে যেতে পারে। ভোটে হেরে বিজেপি এই ধরনের কাজ করছে। রাজ্যপালকে এজেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখন তো আইন, প্রশাসন সবকিছুকেই স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।”

অধ্যাপক মিরাতুন নাহার বলেছেন, “বর্তমান রাজনৈতিক জগতে যে কাণ্ডটি ঘটেছে, এটি নিতান্তই রাজনৈতিক কৌশল। দুর্নীতির সঙ্গে যদি এই নেতৃত্বরা সত্যিই যুক্ত থাকেন, তাহলে অবশ্যই ফয়সালা চাইব। তাঁদের শাস্তি চাইব। তখন এই গ্রেফতারি মান্যতা পাবে। কিন্তু প্রশ্ন হল নতুন সরকার গঠনের সময় যখন মন্ত্রী এবং নেতারা নিজেদের দায়িত্ব নিতে শুরু করেছেন, তখন সিবিআই তৎপর হল কেন? এর আগে ঘটনাটি ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল। আবার এই সময়টাকে বাছা হল কেন? আমি মনে করি এর পিছনে রয়েছে রাজনৈতিক অভিসন্ধি। খুবই দুঃখজনক।”

নাট্যকার-অভিনেতা কৌশিক সেন এই গ্রেফতারি প্রসঙ্গে তুমুল ক্ষোভপ্রকাশ করে বলেছেন, “আমার মনে হয় আইনই শেষ কথা বলবে। কিন্তু যে সময় মন্ত্রী এবং নেতাদের গ্রেফতার করা হল সেটা ভাবাচ্ছে। এই সময়ের আগে ও পরে যে যে ঘটনাগুলি ঘটেছে, সেটার কথা মাথায় রাখলে একটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার প্রশ্নও যে উঠে আসছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। শোভন চট্টোপাধ্যায় যদি বিজেপি-তে থেকে যেতেন তাহলে তাঁর নাম আদৌ থাকত? কিংবা মুকুল রায় বা শুভেন্দু অধিকারীর নাম কেন নেই, এই ধরনের প্রশ্ন উঠবেই। রাজ্যপাল থেকে শুরু করে বিজেপি-র সব নেতারা একটা নতুন তৈরি হওয়া সরকারের পিছনে যেভাবে লেগে পড়েছে, এই করোনা মহামারীর সময়, সেটা সকলেই দেখতে পাচ্ছে।”