টাকা বা পয়সা কেমন দেখতে হয় আমরা সবাই জানি, কাগজের নোট অথবা ধাতুর মুদ্রা। কিন্তু এই ক্রিপ্টোকারেন্সি জিনিসটা ঠিক কি, এর সম্বন্ধে আমাদের মধ্যে অনেকেরই কোনো স্পষ্ট ধারণা নেই। 5বছর আগে পর্যন্তও CNBC poll-এর মাধ্যমে জানা গেছে 33% মার্কিন নাগরিক ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে জানেননা বা শোনেননি। ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রথম জনসাধারণের সামনে আসে যখন অপরাধীরা municipality, সাধারণ নাগরিক ও বিভিন্ন corporateগুলির personal ও confidential তথ্য cryptovirology-র মাধ্যমে hack করে এবং ransomware হিসেবে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে পেমেন্ট ট্রান্সফার চায়। প্রায় এক দশক আগে Bitcoin দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেট যার বাজারদর এখন আকাশছোঁয়া। সম্প্রতি USA-এর El Salvador দেশটি প্রথম ক্রিপ্টোকারেন্সিকে অফিসিয়ালি স্বীকার করেছে, এই দেশের গভর্নমেন্ট জানিয়েছে, এবার থেকে নাগরিকরা ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে তাদের ট্যাক্স দিতে পারবে। ভারত সরকার ক্রিপ্টোকারেন্সির উপর ব্যান তুলে দিলে প্রায় এক লক্ষ কোটিরও বেশি সংখ্যক জনতার কাছে ভবিষ্যতে ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে ইনভেস্ট ও লেনদেন করা সহ নানা সুযোগ-সুবিধা সুলভ হয়ে যাবে। সার্ভের মাধ্যমে জানা যায়, ভারতে 18-55 বছর বয়সী পুরুষ ও মহিলা উত্তরদাতাদের মধ্যে 75% বিনিয়োগকারী ক্রিপ্টোকারেন্সিতে ইতিমধ্যে ইনভেস্ট করেছেন। উল্লেখযোগ্য যে, বিটকয়েন (BTC) বাকি ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলির থেকে বেশি জনপ্রিয়। 2009সালে Satoshi Nakamoto ছদ্মনামে একজন Bitcoin-এর উদ্ভাবন করেন, তিনি অজ্ঞাতনামাই থেকে যান। 2015তে টরোন্টোর অধিবাসী Vitalik Buterin তৈরী করেন Ethereum, 2013তে Billy Markus ‘Dogecoin’ তৈরী করেন। সাধারণত ডেভেলপার ও এন্ট্রেপ্রেনিয়ার্সরা ক্রিপ্টোকারেন্সি তৈরী করে থাকেন বিভিন্ন পলিটিকাল ও ইকোনমিক কারণে।
◼ ক্রিপ্টোকারেন্সি কি? ক্রিপ্টোকারেন্সি হল একধরণের ফ্রি ওপেন-সোর্স কম্পিউটার কোড যা মানুষকে সহজেই অনলাইনে value transfer ও store করার সুযোগ দেয়। এই কোড Blockchain নামক এক ওপেন পাবলিক রেকর্ড বা লেজার-এর মধ্যে অনলাইন transactionগুলিকে ভেরিফাই করে ও বিশেষভাবে শ্রেণীবদ্ধ করে। Blockchain আসলে একটা বিশাল সফটওয়্যার যাতে প্রথম থেকে প্রত্যেকটি transaction-এর রেকর্ড আছে, যা সকলের জন্য উপলব্ধ। যে কেউ এই সফটওয়্যার দিয়ে কোড ও আলগোরিদমের দ্বারা নতুন ক্রিপ্টোকারেন্সি create ও circulate করতে পারে। তবে মেইন সিস্টেম রোজ একটা লিমিটেড এমাউন্ট ক্রিপ্টোকারেন্সি circulate করার allowance দেয়। তাই যে যত দ্রুত নিজের কোড সংগ্রহ করতে পারবে, সে তত কারেন্সি circulate করতে পারবে।
◼ ক্রিপ্টোকারেন্সি কেন অধিক গ্রহণযোগ্য? ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিময় করা পুরোপুরি নিরাপদ, সহজ ও গোপনীয়। প্রচলিত সরকার বা সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কিং সিস্টেম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিগুলিতে যারা বিনিময় করতে পারেননা, তাদের জন্যেও সম্পূর্ণ নির্বিঘ্ন এই নতুন পদ্ধতি। বর্তমানে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগকারীদের মতে, এই পদ্ধতিতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আর্থিক স্বাধীনতা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। এই কারেন্সির বিনিময় যে কেউ যেকোনো মার্কেটের access পেতে পারে।
