রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চের প্রত্যেকটা পরিবর্তন আপাতদৃষ্টিতে অকস্মাৎ মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তা নয়। দাবার মতোন মেপে-বুঝে-সামলে খেলতে হয় প্রত্যেকটা দানকিস্তিমাতের দানটা নিজের নামে লিখতে। বর্তমান বঙ্গরাজনীতিতে বিজেপির উত্থান তথা অভূতপূর্ব সাফল্য রাজনৈতিক মহলে তুলেছে ব্যাপক আলোড়ন। ২০১৪র লোকসভা নির্বাচনের ২টি আসন থেকে ২০১৯এর লোকসভা নির্বাচনের ১৮টি আসনবিস্তীর্ণ একচেটিয়া সবুজের মাঝে পদ্মের এই আকস্মিক প্রাচুর্যের জন্য অনুঘটকের কাজ করেছে গেরুয়া শিবিরের বহু আঙ্গিক পলিটিক্যাল স্ট্রাটেজি।
ভিত এত শক্ত থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে সরকার গঠনের জন্য বিজেপি সামনে এখনো রয়েছে একাধিক চ্যালেঞ্জ যে চ্যালেঞ্জগুলো আগামী দিনে নির্ধারণ করবে 2021 এ বাংলার মসনদে কে বসবে।
দেখে নেওয়া যাক সে চ্যালেঞ্জগুলো ঠিক কি কিি-
কে হবে মুখ্যমন্ত্রী?
পশ্চিমবঙ্গে সরকার গঠনের দৌড়ে গেরুয়া শিবিরে অগ্রগণ্য তা অস্বীকার করার ক্ষমতা চরম বিরোধীদের নেই। কিন্তু সমস্যাটা হল বিজেপির তরফ থেকে সরকার গঠনের পরবর্তী কালে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কে সামলাবে গদি, সেই মুখ এখনো পরিষ্কার নয়। মুকুল রায়, দিলীপ ঘোষ, শমীক ভট্টাচার্য রন্তিদেব সেনগুপ্ত জাতীয় নানা নাম নানা সময়ে জনগণের মনের সম্ভাব্য তালিকায় উঠে এসেছে। বিধানসভা নির্বাচন জেতার জন্য সবথেকে আগে প্রয়োজন মুখ্যমন্ত্রী পদ প্রার্থীর নাম সুনিশ্চিত করা।প্রাথমিকভাবে এটাই বিজেপির কাছে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জনগণের এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, ক্ষমতায় এলে মুখ্যমন্ত্রী কে?

মুসলিম বিরোধী তকমা-
পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু 30 শতাংশ ভোটের প্রায় সবটাই বিজেপির বিরুদ্ধে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। বিরোধী শিবিরের রাজনৈতিক প্রচার কার্যে বিজেপি মুসলিম বিরোধী একটি দলে পর্যবসিত হয়েছে। এছাড়াও NRC,CAA জড়িত আন্দোলনকে ঘিরে সংখ্যালঘু সমাজের মধ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ সঞ্চিত হয়েছে তা ভোটের ফলাফলে প্রকাশ পাওয়া সম্ভাবনা প্রবল। এই বড় অংকের সংখ্যালঘু ভোট নিজেদের স্বপক্ষে আনা বিজেপির সামনে এখন সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ।

দলের অন্দরে গোষ্ঠীদ্বন্দ-
শেষ কিছুদিন ধরে বিজেপির অন্দরমহলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। দলের পুরোনো আর নতুন কর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সর্বসমক্ষে চলে আসে রাহুল সিনহার বিষ্ফোরক মন্তব্যে যখন তার পদে তার পরিবর্তে তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ অনুপম হাজরা কে নিয়োগ করা হয়। বারুইপুরে বিজেপির দক্ষিণ ২৪ পরগনা পূর্ব জেলার বৈঠকে দলের নতুন কেন্দ্রীয় সম্পাদক অরবিন্দ মেনন এবং অনুপম হাজরার উপস্থিতিতে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে হাতাহাতি ও তার জেরে ভাঙচুর হয়। কানাঘুষো শোনা যায় যে দিলীপ ঘোষ ও মুকুল রায়-এর মধ্যেও এই ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে অনেকবার,কিন্তু এই বিষয়টি দুজনেই অস্বীকার করেছেন।এই গোষ্ঠীদ্বন্দ পেড়িয়ে ঐকবদ্ধ ভাবে ভোটের ময়দানে নামা এখন বিজেপির কাছে বড়ো চ্যালেঞ্জ।

বাঙালি বিরোধী তকমাঃ
মুসলিম বিরোধী তকমার সাথে সাম্প্রতিক দিনে বিজেপির ভাগে জুটেছে বাঙালী বিরোধী তকমা। বিজেপি অবাঙালী-দের দল, বারবার এই তোপ দেগেছে বিরোধী দল। বিজেপির অনেক কার্যক্রম তাই বাঙালিদের স্বার্থ বিরোধী হিসেবে প্রতিপন্ন করতে উঠেপড়ে লেগেছে বিরোধীরা। যার ফলে বাঙালি সমাজের একাংশে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এই সমস্যার সমাধান এখন বিজেপির কাছে অনেক বড়ো চ্যালেঞ্জ।

দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি-
সাম্প্রতিক দিনে শিক্ষাবিল,কৃষিবিল ইত্যাদি কে কেন্দ্র করে বারবার পথে নেমেছে বিরোধীরা। জনমানসে যা ফেলেছে বিরূপ প্রভাব। এছাড়াও লকডাউন পরবর্তীকালে দেশের অর্থনীতি নিম্নমুখী, কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ, আকাশ ছুঁয়েছে মূল্যবৃদ্ধি। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ যে বিধানসভা ভোটেও প্রভাব ফেলবে সেটাও স্বাভাবিক। এই পরিস্থিতি সামলে ওঠাই এখন বড়ো চ্যালেঞ্জ।

এই চ্যালেঞ্জ গুলো কাটিয়ে উঠতে পারলেই বঙ্গ বিজেপির লক্ষ্য সফল হবে, “উনিশে হাফ,একুশে সাফ”।