টলিউডের 5 শ্রেষ্ঠ ফ্যাশন ধারী ঃ
টলিউড জগতের সঙ্গে যে জিনিসটা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে, তা হল স্টাইল, ফ্যাশন। গ্ল্যামারের দুনিয়ার অঙ্ক কষা হয় কার স্টাইল কোশেন্ট কত, সেই মাপে। যে স্টার আপডেটেড ফ্যাশন স্টেটমেন্ট সহজে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন, তাঁর চাহিদা ততই বেশি। সিনেমা বা সিরিয়ালের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা এই কথাটা নিয়মিত হাড়ে হাড়ে টের পান নিশ্চয়ই। আসলে রূপোলী পর্দায় মানুষ তা-ই দেখতে পছন্দ করে যা নিত্যদিনের ঝঞ্ঝাট পোহাতে গিয়ে নিজের জীবনে সে চেয়েও করে উঠতে পারে না। তাই পছন্দের মুখগুলো যখন ফিটফাট হয়ে সুন্দর সেজে পর্দায় আসেন, তাঁদের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায় কয়েক গুণ। টলিউড, বলিউড, হলিউড সব জায়গাতেই শুরুর থেকেই চলেছে এই ধারাই। টম ক্রুজ হোক বা শাহরুখ খান, মেরিলিন মনরো হন কিংবা সুচিত্রা সেন, এঁদের গ্ল্যামার আমাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে সবসময়, তার একটাই কারণ। যে কোনও পোশাক এঁরা ক্যারি করতে পারেন অসাধারণ ভাবে। সুচিত্রা সেন শাড়িতে যতটা মোহময়ী ছিলেন, প্যান্ট-শার্টেও ততটাই আবেদন ছিল তাঁর উপস্থিতিতে। এবং সবচাইতে বড় কথা এঁরা কেউই এমন পোশাক কখনও পরেননি যা এঁদের চেহারার সঙ্গে মেলে না, কিংবা দৃষ্টিকটু বলে দর্শকের মনে হয়। ড্রেসিং সেন্স ঠিকঠাক না থাকলে গ্ল্যামারের দুনিয়ায় বেশিদিন তিষ্ঠোনো যে মুশকিল, এই মানুষগুলো শুরু থেকেই বুঝে নিয়েছিলেন তা।
টলিউডের কথা বলতে হলে বলা যায় এই সময়েও এমন অনেক অভিনেত্রী এখানে কাজ করে চলেছেন যাঁদের ড্রেসিং সেন্স এককথায় অনবদ্য। নিজেকে কোন পোশাকে সবচাইতে ভালো লাগবে, স্বল্পবাসেও আভিজাত্য কীভাবে ধরে রাখা সম্ভব এই অভিনেত্রীরা খুব ভালো করেই জানেন। একটু তাহলে জেনে নেওয়া যাক এমন কয়েকজনের কথা-
• রাইমা সেন– একটু আগেই বলছিলাম বাংলা সিনেমার মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের স্টাইল কোশেন্টের কথা। তাঁর নাতনিও যে অভিনয়ের জগতে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন তা রাইমা সেনের কেরিয়ার গ্রাফই বলে দেয়। কিন্তু আরও একটা কারণে দর্শক তাঁকে মনে রাখে, তা হল রাইমার ড্রেসিং সেন্স। শাড়ি হোক বা জিন্স, লেহেঙ্গা হোক বা বিকিনি- বাঙালি এই অভিনেত্রী সমস্ত পোশাকই এমনভাবে বেছে নেন যে পোশাক তাঁর চেহারার সঙ্গে একশ ভাগ খাপ খেয়ে যাবে। ‘চোখের বালি’তে আশালতা নামের পুরনো দিনের বিত্তশালী পরিবারের গৃহবধূ হিসেবেও তাই তাঁকে যেমন মানিয়েছে, কিছুদিন আগে মুক্তি পাওয়া ‘দ্বিতীয় পুরুষ’ ছবির আধুনিকা সাংবাদিক হিসেবেও তাঁকে বেমানান মনে হয়নি তাঁর ড্রেসিং সেন্সের জন্যেই।
