নিজস্ব সংবাদদাতা: দিন দুয়েক আগে ভোট দিয়েছেন তিনি, বহু বছর বাদে ভোট দিয়ে ভোট দিতে পেরে প্রকাশ করেছেন উচ্ছ্বাসও। জানিয়েছেন, প্রথম বার ভোট দেওয়ার মতো অনুভূতি হচ্ছে।কিন্তু নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করা ছত্রধর মাহাতো ব্যক্তিগত জীবনে আদতে কতটা গণতান্ত্রিক? রাজনৈতিক ইতিহাস কিন্তু লালগড়ের এই নেতাকে দরাজ সার্টিফিকেট দিতে পারছে না।

জন্মসূত্রে আদিবাসী না হলেও আদিবাসী নেতা হিসেবেই ছত্রধর মাহাতোর পরিচিতি। তিনি ছিলেন জঙ্গলমহলের মাওবাদী সমর্থিত পুলিশ সন্ত্রাসবিরোধী জনসাধারণের কমিটির উদ্যোক্তা। দীর্ঘ কারাবাসের পর বাড়ি ফিরে ভোট দিয়েছেন তিনি। কিন্তু এ রাজ্যে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফা সমাপ্ত হতেই ফের গ্রেফতার হয়েছেন ছত্রধর মাহাতো। ভোট দেওয়ার পরের দিনই ন্যাশানাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (NIA) আধিকারিকরা তাঁর বাড়িতে গিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করেন। বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থিত নেতা ছত্রধর মাহাতোর রাজনৈতিক ইতিহাস ঠিক কতটা কলঙ্কিত? আসুন একবার ঝালিয়ে নেওয়া যাক সে ইতিহাস।

২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে শালবনী বিস্ফোরণ মামলায় নাম জড়িয়েছিল ছত্রধর মাহাতোর। তখনই প্রথম খবরের শিরোনামে উঠে আসেন তিনি। এরপর খুন থেকে শুরু করে বোমাবাজি,উঠতে থাকে একের পর এক গুরুতর অভিযোগ। ২০০৯ সালে লালগড়ে সিপিআইএম নেতার খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। ঝাড়গ্রামের বাঁশতলায় ভুবনেশ্বর-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেসে হামলার ঘটনাসহ মাওবাদী নেতা ছত্রধর মাহাতোর নামে রয়েছে প্রায় ২৮টি মামলা।

বহু মামলায় অভিযুক্ত মাওবাদী নেতা ছত্রধর মাহাতো এরপর যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে। রাজনীতির সুবাদে কিছু মামলা এড়িয়ে যেতে পারলেও এখনও পর্যন্ত বেশ কিছু মামলার তদন্ত চলেছে। সেই সূত্রেই নতুন করে গোয়েন্দাদের জালে জড়িয়েছেন তিনি। স্বয়ং তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশীর্বাদ পেয়েছেন যিনি, তিনি কি খুব বেশিদিন জেলের ঘানি টানবেন? কৌতূহলী মহলে উঠেছে প্রশ্ন। অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ গুলি কতটা যথাযথ, তাও প্রমাণ সাপেক্ষ বলেই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহলের। একসময় তাঁকে দলের রাজ্য সম্পাদকও ঘোষণা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিধানসভা নির্বাচনেও তিনি হন দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। শোনা যায়, জঙ্গলমহলের এই দাপুটে নেতাকে দলে টানার চেষ্টা করেছিল বিজেপিও। প্রথম দফা নির্বাচনের পর ছত্রধর মাহাতোর এই গ্রেফতারিকে কেন্দ্র করে এখন সরগরম হয়ে উঠেছে রাজ্য রাজনীতি।