বাঙালি বরাবরই ঘুরতে যেতে খুব ভালোবাসে। যখনই কোনো ছুটির সময় আসে বা যে কোনো সময় ২ দিনের বেশি ছুটি পেলেই বাঙালি বেরিয়ে পড়ে ঘুরতে নানা পর্যটন কেন্দ্রে।
পৃথিবীর সব নাম করা ভ্রমণ জায়গায় যদি একদল বাঙালি দেখতে পাওয়া যায়, তবে খুব একটা অবাক হওয়ার কিছু নেই।
বিদেশে ঘুরতেও বহু বাঙালি এমন আছে যারা মাছ, ভাত খোঁজে। “ভেতো বাঙালি” কি আর সাথে বলে?
তবে করোনা পরিস্থিতির পর বাঙালির এই ঘুরতে যাওয়ার রেওয়াজ বন্ধ ছিল বেশ কয়েকমাস। পর্যটন কেন্দ্র গুলো বন্ধ ছিল এই কারণেই।
তবে আনলক পক্রিয়া শুরু হওয়ার পর বেশ কিছু পর্যটন কেন্দ্র খুলে যায় এবং অধিকাংশ বাঙালি ঘুরতে বেড়িয়ে পরে তাজা হাওয়ার স্বাদ নিতে।
তবে এই বছর ২০২১ সালে এখন লকডাউন থাকলেও শীঘ্রই সব একে একে খুলে যাবে। ভ্যাকসিনেশন পর্ব শুরু হওয়ার পর সুস্থতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সংক্রমণ অনেক কমে আসছে।
তাই এই পরিস্থিতিতে যারা ঘুরতে যেতে ভালোবাসেন তাদের জন্য নিয়ে এসেছি ১০ টি সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র; এবং এগুলো সবই পশ্চিমবঙ্গের মধ্যেই।
মহামারী কাটলেও বাইরে ঘুরতে যাওয়ার এই মুহূর্তেই ঠিক হবেনা। তাই নিজের রাজ্যে যে পর্যটন কেন্দ্র গুলো আছে, সেগুলোই পড়ে নেওয়া যাক একনজরে।
১) দার্জিলিঙের পর্যটন কেন্দ্র:-
আমার মতে সবার উপরে যার স্থান, তা হলো দার্জিলিং। পশ্চিমবঙ্গের সব পর্যটন কেন্দ্র গুলোর মধ্যে দার্জিলিং অন্যতম।
এখানকার বিশেষত্ব হলো পাহাড়ি এলাকার মনোরম পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এছাড়াও চা বাগান এখানকার অন্যতম নিদর্শন।
যার জন্য প্রতি বছর দেশ বিদেশ থেকে নানা পর্যটকের ভিড় হয়।
দার্জিলিং -এর গেলে যে যে জায়গায় ঘুরতে ভুলবেন না—
দার্জিলিং ম্যাল, দার্জিলিং জু, রক গার্ডেন, ইসফেগোডা, বাতাসীয়া লু, রু বুরে, মহাকাল টেম্পল, টাইগার হিল, ঘুম স্টেশন, সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্ক ইত্যাদি।
দার্জিলিঙের আরেকটি আকর্ষণীয় বিষয় হলো টয়ট্রেন। আর দার্জিলিঙে গেলে ওখানের স্পেশাল চা পান করতে ভুলবেন না।
২) দীঘা :-
বাঙালির ঘোরার তিন জায়গা “দী-পু-দা”; অর্থাৎ দীঘা, পুরী, দার্জিলিং। পাহাড় ও সমুদ্রের এক মিশ্রণে দীপা বাঙালির সবচেয়ে প্রিয় ও সবথেকে বেশি ভ্রমণ করার জায়গার তালিকায় অন্যতম।
পূর্ব মেদিনীপুরের দীঘা শহরে, প্রতিবছর পর্যটন কেন্দ্রে গুলোয় দেখা যায়। হোটেল ভর্তি হয়ে থাকে এবং চারিদিকে লোক আর লোক।
সমুদ্রের পরিবেশ উপভোগ করার ছাড়া দীঘায় বেশ কিছু পর্যটন কেন্দ্র আছে, যেগুলো খুব সুন্দর ও তাদের পরিবেশের জন্য সেগুলো বিখ্যাত।
সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, ওল্ড দীঘা, নিউ দীঘা, উদয়-নারায়ণ পুর, মন্দারমণি, চম্পা নদীর মোহনা ইত্যাদি।
দীঘায় গেলে ওখানকার স্পেশাল রকমারি মাছের স্বাদ নিতে ভুলবেন না।
৩) মুর্শিদাবাদ:-
মুর্শিদাবাদ আমাদের পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে ঐতিহাসিক জেলার মধ্যে অন্যতম। স্বাধীনতার বহু আগে, মোঘল আমলের সময় মুর্শিদাবাদ ছিলো পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী আর রাজা, মহারাজাদের থাকার জায়গা।
তাই মুর্শিদাবাদে মোঘল রাজের বহু ঐতিহাসিক জায়গা দেখার জায়গা আছে এবং প্রতিবছর এই ঐতিহাসিক তাৎপর্যের জন্য বহু মানুষ দেশ বিদেশ থেকে বেড়াতে আসে।
এখানে কিছু পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
ইমামবারা, হাজারদুয়ারি প্রাসাদ, নবাব সিরাজুল সিরাজুদৌল্লা ও তার স্ত্রী-র সমাধি স্থান, ঘরি মিনার, কাঠগোলা বাগান বাড়ি, চক মসজিদ ইত্যাদি।
৪) ডুয়ার্স:-
এবার চলে যাবো উত্তরে আরও একবার। দার্জিলিং ছাড়াও উত্তরে ভ্রমণ স্থান অনেক আছে; তাদের মধ্যে অন্যতম হলো ডুয়ার্স।
পাহাড়, সমুদ্র, ঐতিহাসিক স্থানের পর এবার পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গল মহলে একবার না ঘুরে আসলে কি করে চলে!
ডুয়ার্সের সবথেকে বড়ো আকর্ষণ হলো পাহাড় ও জঙ্গল। এই এলাকার উল্লেখিত পর্যটন কেন্দ্র গুলি হলো গোরুমারা অভয়ারণ্য ও জলদাপাড়া অভয়ারণ্য।
জঙ্গলের ভেতর হাতির পিঠে চড়ে ভ্রমণ, বাঘের অবস্থান, এক শিং যুক্ত গন্ডার, ইত্যাদি দেখার সুযোগ আপনি পাবেন।
বক্সা টাইগার রিজার্ভ, চিলাপাতা প
ফরেস্ট ইত্যাদি পার্ক ঘুলি বণ্য জীব-জন্তু ও জঙ্গল সাফারির জন্য উল্লেখিত।
সামসিন, লালিগুরাস, ঝালং, বিন্দু, বক্সা, জয়ন্তী, লেপচাখা, ইত্যাদি জায়গা হলো ডুয়ার্সের পাহাড় ও মনোরম পরিবেশ দেখার জন্য উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্র।
৫) শান্তিনিকেতন:-
পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বোলপুর অঞ্চলে অবস্থিত এই শান্তিনিকেতন একটি আশ্রম উপর শিক্ষাকেন্দ্র।
১৮৬৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এই শিক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে ১৯০১ সালে ব্রহ্ম বিদ্যালয় স্থাপন করে যা এখন বিশ্ব ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার জীবনের অনেকটা সময় শান্তিনিকেতনে কাটিয়েছিলেন। এখানে দর্শনীয় স্থান গুলির মধ্যে অন্যতম হলো—
মিউজিয়াম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি, ছাতিম তলা, উপাসনা মন্দির, তালধ্বজ, দেহলি, নতুন বাড়ি, তিন পাহাড়, আম্রকুঞ্জ ইত্যাদি।
এখানকার পৌষ মেলা ও বসন্ত উৎসব সবচেয়ে বিখ্যাত। প্রতিবছর বহু পর্যটক এই সময় শান্তিনিকেতনের মনোরম পরিবেশে আসেন।