you tube

ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং করে নিজের তুলনায় ঘরকে অতুলনীয় করার সুপ্ত বাসনা সকলের মধ্যে থাকে। বহুভাবে তো নিজেদের ঘর সাজিয়েছেন এতদিন, এবারে ইনডোর প্ল্যান্ট সাজিয়ে তুলুক আপনার ঘর। ঘর হয়ে উঠুক প্রাণবন্ত।
যতই আর্টিফিসিয়াল জিনিসে ঘর সাজিয়ে তুলি না কেন, ঘরের কোণে কোণে যদি কিছু গাছ থাকে, সে সৌন্দর্য ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের ভাণ্ডার এই গাছ। যার নয়নাভিরাম বৈচিত্র্য মুগ্ধ করে সর্বদা। প্রকৃতির সান্নিধ্যে কেউ খুঁজে পায় স্বস্তি আবার কেউ বা খুঁজে পায় অনুপ্রেরণা। আধুনিক কনক্রিট জঙ্গলের মাঝে যে কোনো রুচিবোধ সম্পন্ন মানুষই, নিজের চোখের সামনে রাখতে চায় ক্ষাণিকটা সবুজের ছোঁয়া।

“তাই বলি, গাছ তুলে আনো…বাগানে বসাও আমি দেখি…চোখ তো সবুজ চায়!”

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের সুর এখন ঝরে পড়ুক সবার মননে। কিন্তু বর্তমান ছোট্ট পরিবারে ছোট্ট বাড়ি, বাগান নেই, নেই মাথার উপর ছাদ… ফ্ল্যাটের চৌহদ্দির মধ্যেই আমাদের বসবাস। তাই ছোট্ট ব্যালকনি ও ঘরের ডাইনিং এই লাগিয়ে ফেলুন কিছু গাছ। যা দেখতেও সুন্দর ও উপকারীও।

কয়েকটি ইনডোর প্ল্যান্টস এর তালিকা আপনাদের সামনে…

১. লাকি ব্যাম্বু (Bamboo Palm):-

বাড়ির পড়ার টেবিল, খাবার টেবিল বা সেন্টার টেবিলে রাখতেই পারেন এই লাকি ব্যাম্বু। এ গাছ সৌভাগ্যের প্রতীক। ঘরে রাখা শুভ মনে করেন অনেকেই।
অত্যন্ত কম যত্নে ভাল থাকে লাকি ব্যাম্বু।
এর সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়েই গাছটি স্থান পেতে পারে আপনার ঘরে।

২. ফিলোডেনড্রন এবং পোথস (Philodendron & Pothos):

আসলে এটি আমাদের অতি পরিচিত মানিপ্ল্যান্ট। যে সকল স্থানে কম সূর্যালোক পৌঁছায়; সেখানে অনায়াসেই বেড়ে ওঠে এরা। গাছটির সামান্য অংশ ছিঁড়ে মাটিতে লাগিয়ে দিলেই সাচ্ছন্দ্যে বেড়ে ওঠে লকলক করে।
ছায়ায় থাকা ফিলোডেনড্রনের রঙ সবুজ থাকে। রোদে রাখলে পাতার রঙ হলুদ হতে থাকে।
তবে ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে একাই একশ।

৩. স্নেক প্ল্যান্ট (Snake Plant):-

‘স্নেক প্ল্যান্ট’ … নামটা যতই ভয়ংকর হোক না কেন, গাছটা কিন্তু বিষধর সাপের মত ক্ষতিকারক নয় একেবারেই, বরঞ্চ গাছটি খুবই উপকারী একটি ডিটক্সিফায়ার।
বাতাসে ভেসে বেড়ানো পাঁচটি প্রধান বিষাক্ত উপাদানের ভেতর চারটিকে এরা শোধন করতে পারে। খুব একটা বাড়তি যত্নেরও প্রয়োজন পড়ে না।
আপনার লিভিং রুমের কোণায় একটা সুন্দর টবে বসিয়ে দিন একটা স্নেক প্ল্যান্ট, দেখবেন মনটা কেমন ফুরফুরে হয়ে গিয়েছে। বা রেখে দিন ডাইনিং স্পেসের কাছে একটা বা দুটো গাছ। অফিস স্পেসে বা রুমের মাঝে পার্টিশন দেবার জন্য সারি বেঁধেও অনেকগুলো
এর পাতা কিঞ্চিৎ বিষাক্ত তাই বাচ্চা বা পোষ্য প্রাণী থেকে দূরে রাখুন।

৪. এ্যালো ভেরা (Aloe Vera):-

শুধু ঘর সাজানো নয়, ত্বকের বা চুলের যত্ন নিতে এর জুড়ি মেলা ভার। ঘরের কোণে বা ছাদের যে কোনো জায়গায় লাগিয়ে দিন এ্যালো ভেরা।
এটি এ্যান্টিসেপ্টিক হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। খুব কম যত্নেই বেঁচে থাকে যে গাছ, কিন্তু উপকারী গুণ নিয়ে সদায় প্রস্তুত।

