স্কুল সার্ভিস কমিশনের পক্ষ থেকে ২০১৪ সালে উচ্চপ্রাথমিকে নিয়োগের জন্য শেষ বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। সে সময় শূন্যপদ ছিল ১৫ হাজারের মতো। পরীক্ষার্থী ছিলেন ৫ লক্ষ ৪৩ হাজার। কিন্তু লোকসভা ভোটের জন্য ওই বছর মার্চে পরীক্ষাগ্রহণ থমকে যায়। শেষমেশ ২০১৫-র অগস্টে উচ্চপ্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের টেট পরীক্ষা হয়।
পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল যে এটাই শেষ বছর যেখানে অপ্রশিক্ষিত বা ননট্রেন্ড প্রার্থীরাও মেধার ভিত্তিতিতে টেট পরীক্ষায় বসতে পারবেন। প্রাথমিক স্কুলের নিয়োগের জন্য যে টেট পরীক্ষা হয়েছিল একই বছরে তাতে অপ্রশিক্ষনপ্রাপ্ত প্রার্থীরা চাকরি পেয়েছিলেন নির্বিঘ্নেই। কিন্তু উচ্চপ্রাথমিকের বেলায় তা হয়নি।

উচ্চপ্রাথমিক

২০১৬ সালে উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত প্রার্থীদের ডকুমেন্ট ভেরিভিকেশনের জন্য না ডেকে অপ্রশিক্ষিতদের ডাকা হয়েছে বলে কয়েকশো চাকরিপ্রার্থী হাইকোর্টে মামলা করেন। এই মামলার শুনানিতে টিচার এলিজিবিলিটি টেস্ট (টেট), শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং বিএড বা ডিএলএড প্রশিক্ষণের জন্য নির্দিষ্ট নম্বরের ভিত্তিতে উচ্চ প্রাথমিকে কর্মপ্রার্থীদের মেধা তালিকা প্রকাশ করতে হবে বলে সম্প্রতি নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। এরপর শিক্ষক নিয়োগের জটিলতা ক্রমশই বাড়ছিল। প্রার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে সীমাহীন বিভ্রান্তি যার সমাধান করতে মুখ্যমন্ত্রীকে স্বয়ং বিপাকে পড়তে হয়েছে। অনশনে বসে মিছিল করে চাকরি প্রার্থীদের বারংবার দাবিতে অবশেষে মামলার নিষ্পত্তি হয়। তবে নিয়োগ প্রক্রিয়ার অসচ্ছ্বতার দাবিকে গুরুত্ব দিয়ে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ নতুন নীতিতে পুনরায় মেধাতালিকা প্রকাশের নির্দেশ দেয়।

হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী ২০২০ সালের শেষে তাই আবারও উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন।আগামীকাল ৪ জানুয়ারি থেকে উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে অনলাইন ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া শুরু হবে। চলবে জানুয়ারির ২০ তারিখ অবধি। ওয়েবসাইটে প্রতিদিন সন্ধে ৬ টা অবধি আবেদন করা যাবে। চাকরি প্রার্থী যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডকুমেন্টস আপলোড না করেন তাকে অনুপস্থিত বলে ধরে নেবে পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন।

উচ্চপ্রাথমিক অনলাইন নথি যাচাইয়ের ক্ষেত্রে আবশ্যক নিয়মাবলী জেনে নিন-

upper


লগ ইন: স্কুল সার্ভিস কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রথমে চাকরিপ্রার্থীরা নিজের টেট রোল নাম্বার অথবা অ্যাপ্লিকেশন আইডি সঙ্গে নিজের জন্ম তারিখ বসানোর পর সিকিউরিটি কোড অথবা ক্যাপচা কোড বসিয়ে লগ ইন করবেন। এরপর পরের পেজ খুলে যাবে।

অফিসিয়াল ওয়েবসাইট লিঙ্কঃ http://www.westbengalssc.com/sscorg/wbssc/home/


মোবাইল নাম্বার ভেরিফাই: পরের পেজ খুলে গেলে আপনি আপনার মোবাইল নাম্বার দেখতে পাবেন। এরপর আপনি আপনার মোবাইল নাম্বারে একটি ওটিপি পাবেন। যার মাধ্যমে ভেরিফাই করা হবে। এছাড়া আপনি চাইলে নির্দিষ্ট নিয়মে আপনি আপনার মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করতে পারেন।