◼ ক্রিপ্টোকারেন্সির পরিমান কত? বর্তমানে খোলা বাজারে হাজারেরও বেশি ধরণের ক্রিপ্টোকারেন্সি আছে এবং রোজ নতুন নতুন তৈরী হচ্ছে। এর মধ্যে আছে Bitcoin, Ethereum, Tether, Binance, Dogecoin, Cardano -এর মতো বৃহত্তর ব্র্যান্ড পরিচিতির কিছু কারেন্সি। তবে ক্রিপ্টোকারেন্সির ৭০% মার্কেট সর্বাধিক জনপ্রিয় Bitcoin-এর হাতে।
◼ ক্রিপ্টোকারেন্সি কোথায় থাকে? খাতায় কলমে কাগজে ক্রিপ্টোকারেন্সির কোনো অস্তিত্ব নেই, ক্রিপ্টোকারেন্সির সমস্ত হিসেবে থাকে Blockchain সফটওয়্যারটিতে। যখনি কোনো নতুন transaction হয়, সঙ্গে সঙ্গে network -জুড়ে সফটওয়্যারটিও আপডেটেড হয়ে যায়। যখনি কেউ নতুন ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনে বা ইনভেস্ট করে তখন তার নতুন ওয়ালেট ও পাসওয়ার্ড জেনারেট হয়, যার মাধ্যমে পরবর্তীকালে ওই ওয়ালেট access করা যায়। নানান মোবাইল ওয়ালেটের থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সির ওয়ালেট একেবারেই আলাদা। ক্রিপ্টোকারেন্সির ওয়ালেট খুব সিকিওর ও এর পাসওয়ার্ড খুবই কমপ্লেক্স, যা একবার হারিয়ে ফেললে চিরতরে আপনার ক্রিপ্টোকারেন্সির account লক হয়ে যাবে।
◼ ক্রিপ্টোকারেন্সি কিভাবে পাবলিক বা বিজনেসের কাজে লাগে? প্রচলিত পদ্ধতিতে যেমন ব্যাঙ্কের মাধ্যমে টাকার লেনদেন হয়, তেমনি ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে বিনিয়োগের আগে মাইনার্সদের দ্বারা গাণিতিকভাবে চেক হয়ে valid transaction প্রমাণিত হলে তবেই তা Blockchain-এ আপডেটেড হয়। Coinbase, eToro, Binance, Robinhood হল কতগুলি বিখ্যাত বিশ্বাসযোগ্য ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ যার মাধ্যমে cheapair.com, AT&T এর মতো বড় বড় সংস্থাগুলি এখন ক্রিপ্টোকারেন্সি গ্রহণ করছে।
◼ ক্রিপ্টোকারেন্সি কি সিক্রেট? না, বরং ক্রিপ্টোকারেন্সির সমস্ত আদানপ্রদান রেজিস্টার হয়। যেটা সিক্রেট, সেটা হল ক্রিপ্টোকারেন্সির transaction-এর সাথে Blockchain-এ কোনো নাম বা ID যুক্ত থাকেনা, তাই কত ক্রিপ্টোকারেন্সি কোথায় গেল জানা সম্ভব হলেও সেই transaction-এর সাথে যুক্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা অসম্ভব।
◼ ভারতে ক্রিপ্টোকারেন্সির হাল হকিকত? ভারতের অর্থনীতির সবরকমভাবে উন্নতির সম্ভাবনা আছে ক্রিপ্টোকারেন্সি মার্কেটে। বর্তমানে ভারতের ছোট বড় বিনিয়োগকারীরা স্বেচ্ছায় ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করতে চাইছে, মনে করা হচ্ছে এর দ্বারা ভবিষ্যতে নতুন কর্মসংস্থান তৈরী হবে, অর্থনীতির উন্নতি হবে। প্রচুর মানুষ এখন ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনোয়োগ করাকে স্টকমার্কেট, বন্ডে, সোনা বা রিয়েল এস্টেটে বিনোয়োগের থেকেও বেশি নিরাপদ ও লাভজনক মনে করছেন। ভারতে এর মার্কেট ক্রমশ বাড়ছে, এখন দেখার বিষয় হল peer-to-peer বিজনেসের ক্ষেত্রে এই financial boom এর সম্ভাবনা কিভাবে ব্যবহার করা হয়।