৫. মথ অর্কিড (Moth Orchid):-

খাবার টেবিল থেকে পড়ার টেবিল বা কোনো হ্যাংগিং পয়েন্ট যে কোনো জায়গায় রাখা যেতে পারে এই মথ অর্কিড।
অর্কিডের প্রতি ফুলপ্রেমীদের বিশেষ আকর্ষণ থাকেই। অর্কিডের নানা বর্ণ-বৈচিত্র্যের মাঝে মথ অর্কিডেরই আবার ৬০টি প্রজাতি রয়েছে। এর ফুলগুলো কয়েকমাস ধরে ফুটে থাকতে পারে।
ঝুলন্ত টবে এই গাছ সবচেয়ে সুন্দর দেখায়। কম আলো, অধিক আর্দ্র স্থানে গাছটি ভালো থাকে। এবং খুব সহজে রক্ষনাবেক্ষণ করা যায় বলে এই গাছটিকে।

৬. পীস লিলি (Peace Lily):-

একে তো জায়গার অভাব, তাতে সময় নেই একদম। কিন্তু মন সবুজ চায়… আপনার মনের প্রশান্তি নিয়ে আসবে স্প্যাতিফেলাম বা পীস লিলি। লম্বাটে, চকচকে পাতার
গাঢ় সবুজ পাতার সঙ্গে দুধসাদা ফুলের বৈপরীত্যে গাছটি দৃষ্টিনন্দন।
সাদা ফুলের জন্যই এ গাছের অন্য নাম পিস লিলি। নাসার একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এই গাছ ঘরের ভিতরে রাখলে বিশুদ্ধ থাকে বাতাসও।
প্রায় ৪০টি ভিন্ন প্রজাতি পাওয়া যায় এই ফুল গাছটির। ছায়া প্রিয় গাছটিতে মাটি শুকিয়ে যাবার আগ পর্যন্ত জল দেবার প্রয়োজন নেই।
তবে এ গাছের পাতা বিষাক্ত।

৭. স্পাইডার প্ল্যান্ট (Spider Plant):-

গাছের পাতা মাকড়সার পায়ের মত ছড়ানো বলেই মনে হয় এর নাম স্পাইডার প্ল্যান্ট ।
নাসার এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে ঘরের ভেতর থাকা কার্বন মনোক্সাইড, ফরমালডিহাইড, জাইলিনসহ প্রায় ৯০% দূষক পদার্থ শোষণ করে এই উদ্ভিদ। তাই ঘরের বাতাস দূষণমুক্ত রাখতে স্পাইডার প্লান্ট ঘরে রাখা যেতেই পারে।
ঝুলন্ত পাত্রে দারুণ লাগে এই গাছটি।
তবে, বিড়ালকে এই গাছের কাছ থেকে দূরে রাখুন।

৮. মিন্ট (Mint):-

চলতি কথায় একে আমরা বলি পুদিনা।
রান্নাবান্নায়, পোকামাকড় দমনে, এয়ার ফ্রেশনার এবং মাউথ ফ্রেশনার হিসেবে গাছটির পাতা ব্যবহৃত হয়।
শরবত অতুলনীয় হয়ে ওঠে এর স্বাদে। চাটনিও অনবদ্য।
মিন্টের প্রায় ১৮ প্রজাতি ছাড়াও রয়েছে হাইব্রিড জাতের মিন্ট। ঠান্ডা জায়গায় বেড়ে ওঠে গাছটি, মাত্র একটি দল থেকে বড় বাগান করে ফেলা সম্ভব।

৯. প্রেয়ার প্ল্যান্ট (Prayer plant):-

এই গাছটির বিশেষত্ব হচ্ছে সকাল বেলা পাতাগুলো ছড়িয়ে থাকে আর রাতে এর পাতাগুলো দুই পাশ থ‌েকে গুট‌িয়ে আস‌ে… দেখে মনে হয় পাতাগুলো যেন প্রার্থনায় লিপ্ত। আবার সকাল হলে ছড়িয়ে যায় পাতাগুলি।
নিয়মিত পরিচর্যা না করলে কিন্তু এ গাছ আপনার জন্য প্রেয়ার করবে না।

১০. স্ট্রিংস অফ পার্লস (String of pearls):-

ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে চান… নিয়ে আসুন
স্ট্রিংস অফ পার্লস। এ মুক্তো সাদা নয় সবুজ ও গোল নয় ক্ষাণিকটা চ্যাপ্টা। কিন্তু যেন এক্কেবারে সবুজ মুক্তোর মালা।
গ্রিল বা ঝুলন্ত টবে দারুণ লাগে গাছটিকে।

তাই আর দেরি না করে এবারে নিজের ঘর সাজিয়ে ফেলুন গুচ্ছ ইনডোর প্ল্যান্টস দিয়ে।