নিজস্ব সংবাদদাতা- আর‌ও এক মার্কিন রাজনীতিবিদ কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন তিনটি কৃষি আইন এবং কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে মুখ খুললেন। আমেরিকার উইসকনসিন প্রদেশিক আইন সভার স্পিকার রবিন জে ভস সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়ে আমেরিকায় ভারতের রাষ্ট্রদূত তরণজিৎ সিং সান্ধুকে এই বিষয়ে একটি চিঠি পাঠান। সেই সঙ্গে তিনি ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেন জাস্টারকেও একই বিষয়ে চিঠি লেখেন। দুটি চিঠিতেই এই মার্কিন রাজনীতিবিদ মোদি সরকারের অনড় অবস্থানের তীব্র সমালোচনা করেছেন।

রবিন জে ভস উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, “উইসকনসিন এবং ভারতের অর্থনীতি যেহেতু কৃষিপ্রধান তাই কৃষকদের সমস্যাটা আমি বেশ ভালোই বুঝি। এই দুই জায়গাতেই অর্থনীতি কৃষি সংক্রান্ত বিষয়ের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে দাঁড়িয়ে থাকে। আমার মনে হয় কৃষকদের বিষয়ে কোনো আইন প্রণয়ন করার আগে তাদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করা উচিত। অথচ নরেন্দ্র মোদি সরকার তা করেনি। আশা করব কৃষকদের উদ্বেগের বিষয়টি মাথায় রেখে ভারত সরকার যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।” এর পাশাপাশি তিনি ভারত সরকারকে কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আবেদন‌ও জানান।

গত ৪ জানুয়ারি এই চিঠি দেন ভস। চিঠিতে তিনি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অধিকারের কথা ভারত সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। দাবি করেছেন বর্তমান মানবাধিকার বিধি অনুযায়ী যে কোনো মানুষকে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অধিকার দেওয়া উচিত। একইসঙ্গে আন্দোলনরত কৃষকদের ওপর বলপ্রয়োগের তীব্র সমালোচনা করেন। দাবি করেন- “আমি সাধারণত আমেরিকার সঙ্গে অন্যান্য দেশের সম্পর্ক নিয়ে কখনো মুখ খুলি না। কিন্তু আমেরিকার একজন সাধারণ নাগরিক এবং উইসকনসিনে বসবাসরত ভারতীয়দের একজন প্রতিনিধি হিসাবে ভারতে এক মাসের ওপর ধরে চলা কৃষক আন্দোলন নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। কৃষকরা তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের লড়াই চালাচ্ছে, তাকে সম্মান দেওয়া উচিত ভারত সরকারের।”

ঘটনা হল আমেরিকার উইসকনসিন প্রদেশে অসংখ্য ভারতীয় বসবাস করেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ শিখ ধর্মাবলম্বী। এদিকে দেশের কৃষক আন্দোলনের একেবারে সামনের সারিতে আছেন শিখ ধর্মের কৃষকরা। আন্তর্জাতিক মহল মনে করছে উইসকনসিনের শিখ ধর্মের মানুষদের সমর্থন পেতেই রবিন জে ভস এই চিঠি লিখেছেন। যদিও ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে দাবি করা হয় বিদেশের একাধিক রাজনীতিবিদ সম্পূর্ণ তথ্য না জেনেই কৃষক আন্দোলন সম্বন্ধে মন্তব্য করছেন। সেইসঙ্গে কৃষক আন্দোলনকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসাবে দাবি করে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টার তীব্র সমালোচনা করা হয়।

এর আগেও কানাডার রাষ্ট্রপতি জাস্টিন ট্রুডো সহ বেশকিছু মার্কিন রাজনীতিবিদ কৃষক আন্দোলন নিয়ে মুখ খুলেছেন। ভারতের রাজনৈতিক মহল মনে করছে যত বেশি বিদেশি রাজনীতিবিদরা এই নিয়ে মতামত জানাচ্ছেন ততই চাপে পড়ে যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। ভাবমূর্তি রক্ষা করার স্বার্থেই আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলতে শুরু করেছে তারা।