নিজস্ব সংবাদদাতা: দেখতে দেখতে ১০টা বছর পেরিয়ে গেল। তখন যারা স্কুলে পড়তো, আজ হয়ত তারা কোনো নামি কোম্পানিতে কর্মরত। কেউ হয়ত দেশেই রয়েছে, কেউ আবার দেশের বাইরে। তবুও এই দিনটা এলে প্রতিটি ভারতবাসী পুরোনো দিনে ফিরে যাবেই। ছেলেবেলার সেই অনাবিল আনন্দের স্মৃতিতে আরও একবার গা ভাসাবেই। আজ ভারতের দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জয়ের ১০ বছর। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির অধিনায়কত্বে যেই ইতিহাস রচিত হয়েছিল মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে, আজ সেই ইতিহাসের ১০ বছর। চলুন, একবার ফিরে দেখা যাক দীর্ঘ ১০ বছর আগের ভারতের সেই বিশ্বকাপ সফর, যা সারাজীবনের জন্য প্রতিটি ভারতবাসীর মনে গেঁথে থাকবে।

ঢাকায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে খেলে ২০১১-তে শুরু হয়েছিল ভারতের বিশ্বকাপ সফর। ঘরের মাঠে শাকিব আল হাসান-রা তখন বেশ ভয়ঙ্কর। এদিকে, তার আগের বিশ্বকাপে সেই বাংলাদেশের কাছে হেরেই টুর্নামেন্ট থেকে ছুটি হয়ে গিয়েছিল ভারতের। সেই ভয় নিয়েই শুরু হল যাত্রা, বলা ভাল জয়যাত্রা। বীরেন্দ্র সেওয়াগ এবং বিরাট কোহলির শতরানে ভর করে সেই ম্যাচে ৩৭০ রান তোলে ভারত। মুনাফ পটেলদের দাপটে ২৮৩ রানে থেমে যান শাকিবরা। ৮৭ রানে জয় পায় ভারত।

দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয় ভারত। সেই ম্যাচে স্বমহিমায় ফিরলেন ক্রিকেট ঈশ্বর। শতরান করলেন শচীন তেন্ডুলকর। মাস্টার ব্লাস্টারের শতরান যখন ভারতকে জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছে, তখনই বাধা হয়ে দাঁড়ালেন স্ট্রস। ভারতের ৩৩৮ রানের জবাবে ইংল্যান্ডও করে ৩৩৮ রান। দুই দেশের সমর্থকদের হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দিয়ে ম্যাচ শেষ হয় অমীমাংসিত ভাবে। ভারতের জয়ের রথ ধাক্কা খায় দ্বিতীয় ম্যাচেই।

এরপর আয়ারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ৫ উইকেটে জয় পায় ভারত। ২ দলের বিরুদ্ধেই নায়ক হন যুবরাজ সিংহ। ব্যাটে, বলে ভারতের হয়ে তিনিই ছিলেন নায়ক। প্রতিযোগিতার সেরা ক্রিকেটার কেন তিনি, বুঝিয়ে দিয়েছিলেন ওই ম্যাচগুলোয়। জয়ের আনন্দ যখন স্বপ্ন দেখাচ্ছে বিশ্বজয়ের, তখনই সেই গোটা দেশকে মাটিতে নামায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

সেই ম্যাচে শচীনের শতরানের পরেও হারতে হয় ভারতকে। ২৯৬ রানে শেষ হয়ে যায় ভারত। ৭ উইকেট হারিয়ে সেই রান তুলে নেন জ্যাক কালিসরা। প্রোটিয়াদের দেওয়া সেই ধাক্কাটাই যেন আরও বেশি সতর্ক করে দেয় ভারতকে। পরের ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে শতরান করেন যুবরাজ। ৮০ রানে জয় পায় ভারত। কোয়ার্টার ফাইনালে কঠিন লড়াইয়ের জন্য ওয়ার্ম আপ শুরু করেন ধোনিরা।

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনাল। সেই অস্ট্রেলিয়া, যারা এখনও অবধি সর্বাধিক বিশ্বকাপ জয়ী দেশ। বড় মঞ্চে নিজেদের বার বার মেলে ধরেছে যে দল, যাদের কাছে হেরে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের, সেই অস্ট্রেলিয়া। ২০০৩ সালের চিত্রনাট্য মেনেই প্রথমে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া, শতরান করেন রিকি পন্টিং। সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পান ভারতীয় সমর্থকরা। তবে সেই ভয় কাটে যুবরাজের ব্যাটে। ভারতকে জিতিয়ে ৫৭ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। সৌরভের জন্য পারেননি, ধোনির জন্য পারলেন।

এরপর সেমিফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হল চির প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান। বিশ্বকাপের মঞ্চে কখনও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হারেনি ভারত। অন্যথা হল না সে বারেও। ২৯ রানে পাকিস্তানকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছলো ধোনির ভারত। সামনে এবার শ্রীলঙ্কা। একদিকে শচীনের যখন শেষ বিশ্বকাপের আশঙ্কা, অন্যদিকে কুমার সঙ্গকারা, মাহেলা জয়বর্ধনদেরও প্রায় তেমনই। বিশ্বকাপ জিততে মরিয়া দু’দেশই। মরিয়া মহারথীরাও।

প্রথমে শ্রীলঙ্কা ব্যাট করে। শতরান করেন জয়বর্ধনে। ভারতের সামনে জয়ের জন্য লক্ষ্য রাখেন ২৭৫ রানের। এরপর শচীনকে বিশ্বকাপ উপহার দিতে সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপান গৌতম গম্ভীররা। ৩ রানের জন্য শতরান হাতছাড়া করে কাদা মাখা জার্সি গায়ে গম্ভীর যখন ফিরছেন, তাঁর চিন্তা তখন শতরানের নয়, বিশ্বকাপের। সেসময় তাঁর অপূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করেন দলের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। ছয় মেরে বিশ্বকাপ জেতান ভারতকে। তৈরি হয় নতুন ইতিহাস। লর্ডসে কপিল দেবের হাত ধরে যেই ইতিহাসের সূচনা হয়েছিল, সেই ইতিহাসকেই আরও এগিয়ে নিয়ে গেলেন ‘ক্যাপ্টেন কুল’ ধোনি। যেই সুখস্মৃতি এখনও সমস্ত ভারতবাসীর মনে উজ্জ্বল।