• পাওলি দাম- একই সঙ্গে জনপ্রিয় এবং বিতর্কিত এই অভিনেত্রীও কিন্তু পোশাক বেছে নেবার বেলায় ভীষণই খুঁতখুঁতে। সর্বোপরি কথা ইনি জানেন কোন চরিত্রে কেমন পোশাকে তাঁর আবেদন সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পাবে। ‘এলার চার অধ্যায়’এ যখন ইনি ব্রাহ্ম ধাঁচের শাড়ি প্লিত করে পরেছেন, দর্শক তা যেমন নিয়েছে সহজভাবে, বলিউডের ‘হেট স্টোরি’তে যখন পাওলি বেশ্যার এসকর্টের চরিত্রে স্বল্পবাস পরেছেন, মানিয়ে গিয়েছে তাও।
কোয়েল মল্লিক– অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিকের মেয়ে কোয়েল ছোটবেলা থেকেই আভিজাত্যের ঘেরাটোপে মানুষ। ফলে ফিল্মি দুনিয়ায় পা রাখলেও নিজের স্টাইল কীভাবে বানিয়ে নিতে আর ধরে রাখতে হয় এই অঙ্কের সমাধান করতে বেশি দেরি হয়নি তাঁর। ফলে ‘মিতিনমাসি’র মতন গোয়েন্দা হিসেবে যখন পর্দায় দেখা যায় তাঁকে, বেমানান লাগে না একটুও। আবার এই কোয়েলকেই ‘অরুন্ধতী’ বা ‘চাঁদের বাড়ি’র মতন সিনেমায় এথনিক জামাকাপড়েও মানিয়ে যায় চমৎকারভাবেই।
ঋতাভরি চক্রবর্তী- নামকরা পরিচালক শতরুপা সান্যালের মেয়ে ঋতাভরি চক্রবর্তীর শুরুটা হয়েছিল বাংলা সিরিয়াল দিয়ে। ডেইলি সোপে কাজ করবার প্রধান সুবিধা হল সেই সংস্কৃতির বেশিরভাগ দর্শক কি চায় তা নিয়ে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ধারণা খুব পাকাপোক্ত হয়ে যায়। ঋতাভরির ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘ব্রহ্মা জানেন গোপন কম্মটি’ ছবিতে ষ্টোরিলাইনের পাশাপাশি প্রশংসিত হয়েছে ঋতাভরির স্টাইল সেন্স।
জয়া এহসান- বাংলাদেশের এই অত্যন্ত ট্যালেন্টেড অভিনেত্রী জয়া এহসান গত কয়েকবছরে টলিউডে বহু উল্লেখযোগ্য প্রজেক্টে কাজ করেছেন। এই মুহূর্তে প্রথম সারির বাঙালি অভিনেত্রীদের মধ্যে এঁরও নাম করা হয়। সেই সঙ্গে আধুনিক প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই অভিনেত্রীর ড্রেসিং সেন্স। যে কোনও ধরনের পোশাক খুব স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে ক্যারি করার আশ্চর্য ক্ষমতা এঁর রয়েছে। চল্লিশের উপরে বয়স হলেও স্টাইল স্টেটমেন্টে যে কোনও সাম্প্রতিক কমবয়সী অভিনেত্রীদের থেকে কোনও অংশে কম যান না ইনি। ‘কণ্ঠ’, ‘বিজয়া’, ‘রাজকাহিনী’ এসমস্ত ছবিই তার প্রমাণ।
যে পাঁচজনের কথা বলা হল এইখানে, এঁরা ছাড়াও টলিউডে মিমি চক্রবর্তী, রুক্মিণী মৈত্র, কৌশানি, নুসরত জাহান, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, মধুমিতা সরকার, ইত্যাদি অনেক অভিনেত্রী রয়েছেন যাঁদের ড্রেসিং সেন্স এককথায় নজরকাড়া। বাঙালি মানুষজনকে স্টাইলের সঙ্গে এঁরাই পরিচয় করিয়ে আসছেন নিয়মিত। কাকে ছেড়ে যে কাকে দেখব, মাঝে মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়াই ভীষণ কঠিন হয়ে দাঁড়ায় তাই!