নিজস্ব সংবাদদাতা: একটা সর্বভারতীয় দল, যারা কিনা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মত শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে সরিয়ে বাংলা দখলের কথা ভাবছে, তাদের ভোটের আগে এমন হাস্যকর পরিস্থিতি কেন? রাজ্যে ভোটের বাজারে বিজেপিকে এভাবে লজ্জায় পড়তে হবে, তা বোধহয় স্বপ্নেও ভাবেন নি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। গতকাল বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলন করে ১৪৮ আসনে বিজেপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। তবে সেখানে তিনি চৌরঙ্গী আসনের প্রার্থী হিসাবে প্রয়াত কংগ্রেস নেতা সোমেন মিত্রের স্ত্রী শিখা মিত্রের নাম ঘোষণা করলেও বিজেপির মুখ পুড়িয়ে ভোটে দাঁড়াচ্ছেন না বলে কালকেই জানিয়ে দিয়েছেন সোমেন-জায়া। এমনকী বিজেপিতে এখনও যোগও দেননি বলেও সাফ জানিয়েছেন শিখা।

না এই একটাই ঘটনা নয়। মুখ পুড়েছে আরও এক কেন্দ্রে। প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পরে বিজেপি নেতৃত্বের অস্বস্তি বাড়িয়েছেন কাশীপুর-বেলগাছিয়ার প্রার্থী হিসাবে নাম থাকা তরুণ সাহাও। স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বিজেপির কাছে প্রার্থী হওয়ার কোনও আর্জিই তিনি জানাননি। গতকালই তিনি বলেছেন, “আমি তো এখনও তৃণমূল ত্যাগই করিনি। কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থীর হয়ে আজকেও প্রচার সেরে এসেছি। নিজের দলে আমি সুখেই আছি। তাই বিজেপির প্রার্থী হওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।” উল্লেখ্য, তরুণ সাহা হলেন কাশীপুর-বেলগাছিয়া কেন্দ্রের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক মালা সাহার স্বামী। তবে এই দুই ঘোষিত প্রার্থীর এমন উল্টোসুরের পরেই প্রশ্ন উঠেছে, কেন তাঁদের সম্মতি না নিয়েই তালিকায় নাম রেখে নিজেদের মুখ পোড়ালেন বিজেপির শীর্ষ নেতারা?

বিষয়টি যে যথেষ্ট বিড়ম্বনার এবং অস্বস্তির তা স্বীকার করে নিয়েছেন প্রাক্তন বিজেপি রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা। আর দলের এমন অস্বস্তির জন্য নাম না করলেও ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন, ওই দু’জনকে দলীয় প্রার্থী করার জন্য কথাবার্তা চূড়ান্ত করার দায়িত্ব যে নেতার ওপরে ছিল, তিনি সঠিকভাবে দলকে শিখা ও তরুণের অবস্থান জানাননি। কে ওই নেতা? রাজ্য বিজেপির অন্দরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, শিখা মিত্র ও তরুণ সাহার সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্বে ছিলেন সদ্য দলত্যাগী শুভেন্দু অধিকারী।

একদিকে যেমন তিনি শিখা ও রোহনের সঙ্গে দেখা করে দু’জনকেই প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তেমনই জানা গিয়েছে কাশীপুর-বেলগাছিয়ার বিদায়ী তৃণমূল বিধায়ক মালা সাহার কথা বিশ্বাস করেই দু’জনের নাম প্রার্থী তালিকায় রাখা হয়েছিল। কিন্তু তালিকা ঘোষণার পরেই দু’জন যেভাবে বেঁকে বসেছেন, তাতে যথেষ্টই মুখ পুড়েছে বিজেপি নেতৃত্বের। আর দলকে এভাবে অস্বস্তিতে ফেলার বিষয়টি নিয়ে যে তদন্ত হবে, তাও জানিয়ে দিয়েছেন রাহুল সিনহা। সবমিলিয়ে ভোটের আগে বেজায় অস্বস্তিতে রাজ্য বিজেপি আর নিজের নতুন দলেই চরম সঙ্কটে শুভেন্দু অধিকারী।