নিজস্ব সংবাদদাতা: করোনা অতিমারির জেরে বর্তমানে বেসামাল অবস্থা ভারতবর্ষের। এদিকে এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় আমেরিকার নয়া প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপর যখন মোদী সরকার প্রবল ভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, ঠিক সেই সময়েই আমেরিকার একটি সরকারি রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসে তীব্র অস্বস্তি তৈরি করল। আমেরিকার বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে আমেরিকার কংগ্রেসকে দেওয়া এই রিপোর্টে ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর হিংসা, বৈষম্য এবং তাদের হত্যার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। দেশে কোভিড ছড়ানোর অভিযোগে মুসলমান সম্প্রদায়ের দিকে তর্জনী তোলার ঘটনাতেও উদ্বেগ ব্যক্ত হয়েছে।

এই রিপোর্টটি প্রকাশ করেছেন আমেরিকার বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। পাশাপাশি এই রিপোর্টে আমেরিকার সংশ্লিষ্ট কর্তারা ভারতীয় কর্তাদের সঙ্গে সিএএ-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা বলার বিষয়টিও রয়েছে। ভারত সরকারের প্রতি এমন অভিযোগ অবশ্য আমেরিকার তরফ থেকে প্রথম নয়। এর আগেও সে দেশের সরকারের অধীনস্থ আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বধীনতা সংক্রান্ত কমিটির রিপোর্টেও ভারতের সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের কথা বলা হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে সেই অভিযোগ খারিজ করে দাবি করা হয়েছিল, কোনও বিদেশি রাষ্ট্রের অধিকার নেই অন্য দেশের সংবিধানসম্মত অধিকার নিয়ে মন্তব্য করার।

আমেরিকার এই নতুন রিপোর্টে বলা হয়েছে, “গত বছর মার্চে দিল্লীতে তবলিঘি জামাতের একটি সভাকেই প্রাথমিক ভাবে এ দেশে করোনা সংক্রমণের জন্য দায়ী করেছিল কেন্দ্রের মোদী সরকার এবং গুটিকয়েক সংবাদমাধ্যম। সেই সভায় অংশগ্রহণকারী ছ’জনের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। প্রাথমিক ভাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক দাবি করেছিল, দেশে করোনা আক্রান্তদের অধিকাংশেরই সেই সভার সঙ্গে যোগ আছে।” সেই রিপোর্টে ভারতের শাসক দলের নাম উল্লেখ করে জানানো হয়েছে যে, ওই দলের কয়েক জন সদস্য বলেছিলেন যে জামাতের সদস্যরা দেশে ‘সন্ত্রাসের মতো’ করোনা ছড়িয়েছেন। কয়েক জন রাজনীতিবিদ এবং কয়েকটি সংবাদমাধ্যম সেই ঘটনাকে ‘করোনা জেহাদ’ হিসেবেও উল্লেখ করে।

গত বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি নাগাদ সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দিল্লীতে যে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছিল, সে বিষয়টিও আমেরিকার রিপোর্টে উঠে এসেছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, ধর্মীয় বিদ্বেষ নিয়ে হিংসার জেরে ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তার মধ্যে অধিকাংশই মুসলিম ছিলেন। মুসলিম সমাজকর্মী, শিক্ষাবিদ, মানবাধিকার-কর্মী, প্রাক্তন পুলিশ আধিকারিক এবং সাংবাদিকরা অভিযোগ করেছিলেন যে, দিল্লী পুলিশের তদন্তের মধ্যেও মুসলিম-বিরোধী মনোভাব ছিল। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, “মানবাধিকার-কর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি জানিয়েছে, শাসক দল বিজেপি এবং হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের সদস্যরা সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে জনসমক্ষে উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছিলেন।”