নিজস্ব সংবাদদাতা: তিনি চেয়েছিলেন অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের হাতে ছেড়ে দেওয়া হোক বাংলার ৩০টি মতুয়া প্রভাবিত বিধানসভা আসন। যেখানে বিজেপির প্রার্থী হিসাবেই লড়বেন মতুয়া মহাসঙ্ঘের মনোনীত সঙ্ঘ সদস্যরা। কিন্তু সেই আবেদন গ্রাহ্যই করেনি গেরুয়া শিবির। ৩০টি আসন তো দূরের কথা ৩টি আসনের প্রার্থী নির্বাচনেও বিজেপি অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের আবদারকে পাত্তা দেয়নি। আর এর ফলেই বিজেপির ওপর প্রবল ক্ষুব্ধ রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর। এখন তাঁর মনে হচ্ছে বিজেপি তার নিজের ফায়দা তুলতেই মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক ও ঠাকুর পরিবারকে ব্যবহার করে চলেছে।

যার ফলে এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, বাংলায় আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে এই মতুয়াদের ভোট কোন পক্ষে যাবে। নির্বাচনের প্রচারে এসে অমিত শাহ কয়েক সপ্তাহ আগে মতুয়া পরিবারে মধ্যাহ্নভোজন সেরেছিলেন। মতুয়াদের মন জয় করতেই শাহের এমন কার্যকলাপ ছিল বলে মত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের। তবে এখন কি শাহের সেইসব প্রচেষ্টাই জলে গেল? ইতিমধ্যেই সাংবাদিক বৈঠক ডেকে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন তিনি। আর তার জেরেই এখন মতুয়াভূম বনগাঁ, রানাঘাট-সহ রাজ্যের প্রায় ১০-১২টি মহকুমা এলাকায় থাকা মতুয়া ভোট নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছে বিজেপি।

প্রসঙ্গত, তৃণমূলের জন্মলগ্নের পর থেকেই মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক আর তৃণমূল কার্যত একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে ওঠে। সেই সূত্রেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মতুয়া সমাজের যোগাযোগ। বড়মা বীণাপানি দেবী খুবই স্নেহ করতেন মমতাকে। তৃণমূল নেত্রীও বড়মার শেষদিন অবধি তাঁর পাশে থেকেছেন। তাঁর ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর তৃণমূলের বিধায়ক ও রাজ্যের মন্ত্রীও হয়েছিলেন। কিন্তু নিজের দোষে তিনি মন্ত্রীত্ব হারান এবং দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। তাঁর ছোট ছেলে শান্তনু ঠাকুরও বিজেপির প্রার্থী হয়ে ২০১৯ সালে বনগাঁ লোকসভা থেকে জিতে সাংসদ হন। যদিও শান্তনুর সঙ্গেও এইমুহূর্তে বিজেপির রসায়ন খুব একটা ভাল নয়।

এদিকে, নাগরিকত্ব প্রদান ঘিরে বিজেপির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত না হওয়ায় মতুয়া সমাজ যে বিজেপির দিক থেকে মুখ ঘোরাতে শুরু করে দিয়েছিল সেটা গত বছরের শেষ দিক থেকেই বেশ বোঝা যাচ্ছিল। এবার মঞ্জুলকৃষ্ণ সরাসরি কাঠগড়ায় তুললেন কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বকেই। রবিবার দুপুরে এক সাংবাদিক বৈঠক ডেকে মঞ্জুল জানান, “বাংলার মতুয়ারা আশা করেছিলেন এ বারের বিধানসভা ভোটে রাজনৈতিক পদপ্রার্থী হিসাবে তাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। কিন্তু প্রার্থীপদ না পেয়ে তাঁরা খুবই আশাহত। সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। এরপরে আর মতুয়াদের ভোট নিয়ে কোনও দায়িত্ব নেবে না মতুয়া মহাসঙ্ঘ। তাঁরা এবার বিজেপিকে ভোট দেবে কী দেবে না সেটা মতুয়ারা নিজেরাই ঠিক করে নিক। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ এখানে আর কোনও হস্তক্ষেপ করবে না, কোনও অনুরোধও করবে না।”