গত ২৭ মার্চ এবং ১ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট পর্ব শেষ হয়েছে। এই দুটি দফাতেই ৩০ টি করে মোট ৬০ টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। ২৯৪ টি আসনের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় এরফলে বাকি ছয় দফায় ভোট নেওয়া হবে আরও ২৩৪ টি কেন্দ্রের। এই প্রথম দুটি দফার ভোটে রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটেছে, তবে তা কখন‌ওই লাগামছাড়া হয়নি।

প্রথম দুটি দফার নির্বাচনে জঙ্গলমহলের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম এবং দুই মেদিনীপুরে ভোট পর্ব ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার মাত্র চারটি আসনে ভোট হয়েছে। প্রতিটি রাজনৈতিক দল যে যার নিজের মত ভালো ফল করার দাবি জানিয়েছে এই দুটি পর্বের নির্বাচনের পর। তবে উল্লেখযোগ্য বিষয় রাজ্যে সবচেয়ে হাইভোল্টেজ কেন্দ্র নন্দীগ্রামের ভোট হয়ে গিয়েছে। যদিও বাকি ছয় দফার নির্বাচনেও অজস্র নজরকাড়া কেন্দ্র আছে। সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মসনদ দখলের যুদ্ধ ভালোমতোই জমে উঠেছে।

প্রথম দফার নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছিলেন তারা ৩০ টি আসনের মধ্যে ২৬ টি আসনে জয়লাভ করবেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথম দুটি দফার নির্বাচনের পর দাবি করেছেন পশ্চিমবঙ্গের যা ভোট হয়েছে তাতে দু’শোর বেশি আসন নিয়ে বিজেপি সরকার গড়তে চলেছে। তৃণমূলের দাবি প্রথম দফার ভোটে বিরোধীরা একদমই দাঁত ফোটাতে পারবে না। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিজে দাবি করেছেন আবারও দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তারা সরকার গড়তে চলেছেন। সংযুক্ত মোর্চার পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত আসন সংখ্যা নিয়ে কোনও দাবি না করা হলেও তাদের বক্তব্য সাধারণ মানুষ বিজেপি ও তৃণমূলের ওপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে তাদেরকেই ঢেলে ঢেলে ভোট দিচ্ছে।

রাজনৈতিক দলগুলি স্বাভাবিক নিয়মেই নিজেদের ফলাফল নিয়ে নানারকম দাবি তুলে ধরবে।পশ্চিমবঙ্গের ভোটের ফল কি হতে চলেছে তা এখনই বলা মুশকিল। তবে প্রথম দুটি দফার ভোটের পর কোন পক্ষ কিরকম ফলাফল করতে পারে তার একটা আভাস দেওয়ার চেষ্টা করব আমরা।

ধাক্কা খাচ্ছে তৃণমূল:

প্রথম দফায় যে ৩০ টি আসনে ভোট হয়েছিল তাতে ২০১৬ বিধানসভা ভোটের থেকে কিছুটা হলেও খারাপ ফলাফল হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের। তবে ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের ক্ষতি তারা অনেকটাই সামলে উঠতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। অমিত শাহ যত‌ই দাবি করুন প্রথম দফার ৩০ টি কেন্দ্রের মধ্যে প্রায় অর্ধেক আসন নিজেদের কব্জায় নিয়ে আসতে পারবে রাজ্যের শাসক দল। আবার দ্বিতীয় দফার ভোটে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার চারটি আসন নিজেদের দখলে রাখার সম্ভাবনা বেশি তৃণমূলের। পশ্চিম মেদিনীপুরে মোটামুটি ভাবে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে চলেছে তারা। সব মিলিয়ে প্রথম দফার ৩০ টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০-১৫ টিতে তারা জয়লাভ করবে বলে অনুমান। এখনো পর্যন্ত মোট যা ভোট হয়েছে তাতে ৬০ টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের ঝুলিতে যাবে ২৫ থেকে ৩৫ টি কেন্দ্র।


প্রত্যাশিত ফল নয় বিজেপির:

২০১৬ বিধানসভা ভোটের ফল অনুযায়ী প্রথম দুটি দফা মিলিয়ে মা ভোট হয়েছে তাতে গেরুয়া শিবিরের দখলে ছিল মাত্র একটি কেন্দ্র। কিন্তু ২০১৯ এর লোকসভা ভোটের ফল যাবতীয় ছবি বদলে দিয়েছিল। এবারেও বিজেপি আশা করেছিল প্রথম ও দ্বিতীয় দফার ৬০ টি কেন্দ্রের মধ্যে প্রায় ৪০ টি তারা নিজেদের পকেটের ভরতে পারবে। কিন্তু আপাতত যা ভোট হয়েছে তাতে যাবতীয় পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে গেরুয়া শিবিরের দখলে যেতে চলেছে ২২ থেকে ৩০ টি কেন্দ্র। এই ফল বিজেপির প্রত্যাশার তুলনায় যথেষ্ট খারাপ।


আশা জাগিয়েও এখনও অব্দি ব্যর্থ সংযুক্ত মোর্চা:

২০১৬ সালে মোটামুটি ফলাফল করলেও ২০১৯ এর লোকসভা ভোট অনুযায়ী প্রথম দুটি দফার ৬০ টি কেন্দ্রে একটিতেও এগিয়ে ছিল না সংযুক্ত মোর্চা। তবে সেই ক্ষতি তারা কিছুটা হলেও সামলে নিতে পেরেছে এবারের বিধানসভা নির্বাচনে। যদিও রাজ্যের ক্ষমতা দখল করতে গেলে যতটা ভালো ফলাফল করা উচিত ছিল তার ধারে কাছে পৌঁছতে পারছে না তারা। প্রথম দুটি দফার নির্বাচন মিলিয়ে সংযুক্ত মোর্চা পেতে পারে ১০ থেকে ১৫ টি আসন।

শেষে একটাই কথা বলার, প্রথম দুটি দফা ভোটের সম্ভাব্য ফলাফল যদি কোন‌ও ইঙ্গিত হয় তাহলে পশ্চিমবঙ্গে ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।