 উচ্চপ্রাথমিক
সুত্রঃ অফিসিয়াল ওয়েবসাইট


ডকুমেন্টস আপলোডঃ এরপরের পেজে আপনি আপনার কালার স্ট্যাম্প সাইজের ছবি এবং সিগনেচার বা স্বাক্ষর আপলোড করতে পারবেন। একই পেজের নিচের দিকে আপনি আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা আপলোড করবেন। মনে রাখবেন আবেদন নির্দিষ্ট সময়ে করতে হবে।ডকুমেন্টের সাইজ: প্রতিটি ক্যান্ডিডেট কে নিজের ডকুমেন্টস JEPG ফরম্যাটে আপলোড করতে হবে। প্রতিটি ডকুমেন্টের সাইজ যেন ১ এমবির মধ্যে থাকে। একবার ডকুমেন্ট সাবমিট করলে পরে পরিবর্তন করতে পারবেন না। ২৪ অক্টোবর ২০১৬ তারিখের পর কোন শিক্ষাগত যোগ্যতা বা অন্য কোন ধরনের যোগ্যতা এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গ্রাহ্য বা বৈধ বলে ধরা হবে না।আবেদন করার সময় যে সব ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশনে প্রয়োজন সেগুলি হল:

১) ভোটার কার্ড /ড্রাইভিং লাইসেন্স/ প্যান কার্ড /পাসপোর্ট /আধার কার্ড (যেকোনো একটি)
২) মাধ্যমিকের অ্যডমিট কার্ড
৩) মাধ্যমিকের মার্কশীট
৪) উচ্চ মাধ্যমিকের মার্কশীট
৫) গ্রাজুয়েশনের সমস্ত মার্কশিট
৬) প্রফেশনাল কোয়ালিফিকেশন এর সমস্ত মার্কশিট
৭) এনসিটির অ্যাপ্রুভাল কপি
৮) জাতিগত শংসাপত্র
৯) প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট বা শংসাপত্র
১০) এক কপি স্ট্যাম্প সাইজের রঙ্গিন ছবি এবং আপনার স্বাক্ষর।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দ্রুত এই নিয়োগ প্রক্রিয়া কিভাবে শেষ করা যায় তা নিয়েই আলোচনা শুরু করেছেন এসএসসির আধিকারিকরা। অনলাইন ভেরিফিকেশনের পদ্ধতি শেষ হলেই ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই নিয়োগ শুরু করার চেষ্টা করবে শিক্ষা দপ্তর।শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সঙ্গে বারংবার বৈঠকে বসছেন এসএসসির আধিকারিকরা।আপাতত ভেরিফিকেশন পর্ব শুরু কাল থেকেই। প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে নেওয়া হবে বলে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন।

তবে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে সংশয়ের অবসান হয়নি। ২০১৪ সালে উচ্চ প্রাথমিক টেট আবেদন করার সময় যারা ট্রেন্ড ছিলেন না ইতিমধ্যে অনেকেই প্রশিক্ষণ নিয়ে ফেলেছেন। অথচ টেট পাশ করেও নতুন ভেরিফিকেশনে নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন না অনেকেই। কারণ , নিয়মাবলী অনুযায়ী কেবল ২০১৬ সালে ট্রেনিং শেষ করেছেন এমন প্রার্থীরাই আবেদন যোগ্য।

অন্যদিকে শিক্ষক নিয়োগের নতুন যে পরীক্ষা পদ্ধতির কথা জানা গেছে সেখানে বলা হয়েছে বৈধ টেট পাশের সার্টিফিকেট দেখালে সরাসরি মেইন পরীক্ষায় বসতে পারবেন পুরনো প্রার্থীরা। কিন্তু টেটের সার্টিফিকেট কীভাবে পাওয়া যাবে সে বিষয়ে ওয়েবসাইটে কোন সঠিক নোটিশ না থাকায় আজও অনেক টেট পাশ প্রার্থীর কাছে কেবল রোল নম্বর এবং মেধাতালিকায় নিজের নামের স্ক্রিনশটটুকুই সম্বল। শিক্ষা দপ্তর এই ক্ষেত্রগুলি বিবেচনা করে এখনও অবধি কোন সমাধান দেয়নি।তাই অপেক্ষায় দিন গুনছে আরও অনেক টেট সফল প্রার্থী।