নিজস্ব সংবাদদাতা: যখন গোটা দেশজুড়ে ধর্ম নিয়ে হানাহানি, ঠিক সেই সময় দাঁড়িয়ে এক ধর্মীয় সম্প্রীতির নজির গড়লেন রাজগঞ্জের মুসলিম যুবকরা। এক ব্রাহ্মণ সন্তানের সৎকার সম্পন্ন করে সমাজে এক অনন্য উদাহরণ তৈরি করলেন বাংলার এই যুবকরা। যা ছড়িয়ে পড়তেই সাধুবাদ জানিয়েছেন নেটিজেনরা। বিশিষ্টমহল বলছে, এটাই আসল ভারতবর্ষের চিত্র। যখন একজন অসুস্থ মানুষের রক্তের প্রয়োজন হয়, তখনও কিন্তু মানুষ ব্লাড ব্যাঙ্ক বা ডোনারের থেকে রক্ত পেলে তাঁর জাত দেখেন না। আসলে রক্তের যেমন কোনো জাত হয়না, তেমনই হিন্দু-মুসলমানের কোনও ভেদাভেদ নেই।

কর্মসূত্রে সামান্য চাকরি নিয়ে কলকাতার বেহালা থেকে পীযূষ চ্যাটার্জী এসেছিলেন জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ ব্লকের জটিয়াকালীতে। বেহালার বাড়িতে স্ত্রী, ছোট এক মেয়ে এবং তাঁর বৃদ্ধা মা রয়েছেন। তবে সংসার চালাতে মুসলিম অধ্যুষিত সেই এলাকার চা ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে এসেছিলেন পীষূষ বাবু। তখন থেকেই সেই গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে পীযূষের সদ্ভাব গড়ে ওঠে। বিপদে পড়লে তাঁর পাশেই ছিলেন গ্রামের মুসলিম যুবকরা।

চা ফ্যাক্টরি সূত্রে খবর, কয়েকদিন আগে পীয়ূষ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। সহকর্মীদের সাহায্য নিয়ে তিনি চিকিৎসকের কাছে যান। তাঁকে কিছু নমুনা পরীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছিল। সেই রিপোর্টেই ধরা পড়ে পীযূষ কিডনির অসুখে ভুগছেন। রোগ অনেকটাই আয়ত্তের বাইরে চলে গিয়েছিল। এরপরই পীযূষের সমস্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য এগিয়ে আসেন স্থানীয় মুসলিম যুবক ও সহকর্মীরা। কলকাতায় তাঁর পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে রবিবার তাঁকে নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু পীযূষকে বাঁচানো যায়নি।

কলকাতায় তাঁর পরিবারের কাছে মৃত্যুর খবর পৌঁছলে স্ত্রী রুমকি জলপাইগুড়িতে ছুটে আসেন। কিন্তু পীযূষদের পরিবারের আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নয়। স্বামীকে শেষবার দেখতে একেবারে খালি হাতেই চলে আসতে হয়েছিল পীয়ূষের স্ত্রী রুমকিকে। এছাড়া কোনও আত্মীয়ও তাঁর সঙ্গে ছিলেন না। তাই এই অবস্থায় মানবিকতার খাতিরে পাশে দাঁড়ান গ্রামের সেই মুসলিম যুবকরাই। একই সঙ্গে মৃতদেহ সৎকারের ব্যবস্থাও করে ফেলেন তাঁরা।

তাঁরা নিজেরাই হিন্দু মতে পীযূষের সৎকার করান। পুরোহিতকে খবর দেওয়ার পাশাপাশি শব বহনকারী গাড়ি ভাড়া করে আনেন। সেই গাড়ি করে ‘হরি বল’ ধ্বনি দিতে দিতে পীযূষের মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে যান মুসলিম যুবকেরাই। এরপর তাঁর স্ত্রীকে দিয়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন করিয়ে কলকাতায় ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন এই বিধর্মী যুবকরাই। এই। বিষয়ে স্থানীয় যুবক সিকান্দার আলী বলেন, “মানব ধর্মের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। তাই আমাদের কর্তব্য অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো। রাজনীতির আঙিনায় যাই ঘটুক না কেন, সাধারণ মানুষ সকলে একসঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে ভালো বাসেন। পীযূষবাবুর স্ত্রী একা স্বামীর সৎকারের কাজ করতে পাচ্ছিলেননা। তাই এই অসহায় পরিবারের পাশে আমরা দাঁড়িয়েছি।”