নিজস্ব সংবাদদাতাঃ এতদিন পর্যন্ত টেট পাশ করলেই ইন্টারভিউ কল পাওয়া যেত। ২০২১ সালে নতুন নিয়োগ পদ্ধতি অনুযায়ী টেট পরীক্ষার গুরুত্ব প্রিলিমিনারি পরীক্ষার মতো। টেট-এর কাট অফ অতিক্রম করলে মূল বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষায় বসা যাবে। সেটিতে পাশ করলে সরাসরি চাকরি। এই প্রক্রিয়ায় শিক্ষাজীবনে প্রাপ্ত নম্বরের গুরুত্ব আর রইল না। সেইসঙ্গে উঠে গেল নম্বর বিভাজন, ইন্টারভিউ ও কাউন্সেলিং। এই বিষয়ে কি বলছে রাজ্য শিক্ষা দপ্তর বিশদে জেনে নিন।

নিয়োগ, স্কুল,
সূত্রঃ আজ বিকেল


উচ্চপ্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা আর উচ্চ প্রাথমিক স্কুলে কর্মশিক্ষা ও শারীরশিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজ্য শিক্ষা দফতর শিক্ষক নিয়োগের এই নতুন নীতি প্রকাশ করে ২০২০ সালের ২৬ শে ফেব্রুয়ারি।

শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান জটিলতা ও মামলা মোকদ্দমার কোবলে পড়ে ২০১৪ সালের নিয়োগ এখনও আটকে রয়েছে। ফলত নতুন নিয়মের ক্ষেত্রে তেমন করে কেউ মনোযোগ দিতে পারেনি। তবে, থমকে যাওয়া পুরনো নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার পাশাপাশি শিক্ষা দপ্তর নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিও জারি করতে চলেছে শীঘ্র, এমনই আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রীর। বিধানসভা ভোটের আগে মার্চ মাসেই আসতে চলেছে নতুন নিয়োগের খবর, আর সেখানে এই নতুন বিধি অনুযায়ীই প্রার্থীরা আবেদন করবেন।
এবারে দেখে নিন কীভাবে নিয়োগ হবে এবং কোন ক্ষেত্রে কেমন শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন।

নিয়োগ, শিক্ষক, স্কুল,
নিজস্ব সংবাদদাতা


উচ্চপ্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাঃ

মোট অন্তত ৫০% নম্বর পেলে যেকোনো শাখার গ্র্যাজুয়েট ছেলেমেয়েরা আবেদন করতে পারেন। তপশিলি, ও বি সি এবং প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে ৪৫ শতাংশ হলেই চলবে। পেশাগত যোগ্যতা হিসেবে বি এড/ এলিমেন্টারি এডুকেশন ডিপ্লোমা / বি এল এড / বি এড স্পেশাল এডুকেশন কোর্স পাশ হতে হবে।

নবম ও দশম শ্রেনির শিক্ষক শিক্ষিকাঃ

যেকোনো শাখার গ্র্যাজুয়েট / অনার্স গ্র্যাজুয়েট / পোস্ট গ্র্যাজুয়েট / পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ছেলেমেয়েরা মোট অন্তত ৫০ শতাংশ নম্বর পেয়ে থাকলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের জন্য আবেদন করতে পারেন। প্রতিবন্ধী, তপশিলি ও ওবিসি প্রার্থী হলে যথারীতি ৫ শতাংশ ছাড় পাবেন। পাশ বা অনার্স ডিগ্রি কোর্সে যাদের ৫০ শতাংশ নম্বর নেই কিন্তু পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনে ৫০ শতাংশ নম্বর আছে তাঁরাও আবেদনের যোগ্য। পেশাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে এন সি টি ই-র স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে বিএড কোর্স পাশ হতে হবে।

একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেনির শিক্ষক শিক্ষিকাঃ

৫০ শতাংশ নম্বর পেয়ে যেকোনো শাখার পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ছেলেমেয়েরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের জন্য আবেদন করতে পারেন। তপশিলি, প্রতিবন্ধী ও ওবিসি প্রার্থীরা ৫ শতাংশ ছাড় পাবেন। এন সি টি ই অনুমোদিত কোন প্রতিষ্ঠান থেকে বি এড কোর্স পাশ করে থাকলে আবেদনের যোগ্য হবেন।
সমস্ত পদের বেলায় বয়স হতে হবে বিজ্ঞপ্তি বেরনোর বছরের ১ জানুয়ারির হিসেবে ২১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। তপশিলিরা ৫ বছর, ও বি সি প্রার্থীরা ৩ বছর এবং প্রতিবন্ধীরা ৮ বছর বয়সে ছাড় পাবেন। প্রার্থী বাছাই করবে পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন। এজন্য প্রথমে ১৫০ নম্বরের টেট/ প্রলিমিনারি টেস্ট (পি টি) হবে। তাতে নির্দিষ্ট কাট অফ নম্বর পেলে ২০০ নম্বরের ‘মেইন’ পরীক্ষা দিতে হবে।

উচ্চপ্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক, কর্ম শিক্ষা ও শারীরশিক্ষা -এইসব ক্ষেত্রের শিক্ষক পদের বেলায় প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য প্রথমে টেট/ প্রিলিমিনারি টেস্ট হবে। তারপর ২০০ নম্বরের মূল পরীক্ষা হবে বিষয় ভিত্তিক। ২০০ নম্বরের মেইন পরীক্ষায় থাকবে এইসব বিষয়- ১) ইংরিজি কম্পোজিশন ও কম্প্রিহেনশন – ৫০ নম্বর, ভাষা পত্র ( বাংলা/ উর্দু/ নেপালি) -৫০ নম্বর। ২) সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর ১০০ নম্বর। টেট পরীক্ষায় সফল হলে তবেই মূল পরীক্ষার উত্তরপত্র দেখা হবে। মূল বা মেইন পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতেই মেধাতালিকা তৈরি হবে। অর্থাৎ, এই পরীক্ষা পাশ করলে নিশ্চিত চাকরি। কোন ইন্টারভিউ বা কাউন্সেলিং থাকছেনা। থাকছনা বি এড এর জন্য কোন আলাদা নম্বর। যারা আগে টেট পাশ করে আছেন তাঁদের বেলায় সরাসরি মেন পরীক্ষা দেবার সুযোগ থাকবে।


একনজরে জেনে নিন জরুরী কিছু তথ্যঃ

১৫০ নম্বরের টেট বা প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অবজেক্টিভ মাল্টিপল চয়েজের প্রশ্ন হবে এইসব বিষয়ে-
১) চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট ও পেডাগগি -৩০ নম্বরের ৩০টি প্রশ্ন।
২) প্রথম ভাষা পেপার – ৩০ নম্বরের ৩০টি প্রশ্ন ( প্রশ্ন হবে ব্যাকরণ/ গ্রামার ও কম্প্রিহেনশন বিষয়ে)
৩) অঙ্ক ও বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাদের বেলায় দিতে হবে অঙ্ক ও বিজ্ঞান বিষয়ে ৬০ নম্বরের ৬০ টি প্রশ্নের পরীক্ষা।
৪) সোশ্যাল স্টাডিজ বা হিউম্যানিটি বিষয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাদের বেলায় পরীক্ষা হবে ৬০ নম্বরের ৬০টি প্রশ্নে।
৫) উচ্চপ্রাথমিকের ক্ষেত্রে টেট পরীক্ষা দিতে হবে।
৬) নবম ও দশম, একাদশ ও দ্বাদশ আর কর্মশিক্ষা ও শারীরশিক্ষার বেলায় দিতে হবে ১৫০ নম্বরের প্রিলিমিনারি টেস্ট।
৭) টেট এবং প্রিলিমিনারি পরীক্ষা একই সঙ্গে একই দিনে হবে।
৮) টেট বা প্রিলিমিনারিতে নির্দিষ্ট কাট অফ পেলে তবেই ‘মেইন’ পরীক্ষা দিতে পারবেন।
৯) মেইনে সফল হলেই চাকরি।
১০) টেট বা প্রিলিমিনারি হল কোয়ালিফাইং পরীক্ষা। চূড়ান্ত তালিকা তৈরির সময় টেট বা প্রিলিমিনারির নম্বর ধরা হবে না। শুধুমাত্র মেইন পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে মেধাতালিকা তৈরি হবে।
১১) যারা আগে টেট পাশ করেছেন তাঁদের বৈধ টেট সার্টিফিকেট থাকলে সরাসরি মেইন পরীক্ষা দিতে পারবেন।

আরও বিশদে আপডেট পেতে চোখ রাখুন বাংলা খবরে।