নিজস্ব সংবাদদাতা- রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আবারও মায়ানমারের ক্ষমতা দখল করে নিলো সে দেশের সেনাবাহিনী। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গিয়েছে মায়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর তথা সেদেশের জনপ্রিয়তম নেত্রী আউং-সান-সু-কি, রাষ্ট্রপতি উইন মিয়্যান্ট সহ সু-কি’র দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সমস্ত সদস্য এবং প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সব মন্ত্রীকে আপাতত নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে মায়ানমার মিলিটারি।

সোমবার সকালে মায়ানমারের সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম ‘মায়াওয়াদি টিভি’ চ্যানেলে আগামী এক বছরের জন্য দেশের ক্ষমতা দখলের কথা ঘোষণা করা হয় সেনাবাহিনীর তরফ থেকে।

সু-কি’র নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির মুখপাত্র মায়ো নয়্যান্ট সকালে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, “আমরা বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পারছি দেশের রাষ্ট্রপতি উইন মিয়্যান্ট এবং স্টেট কাউন্সিলর সু-কি’কে গৃহবন্দী করা হয়েছে। সম্ভবত সেনাবাহিনী অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। দেশের শীর্ষ নেতারা আপাতত সেনাবাহিনীর কব্জায় আছেন। নিশ্চিত জানতে না পারলেও আপাতত যা খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে সু-কি এবং দেশের রাষ্ট্রপতিকে নেপিয়্যাদে রাখা হয়েছে।”

প্রসঙ্গত ফেব্রুয়ারি মাসে মায়ানমারের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর দেখা যায় সু-কি’র নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সংসদের দুই’কক্ষেই ক্ষমতায় ফিরে এসেছে। সে দেশের সংবিধান অনুযায়ী সেনাবাহিনীর জন্য সংসদের ২৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত করা থাকে। এছাড়াও মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ‌ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত।

মায়ানমার বাসীর রায়ে আবারও দেশের ক্ষমতায় ফিরে আসার পরই সেনাবাহিনীর বিরোধিতার সম্মুখীন হতে শুরু করেন সু-কি ও তার নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি। মিলিটারির পক্ষ থেকে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলা হয়। যদিও শেষ পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে ভোট কারচুপির কোনো প্রমাণ জমা দিতে পারেনি মায়ানমার সেনাবাহিনী। এরপরই ভোটে কারচুপির যাবতীয় সম্ভাবনা নাকচ করে দেয় সে দেশের নির্বাচন কমিশন।

দীর্ঘ পাঁচ দশক সেনাবাহিনীর অধীনে থাকার পর ২০০৮ সালে মায়ানমারে নতুন সংবিধান তৈরির মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক পরিমণ্ডল তৈরী করা হয়। কিন্তু ক্ষমতা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয়ে সে দেশের সেনাবাহিনী সর্বদাই সরকারের বিভিন্ন কাজে হস্তক্ষেপ করে আসছিল। এবারের সাধারণ নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ খারিজ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই জল্পনা শুরু হয় আবারও দেশের ক্ষমতা দখল করে নিতে পারে মিলিটারি। সেই সমস্ত জল্পনাকে সত্যি করে সোমবার সকালে ক্যু-র মধ্য দিয়ে দেশের নির্বাচিত সরকারকে উচ্ছেদ করে আগামী এক বছরের জন্য মায়ানমারের ক্ষমতা দখল করে বসলো সেনাবাহিনী।