২১-এর বিধানসভা ভোটই এখন বিজেপির পাখির চোখ। সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার উত্তরবঙ্গ সফর, অমিত শাহর ঘনঘন ভার্চুয়াল সভা সেসবেরই ইঙ্গিত বহন করে। বাংলার নির্বাচনকে সামনে রেখে বাঙালি সাজছেন মোদীও। ষষ্ঠীর দিন ধুতি, পাঞ্জাবিতে বাঙালির উদ্দেশ্যে ভার্চুয়াল ভাষণ দিতে দেখা যাবে তাঁকে।

তৃণমূলও তৈরি। মোদীর স্ট্র্যাটেজিতে বিজেপি বধ করতে প্রশান্ত কিশোরকে দায়িত্ব দিয়েছে তৃণমূল। লোকসভা ভোটের পর বিজেপির গাঙে যেমন জোয়ার এসেছিল, প্রশান্ত কিশোর তার কিছুটা হলেও রুখে দিতে পেরেছেন। এখন খেলা হচ্ছে সমানে সমানে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একুশের ফাইনাল ম্যাচের আগে কিছুটা হলেও গেরুয়া শিবিরের পাল্লা ভারী। এখানে আমরা আলোচনা করলাম সেই ৫ ইস্যুতে, যাতে তৃণমূলকে চাপে রাখছে বিজেপি।

Corruption In India

১। দূর্নীতি – ওয়াকিবহাল মহল বলছে, ঘাসফুল কাটা পড়লে এই ইস্যুতেই যাবে। সারদা, নারদা, রোজভ্যালি, ত্রিফলা কেলেঙ্কারি থেকে শুরু। তারপর আম্পানের ত্রাণ এমনকী রেশনের চাল চুরিরও অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে। হালের পুরোহিত ভাতার তালিকাতেও সাহা, ঘোষ, মণ্ডলদের নাম ওঠার অভিযোগ আসছে। সরকারি কাজ পেতে হলে কাটমানি দিতে হয় বলেও অভিযোগ করেন অনেকে। ‘তৃণমূলের অনেক রাঘব বোয়ালরা দুর্ণীতিতে জড়িয়ে আছে’, এ কথা সংবাদমাধ্যমে স্বীকার করেছেন খোদ রাজ্যের বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপিও এই অস্ত্রে লাগাতার প্রচার চালাচ্ছে।

qjcn8rgdjffgi

২। শিল্প নেই – বাম আমলে একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়েছে। আন্দোলন করে চটকলগুলিতে তালা ঝুলিয়েছে সিটু। ‘ভারতের শেফিল্ড’ খ্যাত হাওড়া আজ খাঁ খাঁ। লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একের পর এক ভাঙাচোরা কারখানার শেড। বামেদের আন্দোলনের জেরে অকালমৃত্যু ঘটেছে তাদের। তৃণমূল জমানাতেও এর কোনও পরিবর্তন হয়নি। একটাও বন্ধ কারখানা খোলেনি। বরং সিঙ্গুর আন্দোলনের জেরে মমতার গায়ে লেগেছে শিল্প বিরোধী তকমা। সমালোচকরা বলেন, প্রতি বছর ঘটা করে বাণিজ্য সম্মেলন হয়, কিন্তু একটা কারখানারও উদ্বোধন করতে পারেননি মমতা।

2018 11 02 123038293 A bottom up approach is essential to prevent jobless growth in India

৩। বেকারত্ব – শিল্প না থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই বেকারত্ব বাড়ছে। ৭ বছর ধরে উচ্চমাধ্যমিক স্তরে শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ। যে কটা সরকারি চাকরির পদ খালি হয়, অভিযোগ, তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের তাঁবেদারি না করলে সেসব মেলে না। ব্যবসার অনুকূল পরিবেশ নেই। এক্ষেত্রে শাসক দলের বিরুদ্ধে ‘তোলা’ চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে বারবার। ফলে বড় কোনও প্রতিষ্ঠান বাংলাতে তাঁদের দপ্তর খোলে না। নিয়োগ যা হয় বেঙ্গালুরু, মুম্বই, নয়ডাতে। ফলে তরুণ-তরুণীদের একটা বড় অংশ বাংলা ছেড়ে ছুটে যাচ্ছে ভিন রাজ্যে।

bjp1

৪। রাজনৈতিক সন্ত্রাস – রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, বাম জমানা এবং মমতার আমল একই মুদ্রার দুটো পিঠ। সিপিএম আমলে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে চলেছিল সন্ত্রাসের বাতাবরন। মমতার জমানাতেও সেই চিত্রটা খুব একটা বদলায়নি। অভিযোগ, বাম আমলে প্রায় ৫৫ হাজার বিরোধীকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছিল। তৃণমূল আমলেও একই ছবি। গেরুয়া শিবিরের দাবি, শুধু বিজেপি করছে বলেই পুরুলিয়ার ত্রিলোচন মাহাতো থেকে হেমতাবাদের বিজেপি বিধায়ক দেবেন্দ্রনাথ রায়কে মেরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। গুলি খেয়ে খুন হতে হয়েছে মনীশ শুক্লকে। আইন-শৃঙ্খলার অবনতির অভিযোগ উঠেছে বারবার। ফলে বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার হুমকিও একাধিকবার দিচ্ছে দিল্লীর বিজেপি নেতারা।

MamataBanerjee 2 1

৫। হিন্দু বিরোধী এবং সংখ্যালঘু তোষণ – সংখ্যালঘু তোষণের অভিযোগ তো ছিলই। এরপর ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেওয়ায় গাড়ি থামিয়ে মমতার তেড়ে যাওয়ার ছবি দেখেছে গোটা ভারত। ফলে হিন্দু বিরোধী সরকার বলে দেগে দেওয়া সহজ হয়েছে বিজেপির। লোকসভা ভোটের পর ‘যে গরু দুধ দেয় তার লাথি সহ্য করতে হয়’ বলে এই অভিযোগেই ইন্ধন দিয়েছেন মমতা স্বয়ং। রাম মন্দিরের ভূমি পুজোর দিন লকডাউন রাখা এবং ইদে প্রত্যাহার করায় সেই অভিযোগই নতুন করে তোলার সুযোগ পেয়েছে বিজেপি।