নিজস্ব সংবাদদাতা: ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের সময় তাঁর স্বামী বিজেপি নেতা সৌমিত্র খাঁ আইনি জটিলতায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। সেই সময় তৃণমূলের দাপুটে কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে একাই ‘বাঘিনী’ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন স্ত্রী সুজাতা মণ্ডল খাঁ। উঁচিয়ে রাখা তর্জনী, গলার জোরে কোথাও ভয়ের লেশমাত্র ছিল না। কিন্তু ২০২১-এর বিধানসভাতেই দেখা গেল সম্পূর্ণ অন্য ছবি। আজ তাঁর ঘর ভেঙেছে। বদলে গিয়েছে রাজনৈতিক পরিচয়ও। আজ সুজাতা মন্ডল বিজেপি নয়, আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী। আর সেখানেই দিনভর গেরুয়া সমর্থকদের দাপটের কাছে যেন টিকতেই পারলেন না তিনি। খেলেন মারও।

গতকাল, তৃতীয় দফা নির্বাচনের দিন সকালে প্রথমে আরামবাগের আকান্দি গ্রামে আক্রান্ত হন সুজাতা মণ্ডল৷ তাঁর মাথায় বাঁশ দিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে গ্রামবাসীদের একাংশের বিরুদ্ধে৷ সুজাতাকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন তাঁর দেহরক্ষীও৷ এরপর ক্ষেতের উপর দিয়ে কোনোক্রমে দৌড়ে পালিয়ে প্রাণ বাঁচান তৃণমূল প্রার্থী৷ সুজাতার অবশ্য অভিযোগ, তাঁকে প্রাণে মারার চেষ্টা করেছিল বিজেপি৷ গ্রামবাসীদের পাল্টা অভিযোগ ছিল, সুজাতাই প্রথমে গ্রামে ঢুকে বিজেপি সমর্থকদের মারধর করেন। এই ঘটনায় অবশ্য পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷

এর পর দুপুরের দিকে আরামবাগের ডিহি বাগনান গ্রামে গেলে ফের আক্রান্ত হন সুজাতা মণ্ডল৷ তাঁর গাড়ি ঘিরে ধরে ভাঙচুর চালানোর চেষ্টা করেন বিজেপি সমর্থকরা৷ পাথরের আঘাতে সুজাতা মণ্ডলের গাড়ির কাঁচ ভাঙে৷ কোনওক্রমে পরিস্থিতি সামাল দেয় কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা৷ তারপর বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ আরামবাগের পৈশারা গ্রামের একটি বুথে যান সুজাতা মণ্ডল৷ সেখানে ফের আক্রান্ত হন সুজাতা। এই নিয়ে সারাদিনে তৃতীয় বার আক্রান্ত হলেন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী৷ সেখানে বুথের বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিজেপি সমর্থকরা৷ শেষ পর্যন্ত অবশ্য কোনওক্রমে এলাকা থেকে বিজেপি প্রার্থীকে বের করে দেয় পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী৷ সবমিলিয়ে মঙ্গলবার দিনভর শিরোনামে থাকলেন সুজাতা৷

এদিকে, আরামবাগে সুজাতা আক্রান্ত হওয়ার পর তাঁর স্বামী বিজেপি নেতা সৌমিত্র খাঁ বলেন, “ওঁকে আমি চার মাস আগেই ভুলে গিয়েছি৷” সুজাতার উপরে এই হামলার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তৃণমূল প্রার্থীর উপরই দোষ চাপিয়েছেন সৌমিত্র৷ তাঁর দাবি, গ্রামে ঢুকে গ্রামবাসীদের প্ররোচিত করেছেন তৃণমূল প্রার্থী৷ সুজাতা কেমন আছেন তা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন কি না প্রশ্ন করলে সৌমিত্র বলেন, “ওঁকে আমি চার মাস আগেই ভুলে গিয়েছি৷” বিজেপি সাংসদের আরও দাবি, আরামবাগের যে বুথে এই গন্ডগোল হয়েছে, সেটা সাধারণ মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এরপর তিনি দাবি করেন, আরামবাগে জিতবে বিজেপি-ই৷ তবে সুজাতাও এ দিন সৌমিত্রের মন্তব্যের কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি৷ তৃণমূল প্রার্থীর পাল্টা জবাব, “ভোটে কে জিতবে, কে হারবে সেটা তো উনি ঠিক করবেন না৷”